কার্তিক মাস হিন্দু ধর্মে সবচেয়ে পুণ্য ও ফলদায়ক মাস হিসেবে বিবেচিত হয়। এই মাস ভগবান বিষ্ণু ও শিবের প্রিয় এবং এতে বিশেষ পূজা, ব্রত, দীপদান ও দানের গুরুত্ব রয়েছে। ২০২৫ সালে কার্তিক মাস ৮ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত থাকবে, যেখানে দীপাবলি, গোবর্ধন পূজা এবং ভাইফোঁটার মতো প্রধান উৎসবগুলি পালিত হবে।
Kartik Maas: এই বছর কার্তিক মাস ৮ অক্টোবর, বুধবার থেকে শুরু হয়ে ৫ নভেম্বর, বুধবার পর্যন্ত থাকবে। ভারতে এই মাস হিন্দু ধর্মে সবচেয়ে পবিত্র বলে গণ্য করা হয়। মাসজুড়ে ভগবান বিষ্ণু ও শিবের পূজা, তুলসী আরাধনা, দীপদান এবং ব্রতের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কার্তিক মাস চলাকালীন দীপাবলি, গোবর্ধন পূজা এবং ভাইফোঁটার মতো প্রধান উৎসবগুলিও পালিত হয়। এই মাসে ধর্মীয় নিয়ম ও পুণ্য কাজ পালন করলে জীবনে সুখ, সমৃদ্ধি এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি ঘটে।
কার্তিক মাসের ধর্মীয় গুরুত্ব
কার্তিক মাসকে দামোদর মাস বা পুণ্য মাসও বলা হয়। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, ভগবান বিষ্ণু স্বয়ং বলেছেন যে এই মাস তাঁর অত্যন্ত প্রিয়। এই মাসে করা ব্রত, পূজা এবং দান দ্বারা সমস্ত পাপ নষ্ট হয় এবং মোক্ষ লাভ হয়। তুলসী পূজার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, কারণ তুলসীকে ভগবান বিষ্ণুর প্রিয় এবং দেবী লক্ষ্মীর রূপ বলে মনে করা হয়। প্রতিদিন তুলসীর কাছে প্রদীপ জ্বালালে এবং তাঁর পূজা করলে ঘরে সুখ, সমৃদ্ধি ও শান্তি আসে।
এই মাসে স্নান ও দীপদানেরও বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। গঙ্গার মতো পবিত্র নদীতে স্নান করা বা ঘরে প্রদীপ জ্বালানো অক্ষয় পুণ্য লাভের পথ বলে মনে করা হয়। এছাড়াও, কার্তিক মাসে পালিত উৎসব যেমন দীপাবলি, গোবর্ধন পূজা এবং ভাইফোঁটা এটিকে আরও বিশেষ করে তোলে। এই মাসে ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক কার্যকলাপের আয়োজন প্রতিটি হিন্দু পরিবার ও মন্দিরে অত্যন্ত উৎসাহের সাথে হয়।
কার্তিক মাসের পূজা পদ্ধতি
কার্তিক মাসে কিছু বিশেষ নিয়ম ও পূজা পদ্ধতি পালন অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে মনে করা হয়।
- প্রাতঃস্নান: কার্তিক মাসে প্রতিদিন সূর্যোদয়ের আগে স্নান করা উচিত, যাকে কার্তিক স্নানও বলা হয়। যদি পবিত্র নদীতে স্নান করা সম্ভব না হয়, তবে বাড়িতে স্নানের জলে গঙ্গা জল মিশিয়ে স্নান করা উপকারী হয়।
- ভগবান বিষ্ণুর পূজা: স্নানের পর পরিষ্কার বস্ত্র পরিধান করে ভগবান বিষ্ণু বা শ্রীকৃষ্ণের পূজা করা উচিত। পূজায় তুলসী পাতা, হলুদ ফুল, চন্দন এবং নৈবেদ্য অর্পণ করা শুভ বলে মনে করা হয়। এই সময় ‘দামোদর অষ্টকম’ পাঠ এবং শ্রী হরি মন্ত্র জপ করা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়।
- তুলসীর আরাধনা: প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় তুলসী গাছের পূজা করা উচিত এবং সন্ধ্যায় তার কাছে প্রদীপ জ্বালানো উচিত। তুলসীর পরিক্রমা করলে ঘরে সুখ-শান্তি বজায় থাকে।
- দীপদান: বাড়ির উঠোনে, তুলসীর কাছে বা অশ্বত্থ গাছের নিচে প্রদীপ জ্বালানো শুভ বলে মনে করা হয়। মন্দির এবং পবিত্র নদীতে দীপদানের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
কার্তিক মাসের নিয়ম
- ব্রহ্মচর্য পালন: মাসজুড়ে ব্রহ্মচর্য পালন করা উচিত।
- সাত্ত্বিক আহার: এই মাসে সাত্ত্বিক খাবার গ্রহণ করা উচিত। রসুন, পেঁয়াজ, আমিষ এবং তামসিক খাবার থেকে বিরত থাকা উচিত।
- দান-পুণ্য: এই মাসে অন্ন, বস্ত্র এবং গরু দান করা বিশেষভাবে উপকারী হয়।
- ভূমিতে শয়ন: কিছু লোক এই মাসে মাটিতে ঘুমান, যা আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য ভালো বলে মনে করা হয়।
কার্তিক মাসকে ধর্ম, অর্থ, কাম এবং মোক্ষ – এই চারটি পুরুষার্থ প্রদানকারী মাস হিসেবে গণ্য করা হয়। শ্রদ্ধাপূর্বক এর নিয়ম ও ব্রত পালন করলে জীবনে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে।
কার্তিক মাসে উৎসবের সমাবেশ
কার্তিক মাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ উৎসব আসে, যা এটিকে আরও বিশেষ করে তোলে। দীপাবলি এই মাসের সবচেয়ে প্রধান এবং জাঁকজমকের সাথে পালিত উৎসব। এর পাশাপাশি গোবর্ধন পূজা, ভাইফোঁটা, দেবউত্থান একাদশী এবং দেব দীপাবলির মতো উৎসবগুলিও এই মাসেই আসে। এই সমস্ত উৎসব ধর্মীয়, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
আধুনিক সমাজে কার্তিক মাসের গুরুত্ব
আজকের দিনে যেখানে মানুষ তাদের ব্যস্ত জীবনে প্রায়শই আধ্যাত্মিক কার্যকলাপ থেকে দূরে থাকে, কার্তিক মাস তাদের পুণ্য ও ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে মানসিক শান্তি এবং নৈতিকতার দিকে আকর্ষণ করে। এই মাসে করা ব্রত, পূজা এবং দানের প্রভাব জীবনে সুখ-সমৃদ্ধি নিয়ে আসে।
কার্তিক মাস কেবল ধর্মীয় গুরুত্বের মাস নয়, বরং এটি সমাজে আধ্যাত্মিক সচেতনতা এবং নৈতিক মূল্যবোধও প্রতিষ্ঠা করে। বাবা-মা তাদের সন্তানদের এই মাসের গুরুত্ব এবং নিয়মাবলী সম্পর্কে জানান, এবং মন্দিরগুলিতে ধর্মীয় শিক্ষার আয়োজন করা হয়।
কার্তিক মাস ২০২৫-এর তারিখসমূহ
২০২৫ সালে কার্তিক মাস ৮ অক্টোবর, বুধবার থেকে শুরু হয়ে ৫ নভেম্বর, বুধবার পর্যন্ত থাকবে। এর আরম্ভ আশ্বিন মাসের পূর্ণিমার পরের দিন, অর্থাৎ প্রতিপদ তিথি থেকে হয়। এই সময় ভক্তরা পবিত্র স্নান, পূজা এবং ব্রত পালন করেন এবং তুলসী পূজা, দীপদান ও ভগবান বিষ্ণুর আরাধনা করেন।