করবা চৌথ ২০২৫: স্বামীর দীর্ঘায়ু কামনায় নির্জলা ব্রত, জেনে নিন চন্দ্রোদয় ও পারণের সঠিক সময় ও মন্ত্র

করবা চৌথ ২০২৫: স্বামীর দীর্ঘায়ু কামনায় নির্জলা ব্রত, জেনে নিন চন্দ্রোদয় ও পারণের সঠিক সময় ও মন্ত্র

করবা চৌথ ২০২৫ বিবাহিত মহিলাদের জন্য একটি বিশেষ উপলক্ষ, যেখানে তাঁরা তাঁদের স্বামীর দীর্ঘায়ু এবং দাম্পত্য সুখের জন্য সূর্যোদয় থেকে চন্দ্রোদয় পর্যন্ত নির্জলা উপবাস রাখেন। উপবাসের সমাপ্তি ঘটে চাঁদকে অর্ঘ্য নিবেদন এবং দর্শন করার পর। এই দিনে পূজা, মন্ত্র এবং ঐতিহ্যবাহী রীতি পালন নারীর ভক্তি এবং পারিবারিক বিশ্বাসকে প্রতিফলিত করে।

Karwa Chauth 2025: আজ ভারতে বিবাহিত মহিলারা করবা চৌথের ব্রত পালন করছেন, যা স্বামীর দীর্ঘায়ু এবং দাম্পত্য সুখের প্রতীক। উপবাসের সমাপ্তি ঘটে চাঁদকে অর্ঘ্য নিবেদন এবং দর্শন করার পর। এই উপলক্ষে মহিলারা সূর্যোদয় থেকে চন্দ্রোদয় পর্যন্ত নির্জলা উপবাস পালন করেন, পূজার থালি প্রস্তুত করেন এবং বিশেষ মন্ত্র জপ করেন, যা ঐতিহ্যবাহী ভক্তি এবং পরিবারে প্রেম ও বিশ্বাসের বার্তা বহন করে।

চন্দ্রোদয় এবং পারণের সময় ২০২৫

করবা চৌথের চাঁদ এই বছর রাত ০৮:১৩ মিনিটে উদিত হওয়ার কথা। এই সময়ে ব্রতিনীরা চাঁদকে অর্ঘ্য নিবেদন করে ব্রত ভঙ্গ করতে পারেন। সময়ের সঠিক অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ কারণ ঐতিহ্যবাহী বিশ্বাস অনুযায়ী, চাঁদকে অর্ঘ্য নিবেদন করার পরেই ব্রতের সমাপ্তি হয়।

চাঁদকে অর্ঘ্য নিবেদন করার সঠিক পদ্ধতি

ব্রত পালনকারী মহিলারা পূজার থালিতে প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রস্তুত করেন। এর মধ্যে জল ভর্তি লোটা বা করওয়া, ছাঁকনি, রোলি, অক্ষত, মিষ্টি এবং প্রদীপ অন্তর্ভুক্ত থাকে।

  • প্রথমে হাত জোড় করে চাঁদকে প্রণাম করুন।
  • লোটার জলে কাঁচা দুধ, অক্ষত, সাদা চন্দন এবং কিছু ফুল মিশিয়ে অর্ঘ্য প্রস্তুত করুন।
  • ছাঁকনিতে একটি জ্বলন্ত প্রদীপ রাখুন এবং সেই ছাঁকনি দিয়েই চন্দ্র দেবের দর্শন করুন।
  • চাঁদের দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে জলের ধারা তৈরি করে অর্ঘ্য নিবেদন করুন। এই সময় স্বামীর দীর্ঘায়ু এবং দাম্পত্য সুখের কামনা করুন।
  • অর্ঘ্য নিবেদনের সময় ‘ওঁ সোং সোমায় নমঃ’ বা ‘দধি-শঙ্খ-তুষারভং ক্ষীরোদার্ণব-সম্ভবম্। নমামি শশিনং সোমং শম্ভোর্মুকুট-ভূষণম্।’ ইত্যাদি মন্ত্র জপ করুন।
  • অর্ঘ্য নিবেদনের ঠিক পর, সেই ছাঁকনি দিয়েই স্বামীর মুখ দেখুন।
  • শেষে, স্বামীর হাত থেকে জল পান করে আপনার নির্জলা ব্রত ভঙ্গ করুন এবং বাড়ির বড়দের আশীর্বাদ নিন।

মনে রাখবেন যে অর্ঘ্য নিবেদনের আগে এবং স্বামীর মুখ দেখার আগে কোনো জল বা অন্ন গ্রহণ করবেন না। এই রীতিনীতি সম্পন্ন হওয়ার পরেই ব্রত ভঙ্গ করা হয়।

করবা চৌথ পূজা মন্ত্র

  • ওঁ ঐং ক্লীং সোমায় নমঃ।
  • ওঁ শ্রাং শ্রীং শ্রৌং চন্দ্রামসে নমঃ।
  • ওঁ শ্রীং শ্রীং চন্দ্রামসে নমঃ।
  • ওঁ দধিশঙ্খতুষারভং ক্ষীরোদার্ণবসম্ভবম্। নমামি শশিনং সোমং শম্ভোর্মুকুটভূষণম্।।
  • ওঁ ভুর্বুভঃ স্বঃ অমৃতঙ্গায় বিদমহে কালারূপায় ধীমহি তন্নো সোম প্রচোদয়াৎ।।

এই মন্ত্রগুলি উচ্চারণ করলে পূজা এবং অর্ঘ্য নিবেদনের প্রক্রিয়া পবিত্র ও প্রভাবশালী হয়ে ওঠে।

করবা চৌথের গুরুত্ব ও সাংস্কৃতিক দিক

করবা চৌথের ব্রত কেবল একটি ধর্মীয় প্রথা নয়, বরং এটি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আবেগিক বন্ধন এবং ত্যাগের প্রতীকও বটে। এটি বছরের পর বছর ধরে ভারতীয় সংস্কৃতিতে নারীর ভক্তি এবং পারিবারিক মূল্যবোধের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এই ব্রত কেবল স্বামীর দীর্ঘায়ু ও সুখ-সমৃদ্ধির জন্য পালিত হয় না, বরং এটি পরিবার ও সমাজে সম্পর্কগুলিকে শক্তিশালী করার মাধ্যমও তৈরি করে।

সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে, করবা চৌথের দিনটি নারীর শক্তি এবং সংকল্পকে প্রতিফলিত করে। এই ব্রত এক ধরনের সামাজিক উৎসবও বটে, যেখানে মহিলারা তাঁদের পরিবার ও সম্প্রদায়ের সাথে একত্রিত হয়ে উদযাপন করেন। এর মাধ্যমে নারীর ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও সংরক্ষণ করা হয়।

ব্রতের প্রস্তুতি এবং সতর্কতা

করবা চৌথের দিন ব্রত পালনকারী মহিলারা সকালে সূর্যোদয়ের আগে উঠে স্নান করেন এবং পূজার স্থানের প্রস্তুতি নেন। পূজার জন্য পরিষ্কার থালা, জল, দুধ, ফুল, অক্ষত এবং প্রদীপের ব্যবস্থা করতে হয়।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ব্রতের সময় সংযম বজায় রাখা অপরিহার্য। নির্জলা ব্রত পালনের ফলে শারীরিক শক্তির উপর প্রভাব পড়তে পারে, তাই জল বা খাবার কেবল পারণের সময়ই গ্রহণ করা হয়। স্বাস্থ্যের প্রতি সতর্কতা অবলম্বন করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

সমাপ্তি ও পারণের গুরুত্ব

ব্রতের শেষ ধাপটি আসে চাঁদকে অর্ঘ্য নিবেদন এবং দর্শন করার পর। ঐতিহ্যবাহী বিশ্বাস অনুযায়ী, এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরেই ব্রত ভঙ্গ করা উচিত। এই সময় স্বামীর দীর্ঘায়ু এবং দাম্পত্য সুখের জন্য প্রার্থনা করা হয়।

অর্ঘ্য নিবেদনের পর স্বামীর হাত থেকে জল পান করা এবং বাড়ির বড়দের আশীর্বাদ নেওয়া ব্রতের সম্পূর্ণতা নির্দেশ করে। এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া মহিলাদের জন্য ভক্তি এবং সাংস্কৃতিক শৃঙ্খলার প্রতীক।

Leave a comment