ভারত-ব্রিটেনের ৪২০০ কোটির ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি, নৌবাহিনীর ইঞ্জিন নির্মাণেও সায়

ভারত-ব্রিটেনের ৪২০০ কোটির ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি, নৌবাহিনীর ইঞ্জিন নির্মাণেও সায়

ভারত ও ব্রিটেন ₹৪২০০ কোটি টাকার একটি হালকা ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের থ্যালেস কোম্পানি ভারতীয় সেনাবাহিনীকে এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি সরবরাহ করবে। এই চুক্তি উভয় দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা জোরদার করবে, পাশাপাশি ব্রিটেনে ৭০০টি কর্মসংস্থান সুরক্ষিত রাখবে।

প্রতিরক্ষা চুক্তি: ব্রিটেন বৃহস্পতিবার ভারতের সাথে প্রায় ₹৪২০০ কোটি (৩৫০ মিলিয়ন পাউন্ড) টাকার একটি হালকা ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তিটি নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডে ব্রিটেনের থ্যালেস কোম্পানি দ্বারা নির্মিত অস্ত্রের সাথে সম্পর্কিত। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এবং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুম্বাইতে বৈঠকের সময় এই চুক্তি ঘোষণা করা হয়। এই চুক্তির ফলে ভারতের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা এবং ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা অর্থনীতি উভয়ই শক্তিশালী হবে। এছাড়াও, উভয় দেশ নৌবাহিনীর জাহাজের জন্য ইলেকট্রিক ইঞ্জিন তৈরির মতো নতুন প্রতিরক্ষা-প্রযুক্তিগত প্রকল্পগুলিতেও কাজ করবে।

হালকা ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তির মাধ্যমে ভারতের আঘাত হানার ক্ষমতা বাড়বে

প্রতিরক্ষা চুক্তি অনুযায়ী, ব্রিটেনের থ্যালেস কোম্পানি ভারতীয় সেনাবাহিনীকে হালকা এবং অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেম সরবরাহ করবে। এই চুক্তির মূল্য ৩৫০ মিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ৪২০০ কোটি টাকা) বলা হচ্ছে। থ্যালেস কোম্পানির সদর দপ্তর নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডে অবস্থিত এবং এই কোম্পানি ইউক্রেনকেও একই ধরনের অস্ত্র তৈরি করে দেয়।

এই চুক্তির ফলে ব্রিটেনে প্রায় ৭০০ মানুষের চাকরি সুরক্ষিত থাকবে। অন্যদিকে, ভারতের জন্য এটি আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই হালকা ক্ষেপণাস্ত্রগুলির মাধ্যমে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ফিল্ড এবং ব্যাটালিয়ন স্তরের আঘাত হানার ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে।

মুম্বাইতে অনুষ্ঠিত হলো প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক

ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বর্তমানে ভারত সফরে রয়েছেন। মুম্বাইতে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে দেখা করেন। এই বৈঠকের সময়, দুই নেতা শুধু প্রতিরক্ষা নয়, বাণিজ্য ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করেন।

উভয় দেশের মধ্যে সম্প্রতি সম্পন্ন ভারত-ব্রিটেন বাণিজ্য চুক্তির (India-UK Trade Deal) প্রশংসা করা হয়। মোদী এবং স্টারমার বলেছেন যে এই চুক্তির ফলে উভয় দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্ব উভয়ই শক্তিশালী হবে।

নৌবাহিনীর জন্য ইলেকট্রিক ইঞ্জিনের উপর নতুন চুক্তি

প্রতিরক্ষা সহযোগিতার অধীনে উভয় দেশের মধ্যে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। এর আওতায় ভারত ও ব্রিটেন নৌবাহিনীর জাহাজের জন্য ইলেকট্রিক ইঞ্জিন তৈরির চুক্তিতেও স্বাক্ষর করেছে। এই প্রকল্পের প্রাথমিক মূল্য ২৫০ মিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ৩০০০ কোটি টাকা) বলে জানানো হচ্ছে।

এই চুক্তি উভয় দেশের মধ্যে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা এবং উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপের ফলে ভারতের নৌবাহিনী শক্তি-সাশ্রয়ী এবং আধুনিক প্রযুক্তির ইঞ্জিন পাবে, যা তাদের দীর্ঘ দূরত্বের যুদ্ধ সক্ষমতা বাড়াবে।

ব্রিটেনের জন্যও অর্থনৈতিক সুবিধা

এই চুক্তির ফলে শুধু ভারতই নয়, ব্রিটেনও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হবে। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলি ভারতের মতো একটি বৃহৎ বাজারে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছে। ব্রিটেনের থ্যালেসের মতো সংস্থাগুলির জন্য এই চুক্তি তাদের উৎপাদন ক্ষমতা এবং অস্ত্র রপ্তানি বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার গত এক বছর ধরে দেশের প্রতিরক্ষা শিল্পকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করছেন। তার উদ্দেশ্য হলো অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানো এবং রপ্তানিকে উৎসাহিত করা। সম্প্রতি ব্রিটেন নরওয়ের সাথে ১৩.৫ বিলিয়ন ডলারের একটি বড় যুদ্ধজাহাজ চুক্তিও করেছিল।

নতুন অংশীদারিত্বে বাড়বে আস্থা

উভয় দেশের মধ্যে এই প্রতিরক্ষা চুক্তিকে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্বের নতুন মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে ব্রিটেন ভারতের সাথে দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরক্ষা এবং প্রযুক্তিগত সম্পর্ক জোরদার করতে চায়। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী মোদীও এই সহযোগিতাকে “দুটি গণতান্ত্রিক দেশের যৌথ নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতি” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা উভয় ক্ষেত্রেই শক্তি বৃদ্ধি

এই প্রতিরক্ষা চুক্তির পাশাপাশি, উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কও নতুন উচ্চতায় পৌঁছাচ্ছে। ভারত-ব্রিটেন বাণিজ্য চুক্তির পর এখন প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও দীর্ঘমেয়াদী অংশীদারিত্বের পথ তৈরি হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে আগামী বছরগুলিতে ভারত ও ব্রিটেন যৌথ প্রতিরক্ষা গবেষণা, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং সামরিক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে আরও অনেক পদক্ষেপ নিতে পারে।

Leave a comment