আবার কলকাতায় কলেরার থাবা বেহালায় আক্রান্ত ৪ বছরের শিশু আতঙ্ক ছড়াল শহর থেকে গ্রামে

আবার কলকাতায় কলেরার থাবা বেহালায় আক্রান্ত ৪ বছরের শিশু আতঙ্ক ছড়াল শহর থেকে গ্রামে

বেহালায় আক্রান্ত ৪ বছরের শিশু, পিয়ারলেস হাসপাতালে ভর্তি

দীর্ঘদিন পর ফের শহরে মাথাচাড়া দিল জলবাহিত মারণরোগ—কলেরা। কলকাতার বেহালা পর্ণশ্রীর বাসিন্দা এক ৪ বছরের শিশু আক্রান্ত হয়েছে এই রোগে। ২ অগাস্ট তাকে ভর্তি করা হয় পিয়ারলেস হাসপাতালে। শিশুটির লক্ষণ ছিল ডায়রিয়া, জ্বর, বমি ও তীব্র পেট ব্যথা। রিপোর্টে ‘কলেরা পজিটিভ’ আসতেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসে।

ভিব্রিও কলেরি পজিটিভ, স্টুল টেস্টে মিলল সংক্রমণের প্রমাণ

হাসপাতালে শিশুটির মল পরীক্ষায় ধরা পড়ে সংক্রমণের কারণ—ভিব্রিও কলেরি। এই ব্যাকটেরিয়াই কলেরা রোগের মূল উৎস। চিকিৎসকদের মতে, জল ও খাদ্যবাহিত এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। শিশুটির শারীরিক অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল হলেও পরিস্থিতি চিন্তার।

শহরে নতুন করে বাড়ছে সংক্রমণ, পিকনিক গার্ডেনে আক্রান্ত যুবক

দিন কয়েক আগেই বাইপাস সংলগ্ন একটি হাসপাতালে কলেরার উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হন আরেক যুবক। জানা যায়, তিনি কলকাতা পুরসভার ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডের পিকনিক গার্ডেন রোডের বাসিন্দা। তীব্র বমি, পেটের যন্ত্রণা, জ্বর—এই উপসর্গ নিয়েই ভর্তি হন তিনি। প্রাথমিক রিপোর্টে কলেরার সম্ভাবনা থাকায় তাঁকেও আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।

তপসিয়ায় আক্রান্তের ঘটনা আগেই ঘটেছে, বর্ষায় নতুন উদ্বেগ

গত মাসেই শহরের তপসিয়ায় এক যুবকের দেহে ধরা পড়ে কলেরা। অর্থাৎ, শহরের একাধিক ওয়ার্ডে ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রমণ। চিকিৎসকরা বলছেন, বর্ষার সময়ে বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব ও অপরিষ্কার খাদ্য গ্রহণ এই সংক্রমণের অন্যতম কারণ। পুর প্রশাসন এখনও পর্যন্ত কোনও স্পষ্ট পদক্ষেপ ঘোষণা করেনি।

গ্রামাঞ্চলে শতাধিক আক্রান্ত, আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন সাধারণ মানুষ

শুধু শহরেই নয়, জেলাগুলিতেও কলেরা আতঙ্ক ছড়িয়েছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, শতাধিক মানুষ ইতিমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন। একাধিক গ্রামে একই জলসূত্র থেকে পানীয় জল নেওয়ার কারণে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রমণ। গ্রামবাসীরা জানান, গ্রামের দু’টি নলকূপ থেকেই মূলত এই রোগ ছড়িয়েছে।

জলের ট্যাঙ্কার পাঠাল প্রশাসন, ব্লিচিংয়ের দাবি স্থানীয়দের

গ্রামবাসীদের দাবিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জলের ট্যাঙ্কার পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তারা আরও দাবি তুলেছেন, প্রতিটি পরিবারকে বিশুদ্ধ জল দেওয়া হোক, পুকুরে ব্লিচিং পাউডার ফেলা হোক এবং প্রত্যেককে মশারির পাশাপাশি স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা হোক। বিশেষত জুলাই মাস থেকেই এই প্রাদুর্ভাব ধীরে ধীরে বাড়ছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ: জলে সাবধান, রাস্তার খাবার এড়িয়ে চলুন

স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা পরামর্শ দিচ্ছেন—অবশ্যই ফুটিয়ে জল পান করুন, রাস্তার খাবার বা খোলা জলে ধোয়া খাবার এড়িয়ে চলুন। হাত ধোয়া ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখাও জরুরি। শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা নেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

শহর-গ্রাম মিলিয়ে বিপদের আশঙ্কা, দ্রুত হস্তক্ষেপ জরুরি

একদিকে শিশু আক্রান্ত হচ্ছে শহরের মধ্যে, অন্যদিকে গ্রামে আক্রান্ত শতাধিক। জলবাহিত এই সংক্রমণ রুখতে জরুরি বিশুদ্ধ জল ও স্যানিটেশনের সুব্যবস্থা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারি না এলে পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। কলকাতা ফের একবার কলেরার আতঙ্কে কাঁপছে।

Leave a comment