সাইকেলে বেরিয়ে আর ফেরা হল না: বাসের ধাক্কায় মৃত্যু ডেলিভারি কর্মীর, আতঙ্কে কেষ্টপুর
কলকাতার ব্যস্ততম রাস্তাগুলির মধ্যে অন্যতম কেষ্টপুর VIP রোড। আর সেখানেই শনিবার দুপুরে ঘটে গেল এক মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনা। ডেলিভারি অ্যাপে কাজ করতেন এমন এক যুবককে পিষে দিল বেপরোয়া বাস। সময় তখন বেলা সাড়ে ১২টা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার সময় রাস্তায় তীব্র যানচলাচল ছিল, কিন্তু ২১১ নম্বর রুটের বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সজোরে ধাক্কা মারে সাইকেল আরোহী যুবককে।ঘটনার ভয়াবহতায় রক্তে ভেসে গেল কেষ্টপুরের রাস্তা। এই মৃত্যু শুধু এক পরিবারের ভাঙন নয়, বরং শহরের বেপরোয়া পরিবহন ব্যবস্থার এক জ্বলন্ত প্রমাণ।
২১১ নম্বর রুটের বাসের ধাক্কায় ছিটকে পড়েন অমিত, চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু
ঘাতক বাসটি খড়িবাড়ি থেকে আহিরীটোলার দিকে যাচ্ছিল। কেষ্টপুর মোড়ে পৌঁছনোর পর সেই বাস আচমকাই ধাক্কা মারে অমিত মান্না নামে ওই যুবককে। প্রতিদিনের মতো নিজের কাজে বেরিয়ে পড়েছিলেন তিনি, সাইকেলে চেপে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন। কিন্তু জীবন থেমে গেল কিছু সেকেন্ডের ব্যবধানে— ছিটকে পড়ার পর বাসটি তাঁকে পিষে দেয়।এই দুর্ঘটনা যেন প্রশ্ন তোলে— নিরাপত্তাহীন শহরের রাস্তায় জীবন কতটা সস্তা? অমিতের জীবনের বিনিময়ে শহর আরও একবার নিঃশব্দে কাঁদল।
ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতা, হাসপাতালে পৌঁছলেও শেষরক্ষা হয়নি
ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ অমিতকে উদ্ধার করে VIP রোড লাগোয়া একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছে। চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। অমিতের মৃতদেহ পাঠানো হয়েছে আরজিকর হাসপাতালের ময়নাতদন্ত বিভাগে।জীবনের শেষ মুহূর্তেও তাঁর পাশে দাঁড়ায় পুলিশ ও হাসপাতাল, কিন্তু নিয়তির কাছে হার মানলেন অমিত। সময়ের মধ্যে উদ্ধার করেও বাঁচানো গেল না এই যুবককে।
চালক-খালাসি পলাতক, পুলিশ জব্দ করেছে ঘাতক বাস
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনার পরেই বাসের চালক ও কন্ডাক্টর ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। যদিও ঘাতক বাসটিকে আটক করা হয়েছে। তদন্ত শুরু করেছে বাগুইআটি থানার পুলিশ। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, ওই রুটের বাসগুলি প্রতিদিনই বেপরোয়া গতিতে চলে।চালক-খালাসির পলায়ন যেন দায় এড়ানোর এক সহজ রাস্তা। কিন্তু একজন মানুষের মৃত্যুর দায় কোথায় যাবে? পুলিশি তৎপরতা এখন নজরে।
অমিত মান্না— জীবনযুদ্ধে হার না মানা এক ডেলিভারি বয়, যার গল্প থেমে গেল হঠাৎ
মেদিনীপুরের বাসিন্দা অমিত মান্না, জীবিকার সন্ধানে কলকাতায় এসে ডেলিভারি বয়ের চাকরি করছিলেন। প্রতিদিন শত ঝুঁকি নিয়েই কাজ করতে হত তাঁকে। কিন্তু এমন মৃত্যুর জন্য কি কেউ প্রস্তুত থাকে? শহরের এক কোণে রোজকার লড়াই চালিয়ে যাওয়া অমিতের জীবন থেমে গেল এক নির্মম দুর্ঘটনায়।এটি শুধুমাত্র একটি পথদুর্ঘটনা নয়, বরং শহরের পরিযায়ী শ্রমিকদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই কাজ করে যাওয়া বাস্তবের এক করুণ চিত্র।