চুরির ঘটনায় চমকে গেল ব্যবসায়ী মহল : খাঁটি সরষের তেল। যেমন ঝাঁজ, তেমন গুণে ভরপুর। সেই তেল কলকাতা থেকে বারাণসীর পথে লরি–সহ উধাও হয়ে গেল! দামি মালের মূল্য প্রায় ২৩ লক্ষ টাকা। পোস্তা–বড়বাজারের ব্যবসায়ীরা ভেবেও পাননি, রান্নার তেলের মতো পণ্যের ক্ষেত্রেও এত বড়সড় চুরির ঘটনা ঘটতে পারে।
রান্নার তেলের দামে আগেই সতর্কতা
গত কয়েক মাস ধরেই অনুমান করা হচ্ছিল, রান্নার তেলের বাজারে দামে আগুন লাগতে পারে। আশঙ্কা সত্যি করেই সরষের তেল ইতিমধ্যেই প্রতি কেজিতে ২০০ টাকার গণ্ডি পেরিয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ২৩ লক্ষ টাকার সরষের তেল চুরি হওয়ায় ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত পড়েছে। শুধু ক্ষতি নয়, সময় মতো ডেলিভারি না দিতে পারায় এক ব্যবসায়ীর সম্মানহানিও হয়েছে বলে অভিযোগ।
থানায় অভিযোগ দায়ের
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী শেষমেশ নর্থ পোর্ট থানায় লিখিত অভিযোগ জানান। কলকাতা পুলিশের অফিসাররাও প্রথমে অবাক হয়ে যান। কারণ, পেট্রল–ডিজেলের মতো জ্বালানি তেলের চুরি বা পাচার নতুন নয়। কিন্তু ভোজ্য তেল—তাও আবার সরষের তেলের মতো পণ্যে এত বড় চুরির ঘটনা পুলিশের রেকর্ডেও বিরল।
তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য
তদন্তে উঠে আসে লরির মালিক আমজাদ খান ও চালক রাজুর ভূমিকাই সবচেয়ে সন্দেহজনক। ঘটনার পর থেকেই তাঁদের ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না। পুলিশি জেরায় জানা যায়, তাঁদের মাধ্যমেই রাজদীপ সাঁধুখা নামে এক ব্যবসায়ী তথ্য পান যে খাঁটি সরষের তেল বারাণসী পাঠানো হচ্ছে। ভালো মানের কারণে সেই তেল খোলা বাজারে চড়া দামে বিক্রি করে বিপুল মুনাফা করা সম্ভব বলেই ছক কষা হয়।
নদিয়ায় ঘোরাফেরা, তারপর পাচারের ছক
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতা থেকে সরাসরি বারাণসী না গিয়ে লরি প্রথমে নদিয়ায় ঘোরাফেরা করে। পরে ধৃত ব্যবসায়ী রাজদীপ সাঁধুখার সঙ্গে যোগাযোগ করে মাল বিক্রির চেষ্টা চলে। পরিকল্পনা ছিল, উত্তরপ্রদেশের বাজারে চড়া দামে সরষের তেল বিক্রি করে দেওয়া হবে।
অভিযুক্তদের হেফাজতে পুলিশ
অবশেষে অভিযুক্ত লরি মালিক আমজাদ খান, চালক রাজু এবং ব্যবসায়ী রাজদীপ সাঁধুখাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মঙ্গলবার তাঁদের আদালতে পেশ করে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এখন তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন, এই চক্রে আরও কেউ যুক্ত রয়েছেন কি না।
বাজারে প্রভাবের আশঙ্কা
প্রায় ২৩ লক্ষ টাকার সরষের তেল চুরির ঘটনায় ব্যবসায়ী মহলে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এ ধরনের ঘটনা যদি বারবার ঘটে, তবে সরবরাহ কমে গিয়ে বাজারে তেলের দাম আরও চড়তে পারে। সাধারণ ক্রেতার পকেটেও এর প্রভাব পড়বে।
রান্নার তেলের বাজারে এমনিতেই অস্থিরতা চলছে। তার মধ্যেই এই বিপুল চুরি ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তা বাড়াল। পুলিশের হাতে ধৃতরা এখন তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছেন। দেখা যাক, চক্রের আরও কেউ ধরা পড়ে কি না এবং এই ঘটনায় বাজারের ভারসাম্য কতটা নড়ে যায়।