মধ্যপ্রদেশের ভিন্দ জেলার মৌ শহরে জাতিগত উত্তেজনা ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠল, যখন একটি ত্রয়োদশী ভোজ নিয়ে যাদব ও ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় মুখোমুখি হয়। ঘটনাটি ছিল একটি সাধারণ ত্রয়োদশী ভোজের, যেখানে কমল যাদব নামক এক ব্যক্তি প্রথা অনুযায়ী ১৩ জন ব্রাহ্মণকে আমন্ত্রণ জানান, কিন্তু এই বিষয়ে যাদব সমাজের পঞ্চায়েত তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে এবং কমল যাদবের পরিবারকে সামাজিকভাবে বয়কট করে।
ইটাওয়ার ঘটনার সঙ্গে যুক্ত বিতর্ক
আসলে, এই পুরো বিতর্কের উৎস উত্তর প্রদেশের ইটাওয়া জেলায়, যেখানে ২১ জুন যাদবদের টিকি ও চুল কেটে দেওয়ার ঘটনা সামনে আসে। এই ঘটনার পর থেকেই ব্রাহ্মণ ও যাদব সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনার পরিবেশ তৈরি হয়। এই প্রেক্ষাপটে ভিন্দ জেলার যাদব সমাজ সম্মিলিতভাবে এই সিদ্ধান্ত নেয় যে, তারা তাদের ধর্মীয় কাজকর্ম ব্রাহ্মণদের দিয়ে না করিয়ে নিজেদের সমাজের প্রশিক্ষিত লোকেদের দিয়ে করাবে।
এই সিদ্ধান্ত সমাজে একটি স্পষ্ট বিভাজন রেখা টেনে দিয়েছে, যেখানে ব্রাহ্মণদের ধর্মীয় ভূমিকা সীমিত করে দেওয়া হয়েছে। এর সাম্প্রতিক উদাহরণ মৌ শহরে দেখা যায়, যখন কমল যাদব তাঁর মায়ের ত্রয়োদশীতে ব্রাহ্মণদের ডেকেছিলেন।
পঞ্চায়েতের বয়কটের ফতোয়া
জানা যায়, ৪ জুলাই কমল যাদবের মা রামাদেবীর প্রয়াণ হয়, এরপর ১৬ জুলাই ত্রয়োদশী ভোজের আয়োজন করা হয়। এই ভোজের জন্য কমল যাদব প্রথা মেনে তেরোজন ব্রাহ্মণকে আমন্ত্রণ জানান। সমাজের লোকেরা যখন এই বিষয়ে জানতে পারে, তখন ১৪ জুলাই পঞ্চায়েত ডাকা হয়, যেখানে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে কমল যাদবের ভোজ বয়কট করা হবে।
পঞ্চায়েত এটিকে সমাজের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন বলে জানায় এবং বলে যে ব্রাহ্মণদের ডাকা যাদব সমাজের আত্মসম্মানের পরিপন্থী। এই সিদ্ধান্তের পর ভোজ অনুষ্ঠানে সমাজের অনেক লোক অংশ নেয়নি।
কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি
এই পুরো ঘটনায় কমল যাদব তাঁর অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন যে, পঞ্চায়েতের সিদ্ধান্তের বিষয়ে তাঁকে আগে থেকে কিছু জানানো হয়নি। তিনি বলেন যে, তাঁর পরিবারে বহু বছর ধরে কুল পুরোহিত দ্বারা সংস্কার করানো হয়, এবং তিনি সেই প্রথাই পালন করেছেন।
কমল জানান যে, ভোজে ব্রাহ্মণদের ডাকার বিষয়ে শুধুমাত্র কিছু লোক আপত্তি জানিয়েছিল এবং এই খবর তাঁকে অনুষ্ঠানের ঠিক একদিন আগে দেওয়া হয়। তিনি এও দাবি করেন যে, বহু লোক ভোজে যোগদান করেছিল, শুধুমাত্র কিছু লোক এটি বয়কট করেছে।
সামাজিক বিভেদ আবার উন্মোচিত
এই ঘটনা শুধুমাত্র একটি ভোজের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি সমাজে বাড়তে থাকা জাতিগত উত্তেজনা ও ধর্মীয় বিভেদের দিকে ইঙ্গিত করে। একদিকে যখন যাদব সমাজ ব্রাহ্মণদের ভূমিকা পুনর্বিবেচনা করছে, তখন অন্যদিকে এই ধরনের সামাজিক বয়কট শতাব্দীর পরনো ঐতিহ্য এবং সামাজিক ভারসাম্যের ওপর প্রভাব ফেলছে।
এই বিতর্ক আবারও এই প্রশ্ন তুলেছে যে জাতি ও ধর্মের ভিত্তিতে সামাজিক সম্পর্ক ভেঙে দেওয়া কি সঠিক, নাকি সময়ের সঙ্গে ঐতিহ্যের পরিবর্তন প্রয়োজন?