মালদহ-মুর্শিদাবাদে গঙ্গার ভাঙন রুখতে জোর কদমে রিপোর্ট তৈরির কাজ শুরু কে দেবে টাকা কেন্দ্র কি এগিয়ে আসবে

মালদহ-মুর্শিদাবাদে গঙ্গার ভাঙন রুখতে জোর কদমে রিপোর্ট তৈরির কাজ শুরু কে দেবে টাকা কেন্দ্র কি এগিয়ে আসবে

রাজ্যের সেচ দফতরের মাঠে নামা: গঙ্গার ভাঙন ঠেকাতে শুরু পরিকল্পনার খসড়া

বর্ষা এলেই ভয় আর উৎকণ্ঠার চাদরে ঢেকে যায় মালদহ ও মুর্শিদাবাদের বিস্তীর্ণ এলাকা। গঙ্গার তীব্র স্রোতে প্রতিবছর গৃহহীন হন হাজার হাজার পরিবার। এবছর সেই আতঙ্ক রুখতেই কোমর বেঁধে নেমেছে রাজ্য সেচ দফতর। সেচ দফতরের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, নদিয়া, মালদহ ও মুর্শিদাবাদের গঙ্গা তীরবর্তী ১৬৩.৫ কিমি এলাকা জুড়ে ভাঙনরোধে পরিকাঠামো নির্মাণ এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই মহাযজ্ঞ বাস্তবায়নে জোরকদমে রিপোর্ট তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে।

প্রাধান্য পাচ্ছে মালদহ-মুর্শিদাবাদ: রিপোর্ট জমা দিতে হবে সাত দিনের মধ্যেই

ভাঙনের তীব্রতার নিরিখে প্রথম পর্যায়ে অগ্রাধিকার পাচ্ছে মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলা। রতুয়া অঞ্চলে শুরু হয়েছে বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (DPR) তৈরির কাজ। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনে এই রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য মাত্র ৭ দিনের সময়সীমা। এর পাশাপাশি বিহারেও গঙ্গার তীরে ১৫ কিমি অঞ্চল জুড়ে একই ধরণের প্রকল্প চালু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেখানেও DPR তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে এবং আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে তা সম্পূর্ণ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।

আন্তঃরাজ্য উদ্যোগে রূপরেখা: দরকার NOC, চাহিদা দ্রুত অনুমোদনের

বিহার ও ঝাড়খণ্ডের সীমানা সংলগ্ন নদীপথেও প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। বিশেষ করে একে কার্যকর করতে প্রয়োজন ১৫ কিমি নদী ড্রেজিং। তার জন্য বিহার ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যের কাছ থেকে চাওয়া হয়েছে দ্রুত NOC (No Objection Certificate)। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় জল কমিশন ও সেচ দফতরের মধ্যে এই নিয়ে কথাবার্তাও শুরু হয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তঃরাজ্য সহযোগিতা ছাড়া এই ধরনের প্রকল্পের সার্থক বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

খরচে বাংলার বড় অংশ: বিহার দেবে কিনা, সেই প্রশ্নেই অনিশ্চয়তা

এই প্রকল্পে রাজ্য সরকারের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ₹৬১০ কোটি, অন্যদিকে বিহারের ব্যয় ধরা হয়েছে ₹৫৮১ কোটি। যদিও প্রাথমিকভাবে ঝাড়খণ্ডকে এই প্রকল্পে কোনো অর্থ দিতে হবে না বলে জানানো হয়েছে। তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, বিহার আদৌ এই টাকা দেবে তো? কারণ বিগত বহু অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে কেন্দ্রীয় সহযোগিতা বা পার্শ্ববর্তী রাজ্যের দায়বদ্ধতায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে বারবার।

রাজ্যের ক্ষোভ ও আবেদন: কেন্দ্রের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে

এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ওরা (কেন্দ্র) টাকা না দিলে, বাংলাকে নিজেই কিছু করতে হবে। ৪৫ দিন পর ফের একটি মিটিং হবে।” উল্লেখযোগ্যভাবে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১৪ সালেই গঙ্গা ভাঙন রোধে কেন্দ্রের কাছে বিস্তারিত পরিকল্পনা জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু তা এখনও কার্যকর হয়নি বলে অভিযোগ রাজ্য সরকারের। সেচমন্ত্রী আরও বলেন, এই প্রশ্ন শুধু রাজ্যের নয়, বরং সর্বদলীয় স্তরে কেন্দ্রের এই মনোভাবের বিরুদ্ধে চাপ তৈরি করা প্রয়োজন।

নদীভাঙন রোধে রাজ্যের তৎপরতা: বাঁধ, জিওটেক্সটাইল ও পুনর্বাসনের পরিকল্পনা

সরকারি সূত্র অনুযায়ী, মালদহে ইতিমধ্যেই নদীতীরবর্তী অঞ্চলে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। ভাঙনপ্রবণ এলাকাগুলিতে জিওটেক্সটাইল টিউব বসানো হচ্ছে যাতে স্রোতের গতি রোধ করা যায়। একই সঙ্গে, যেসব পরিবার ইতিমধ্যে ভিটেমাটি হারিয়েছেন, তাঁদের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করছে রাজ্য সরকার। প্রয়োজনে সরকারি জমি বা আশ্রয় প্রকল্প ব্যবহার করে তাদের পুনর্বাসন দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

প্রকল্প বড়, প্রশ্ন আরও বড়—কেন্দ্র কি এগিয়ে আসবে?

এই প্রকল্প নিঃসন্দেহে গঙ্গার তীরে বসবাসকারী লক্ষাধিক মানুষের কাছে আশার আলো। কিন্তু এর সফল বাস্তবায়নের জন্য রাজ্যের একার চেষ্টায় কতদূর কী হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়ে যাচ্ছে। বিহারের সক্রিয় অংশগ্রহণ, ঝাড়খণ্ডের দ্রুত NOC এবং সর্বোপরি কেন্দ্রের আর্থিক সহযোগিতা—এই তিনটি স্তম্ভ না থাকলে প্রকল্প অনেকটাই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। এখন দেখার, শুধুই বাংলার কাঁধে দায় পড়ে, নাকি সত্যিই ‘সহযোগিতার গঙ্গা’ বইবে গোটা পূর্ব ভারতে।

Leave a comment