'মালিক'-এ, রাজকুমার রাও আবারও তাঁর অভিনয় দিয়ে দর্শকদের মন জয় করেছেন। তিনি বরাবরের মতোই এই ছবিতেও তাঁর চরিত্রটিকে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন, আর সে কারণেই তাঁর নাম শুনলেই দর্শক আগ্রহ ভরে ওঠে।
- সিনেমা সমালোচনা: মালিক
- তারকা মান: ৩/৫
- মুক্তি: ১১.০৭.২০২৫
- পরিচালক: পুলকিত
- ধরন: ড্রামা
বিনোদন: রাজকুমার রাও অভিনীত নতুন ছবি 'মালিক' (Malik Movie) আরেকটি গ্যাংস্টার ড্রামা, যা ক্ষমতা, অপরাধ এবং আত্মার অধঃপতনের গল্প বলার চেষ্টা করে। পুলকিত পরিচালিত এবং জ্যোৎস্না নাথের সঙ্গে লিখিত এই সিনেমাটি একজন সাধারণ মানুষের মাফিয়া হয়ে ওঠার যাত্রা দেখায়। তবে, এই সিনেমাটি কি সত্যিই দর্শকদের হৃদয়ে পৌঁছতে পারে, নাকি কেবল রাজকুমার রাও-এর উপর ভর করে এগিয়ে চলে? আসুন, এই রিভিউতে জেনে নেওয়া যাক।
গল্প: ১৯৮০-এর দশকে ভারতের একজন গ্যাংস্টারের উত্থান
সিনেমাটির গল্প ১৯৮০ সালের প্রয়াগরাজে (Prayagraj) স্থাপন করা হয়েছে। একজন সাধারণ যুবক, যে বড় স্বপ্ন দেখে, কীভাবে সমাজের অবিচার, প্রতারণা এবং সামাজিক চাপের কারণে অপরাধের পথে পা বাড়ায় – এটিই 'মালিক'-এর মূল প্লট। প্রথমার্ধে নায়কের উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং সংগ্রাম দেখানো হয়েছে। যেখানে দ্বিতীয়ার্ধ তার পতন এবং অনুশোচনার দিকে নিয়ে যায়। গল্পটি আকর্ষণীয় বিষয়ভিত্তিক হলেও, চিত্রনাট্য, বিশেষ করে দ্বিতীয় অংশে দুর্বল হয়ে যায় এবং সিনেমা তার গতি হারায়।
পরিচালনা এবং চিত্রনাট্য: শৈলী নাকি বিষয়বস্তু?
পরিচালক পুলকিত (Pulkit) প্রথম অংশে পরিবেশ, সেটআপ এবং লোকেশনকে বাস্তবসম্মত রাখতে বেশ পরিশ্রম করেছেন। প্রয়াগরাজের রাস্তাঘাট, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং মাফিয়াদের সংগ্রাম সিনেমাটোগ্রাফির মাধ্যমে ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তবে, গল্প বলার ধরন এবং চিত্রনাট্য ততটা শক্তিশালী নয়। সিনেমার দৈর্ঘ্য (২ ঘণ্টা ২৯ মিনিট) এটিকে আরও দুর্বল করে তোলে।
দ্বিতীয় অংশে, অনেক প্লট পয়েন্ট অসম্পূর্ণ মনে হয় এবং প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের 'দাস' বা হুমা কুরেশির চরিত্রগুলির মতো কিছু চরিত্র, কোনো প্রভাব ছাড়াই থেকে যায়।
রাজকুমার রাও: একটি উজ্জ্বল অভিনয়
সিনেমাটির সবচেয়ে বড় শক্তি হল রাজকুমার রাও-এর অভিনয়। তিনি পুরো ছবিতে নিজেকে মেলে ধরেছেন। একজন সাধারণ মানুষ থেকে একজন ভয়ঙ্কর গ্যাংস্টার হওয়ার তার রূপান্তর অসাধারণ। তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, সংলাপ বলার ভঙ্গি এবং আবেগপূর্ণ গভীরতা চরিত্রটিকে জীবন্ত করে তোলে। একটি দৃশ্যে, তাকে চার জন লোককে দড়ি দিয়ে টানতে দেখা যায় – এই দৃশ্যটি সিনেমার highlight হয়ে ওঠে।
মানুসী চিল্লার (Manushi Chhillar) স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন, কিছু দৃশ্যে তিনি ভালো করেছেন, তবে আবেগপূর্ণ গভীরতার অভাব দেখা যায়। সৌরভ শুক্লা এবং অ अंशुমান পুষ্কর-এর মতো সহ-অভিনেতারা সিনেমাটিকে ধরে রেখেছেন।
প্রযুক্তিগত দিক: শক্তিশালী ভিজ্যুয়াল, দুর্বল সম্পাদনা
প্রোডাকশন ডিজাইন (Production Design) এবং ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর (Background Score) সিনেমাটির শক্তিশালী দিক। ৮০-এর দশকের পরিবেশ বাস্তব মনে হয়, তবে সম্পাদনার (editing) উপর আরও কাজ করা যেত। বিশেষ করে, দ্বিতীয় অংশে অনেক দৃশ্য দীর্ঘ মনে হয়। আপনি যদি বিষয়বস্তু-নির্ভর সিনেমা পছন্দ করেন এবং কোনও অভিনেতার অভিনয়ের জন্য সিনেমা দেখতে চান, তবে 'মালিক' আপনাকে হতাশ করবে না। এই সিনেমাটি গ্যাংস্টার ড্রামার নতুন সংজ্ঞা দেয় না, তবে রাজকুমার রাও-এর আরও একটি স্মরণীয় অভিনয় অবশ্যই রয়েছে।
সিনেমাটিতে চিত্রনাট্যের কিছু দুর্বলতা রয়েছে, কিছু চরিত্র অসম্পূর্ণ, এবং দৈর্ঘ্য এর গতি কমিয়ে দেয়। তবে পুলকিতের ভিজ্যুয়াল স্টাইল, বাস্তবসম্মত অ্যাকশন, এবং রাও-এর অভিনয় সিনেমাটিকে দেখার মতো করে তোলে।