Embraer ও Mahindra-এর যৌথ উদ্যোগে ভারতে C‑390 Millennium বিমানের নির্মাণ হবে। ২৬ টন পেলোড ক্ষমতা সম্পন্ন এই দ্রুতগতির, নির্ভরযোগ্য বিমানটি ভারতীয় বায়ুসেনার জন্য পুরনো An‑32-এর স্থান নেবে এবং 'মেক ইন ইন্ডিয়া'-কে উৎসাহিত করবে।
C-390 Millennium: ভারত ও ব্রাজিলের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নতুন মোড় নিয়েছে। Mahindra Defence Systems এবং ব্রাজিলের অগ্রণী এয়ারোস্পেস কোম্পানি Embraer-এর মধ্যে অংশীদারিত্বের অধীনে, এবার ভারতেই অত্যাধুনিক C-390 Millennium মাঝারি পরিবহন বিমানের (Medium Transport Aircraft) নির্মাণ করা হবে। এই অংশীদারিত্বের ফলে কেবল ভারতীয় বায়ুসেনা একটি আধুনিক প্ল্যাটফর্ম পাবে তাই নয়, 'মেক ইন ইন্ডিয়া' উদ্যোগও শক্তিশালী হবে।
ভারতীয় বায়ুসেনা পাবে নতুন পরিবহন প্ল্যাটফর্ম
C-390 Millennium, ব্রাজিল দ্বারা তৈরি একটি অত্যাধুনিক এবং বহু-উদ্দেশ্য পরিবহন বিমান। এই বিমানটি বর্তমানে ব্রাজিলীয় এবং পর্তুগিজ বায়ুসেনাতে পরিষেবা দিচ্ছে। ভারতে এর আগমন ভারতীয় বায়ুসেনার পুরনো An-32-এর মতো পরিবহন বিমানের স্থান পূরণ করতে পারবে। এই বিমান সেনা সদস্য, অস্ত্রশস্ত্র, যানবাহন এবং চিকিৎসা সহায়তা দ্রুত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পাঠাতে সক্ষম।
C-390-এর বৈশিষ্ট্য যা এটিকে বিশেষ করে তোলে
C-390 Millennium সর্বাধিক ২৬ টন পেলোড বহন করতে পারে। এর তুলনায়, মার্কিন C-130J Super Hercules বিমানটি কেবল ২০.২ টন পেলোড তুলতে পারে। এটি C-390-কে একটি উন্নত বিকল্প করে তোলে। এই বিমান দুটি M113 সাঁজোয়া যান, একটি Boxer Vehicle, একটি H-60 হেলিকপ্টার, ৮০ জন সৈন্য অথবা ৬৬ জন প্যারাট্রুপারকে তাদের সম্পূর্ণ সরঞ্জাম সহ বহন করতে পারে।
এর সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৮৭০ কিলোমিটার। এটি ২৬ টন পেলোড সহ ১,৮৫২ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে পারে। দুটি শক্তিশালী IAE V2500-E5 টার্বোফ্যান ইঞ্জিন এটিকে জ্বালানি সাশ্রয়ী এবং নির্ভরযোগ্য করে তোলে।
মাল্টি-মিশন বিমান: একাধিক কাজে সক্ষম
C-390 কেবল পরিবহনের জন্য নয়, বরং বিভিন্ন ধরনের সামরিক ও মানবিক মিশনের জন্যও উপযুক্ত। এর মধ্যে রয়েছে আকাশ থেকে আকাশে জ্বালানি সরবরাহ, চিকিৎসা সরঞ্জাম সরিয়ে নেওয়া, অনুসন্ধান ও উদ্ধার, অগ্নিনির্বাপণ, মানবিক ত্রাণ ইত্যাদি মিশন। এটি অস্থায়ী এবং কাঁচা বিমানবন্দর থেকেও পরিচালনা করা যেতে পারে।
এর একটি বিশেষ সংস্করণ C-390 IVR (ISR – Intelligence, Surveillance, Reconnaissance) সমুদ্র পর্যবেক্ষণ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এতে সিন্থেটিক অ্যাপারচার রাডার, ইলেক্ট্রো-অপটিক্যাল সেন্সর এবং আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়েছে।
ভারতীয় প্রতিরক্ষা খাতে মিলবে একাধিক সুবিধা
ভারতীয় বায়ুসেনা পুরনো বিমানের পরিবর্তে একটি আধুনিক, দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য বিকল্প পাবে। এছাড়াও, লাদাখের মতো উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলেও এই বিমানের মোতায়েন সম্ভব। এর দ্রুত গতি এবং দীর্ঘ পাল্লা সীমান্ত অঞ্চলে সরবরাহ পৌঁছে দেওয়ার জন্য উপযোগী হবে।
মেক ইন ইন্ডিয়া এবং রপ্তানি হাব হওয়ার দিকে ভারতের পদক্ষেপ
Mahindra এবং Embraer-এর অংশীদারিত্বের অধীনে ভারতে C-390-এর নির্মাণ হবে। ভারতে এর চূড়ান্ত অ্যাসেম্বলি লাইন স্থাপন করা হবে। এর ফলে দেশে উচ্চ-মূল্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে।
একইসঙ্গে, ভারতকে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে এই বিমানের উৎপাদন ও সরবরাহ কেন্দ্র (Hub) হিসেবে গড়ে তোলারও পরিকল্পনা রয়েছে। ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম এবং ফিলিপাইনের মতো দেশগুলিতে এটি রপ্তানি করা যেতে পারে।
প্রযুক্তি হস্তান্তর ও স্বদেশীকরণে সহায়তা
এই চুক্তির সাথে ভারত প্রযুক্তি হস্তান্তরের সুবিধা পাবে। ভারত ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড (BEL) Embraer-এর সাথে রাডার, এভিয়োনিক্স এবং ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম নিয়ে কাজ করতে পারে। এর ফলে ভারতের অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি বৃদ্ধি পাবে।
C-390-এর খরচ প্রতি ইউনিটে প্রায় ১৪০ থেকে ১৬০ মিলিয়ন ডলার। এটি মার্কিন C-130J-এর চেয়ে সস্তা। এর পরিচালন খরচও কম, যা দীর্ঘমেয়াদে ভারতীয় বায়ুসেনার জন্য সাশ্রয়ী হবে।
ভারতের বিশ্বব্যাপী অবস্থান শক্তিশালী হবে
C-390-এ আকাশে জ্বালানি ভরার ক্ষমতা থাকার কারণে ভারতীয় বায়ুসেনার যুদ্ধবিমানগুলি দীর্ঘ দূরত্ব পর্যন্ত উড়তে পারবে। এই বিমান মানবিক সহায়তা এবং দুর্যোগ ত্রাণ মিশনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। এর ফলে ভারতের বিশ্বব্যাপী ভাবমূর্তি একটি দায়িত্বশীল এবং সক্ষম রাষ্ট্র হিসেবে আরও শক্তিশালী হবে।