কালো বিল না কালো দিন সংবিধান সংশোধনী নিয়ে বিস্ফোরক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

কালো বিল না কালো দিন সংবিধান সংশোধনী নিয়ে বিস্ফোরক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

লোকসভায় ঝড়ের সূচনা

বুধবার লোকসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যে ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিল পেশ করলেন, তাতেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোড়ন। বিরোধীদের দাবি, এই বিল ভারতের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে দুর্বল করার এক পরিকল্পিত প্রচেষ্টা। আর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একে সরাসরি গণতন্ত্রের মৃত্যুঘণ্টা বলে কটাক্ষ করলেন।

‘কালো দিন, কালো বিল’— মমতার আক্রমণ

নিজের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল থেকেই ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি লেখেন— “প্রস্তাবিত ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিল ভারতের গণতান্ত্রিক অধ্যায়কে শেষ করে সুপার-ইমারজেন্সির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এটি গণতন্ত্রের আত্মায় আঘাত।” মমতার দাবি, এই আইন কার্যকর হলে বিরোধী নেতাদের কণ্ঠরোধের পথ আরও প্রশস্ত হবে।

ত্রিশ দিনের হেফাজতেই পদচ্যুতি

বিলে উল্লেখ করা হয়েছে— প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী কিংবা মন্ত্রীদের কেউ গ্রেফতার হলে এবং টানা তিরিশ দিন হেফাজতে থাকলে, তাঁদের পদ ছাড়তে হবে। বিরোধীদের আশঙ্কা, কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত এজেন্সি ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জেরে বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের টার্গেট করাই এই আইনের মূল উদ্দেশ্য।

‘সুপার ইমারজেন্সি’র আশঙ্কা

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিলকে সরাসরি সুপার ইমারজেন্সির সঙ্গে তুলনা করেছেন। তাঁর অভিযোগ, ১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থার থেকেও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে বর্তমান সরকার। ভারতের বিচারব্যবস্থা থেকে শুরু করে নির্বাহী শাখা— সব কিছুর ওপরই নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার এক গোপন চক্রান্ত এর মধ্যে লুকিয়ে আছে।

গণতন্ত্রের শিকড়ে আঘাত

তৃণমূল নেত্রীর বক্তব্য, এই বিল দেশের ফেডারেল কাঠামোকে দুর্বল করবে। রাজ্য সরকারগুলির স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত হানবে। মমতার দাবি, সংবিধান কোনও এক ব্যক্তি বা এক সরকারের সম্পত্তি নয়— এটি জনগণের অধিকার, আর সেই অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে মোদি-শাহ জুটি।

বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন

মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, এই নতুন আইন কার্যকর হলে ভারতের আদালতগুলির স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হবে। বিচারব্যবস্থার ওপর হস্তক্ষেপ বাড়বে। এমনকি ন্যায়বিচার দেওয়ার ক্ষমতা থেকেও আদালতকে বঞ্চিত করার চেষ্টা হচ্ছে। তাঁর ভাষায়, “এটি নজিরবিহীন এবং ভারতের গণতান্ত্রিক কাঠামোর আত্মাকে ধ্বংস করার সমান।”

‘এক ব্যক্তি-এক সরকার’ নীতি বাস্তবায়ন?

তৃণমূল নেত্রীর অভিযোগ, এই বিলের একমাত্র উদ্দেশ্য দেশে ‘এক ব্যক্তি-এক সরকার-এক দল’ নীতি চাপিয়ে দেওয়া। ইডি-সিবিআই-এর হাতে একতরফা ক্ষমতা তুলে দিয়ে নির্বাচিত সরকারগুলির ওপর ইচ্ছেমতো হস্তক্ষেপ চালানোই এর আসল লক্ষ্য।

বিরোধী শিবিরে ক্ষোভের আগুন

শুধু তৃণমূল নয়, কংগ্রেস-সহ অন্যান্য বিরোধী দলও এই বিলের কড়া সমালোচনা করেছে। তাঁদের মতে, এটি গণতন্ত্রের ওপর এক গভীর আঘাত। বিরোধীরা আশঙ্কা করছেন, ভবিষ্যতে যে কোনও মুখ্যমন্ত্রী বা বিরোধী নেতা সামান্য অজুহাতে এজেন্সির মাধ্যমে গ্রেফতার হবেন এবং তিরিশ দিনের মধ্যে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করা হবে।

কেন্দ্রের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন

মমতার দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধনের নামে এক প্রকার নিপীড়নমূলক নীতি চাপিয়ে দিচ্ছে। বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরকে দুর্বল করতে এবং সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার খর্ব করতেই এই প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ।

গণতন্ত্র রক্ষার ডাক

সবশেষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন, যে কোনও মূল্যে এই বিল আটকাতে হবে। তাঁর দাবি, জনগণের অধিকার, আদালতের স্বাধীনতা, গণতন্ত্রের ভিত্তি— সব কিছুকে কেড়ে নেওয়ার এই প্রচেষ্টা দেশের মানুষ কোনওভাবেই মেনে নেবে না। মমতার আহ্বান, “গণতন্ত্রকে রক্ষা করতেই হবে, নইলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।”

Leave a comment