মমতার বার্তা গ্রাম থেকে শহর খেলাধুলার উন্নয়নে সর্বত্র নজর

মমতার বার্তা গ্রাম থেকে শহর খেলাধুলার উন্নয়নে সর্বত্র নজর

আজ ‘খেলা হবে দিবস’। এই বিশেষ দিনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেবল ক্রীড়াবিদদেরই নয়, গোটা রাজ্যের ক্রীড়াপ্রেমীদেরও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল ও মহামেডান স্পোর্টিংয়ের মতো ঐতিহ্যবাহী ক্লাব থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলের অচেনা ক্লাবগুলোকেও তিনি একসঙ্গে কুর্নিশ করেছেন। তাঁর দাবি, ২০১১ সালের পর থেকে বাংলার ক্রীড়াক্ষেত্র অভূতপূর্ব উন্নতির পথে এগিয়েছে।

জাতীয় স্তরে সাফল্য: ফুটবল থেকে আর্চারি সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে বাংলা

মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন, বাংলার খেলাধুলার মান এখন আর শুধু ফুটবলেই সীমাবদ্ধ নয়। জিমন্যাস্টিক্স, যোগব্যায়াম, আর্চারি, টেবিল টেনিস থেকে সাঁতার – প্রায় সব ক্ষেত্রেই রাজ্যের খেলোয়াড়রা জাতীয় স্তরে সাফল্যের ছাপ রেখে চলেছেন। সরকারি তথ্য বলছে, ২০১১ সালে যুব কল্যাণ ও ক্রীড়া দফতরের বাজেট যেখানে ছিল ১২৬ কোটি টাকা, ২০২৫-২৬ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৮৪০ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রায় ৬.৬ গুণ বৃদ্ধি ঘটেছে।

আধুনিক পরিকাঠামো: স্টেডিয়াম থেকে মিনি-ইন্ডোর, সর্বত্র উন্নয়নের ছাপ

বর্তমানে রাজ্যে রয়েছে ৫৮টি বড় স্টেডিয়াম, ৪২টি যুব হোস্টেল, ৫টি ইন্ডোর স্টেডিয়াম এবং ৭৯৫টি মিনি-ইন্ডোর স্টেডিয়াম। সঙ্গে রয়েছে ৪ হাজারেরও বেশি মাল্টি-জিম ও ৬টি আধুনিক সুইমিং পুল। পাশাপাশি ৪২৩টি খেলার মাঠ এবং ৮টি বিশেষায়িত স্পোর্টস অ্যাকাডেমিও চালু হয়েছে। ফুটবল, মহিলা ফুটবল, আর্চারি, ব্যাডমিন্টন, রাইফেল শ্যুটিং থেকে টেবিল টেনিস—প্রায় প্রতিটি জনপ্রিয় খেলাতেই আলাদা আলাদা প্রশিক্ষণকেন্দ্র চালু করেছে সরকার।

ঐতিহ্যকে সম্মান: তিন প্রধান ক্লাবকে ‘বঙ্গ বিভূষণ’ ও অনুদান

বাংলার ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অবদান রাখা তিন প্রধান ক্লাব মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল ও মহমেডান স্পোর্টিংকে রাজ্যের সর্বোচ্চ সম্মান ‘বঙ্গ বিভূষণ’ প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য দেওয়া হয়েছে ২৭ কোটিরও বেশি আর্থিক সহায়তা। মমতার দাবি, ক্রীড়াক্ষেত্রে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধন ঘটানোই তাঁর সরকারের লক্ষ্য।

খেলাশ্রী প্রকল্প: ৩৪ হাজার ক্লাবকে অনুদান

খেলাধুলাকে তৃণমূল স্তরে ছড়িয়ে দিতে রাজ্য সরকার চালু করেছে ‘খেলাশ্রী’ প্রকল্প। এই প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যেই ৩৪ হাজারেরও বেশি ক্লাবকে অনুদান দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ক্লাব পেয়েছে ৫ লক্ষ টাকা করে সহায়তা। এর ফলে রাজ্যের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও খেলাধুলার প্রতি উৎসাহ বেড়েছে এবং বহু নতুন প্রতিভা উঠে আসছে।

আর্থিক সহায়তা ও চাকরির সুযোগ: কোচিং ক্যাম্প থেকে সন্তোষ ট্রফি

খেলাধুলার প্রসার ঘটাতে ১,৩৫২টি কোচিং ক্যাম্পকে দেওয়া হয়েছে ১ লক্ষ টাকা করে অনুদান। এছাড়া ৩৪টি ক্রীড়া সংস্থা পেয়েছে বার্ষিক ৫ লক্ষ টাকা করে সহায়তা। সম্প্রতি সন্তোষ ট্রফি জয়ী বাংলার ফুটবল দলের ২১ জন খেলোয়াড়কে রাজ্য পুলিশে চাকরি দেওয়া হয়েছে, যা বাংলার খেলাধুলার ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত।

আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা: সুন্দরবন থেকে ডুয়ার্স, খেলায় যুক্ত সবাই

যুব সমাজকে খেলাধুলায় উৎসাহিত করতে ও পিছিয়ে পড়া এলাকাগুলিকে মূল স্রোতে আনার জন্য আঞ্চলিক প্রতিযোগিতারও আয়োজন করছে সরকার। সুন্দরবন কাপ, জঙ্গলমহল কাপ, হিমাল-তরাই-ডুয়ার্স কাপ এবং রাঙামাটি কাপ ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, এসব প্রতিযোগিতা শুধু খেলায় উৎসাহই দিচ্ছে না, সামাজিক ঐক্যও গড়ে তুলছে।

পুরস্কার ও পেনশন: সম্মান পাচ্ছেন ক্রীড়াবিদরা

রাজ্য সরকারের তরফে এখন পর্যন্ত ৪৬০ জন বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদকে দেওয়া হয়েছে ‘খেল সম্মান’, ‘বাংলার গৌরব’, ‘ক্রীড়াগুরু’ ও ‘জীবনকৃতি’ পুরস্কার। শুধু তাই নয়, ১,৫৮০ জন স্বনামধন্য ও অবসরপ্রাপ্ত ক্রীড়াবিদকে মাসিক পেনশনও প্রদান করা হচ্ছে। এর ফলে ক্রীড়াবিদরা তাঁদের অবদানের যথাযোগ্য মর্যাদা পাচ্ছেন।

অ্যাডভেঞ্চার ও সাহসিকতার পুরস্কার: এভারেস্টজয়ী থেকে ছন্দা গায়েন স্মৃতি

বাংলার এভারেস্টজয়ী পর্বতারোহীদের জন্য চালু হয়েছে রাধানাথ শিকদার-তেনজিং নোরগে অ্যাডভেঞ্চার অ্যাওয়ার্ড। পাশাপাশি প্রয়াত তরুণী পর্বতারোহী ছন্দা গায়েনের নামে চালু হয়েছে বিশেষ ‘সাহসিকতা পুরস্কার’। এর মাধ্যমে মহিলা পর্বতারোহীদের স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আরও সাহসী পদক্ষেপে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

যুব প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান: কম্পিউটার থেকে বৃত্তিমূলক শিক্ষা

খেলাধুলার পাশাপাশি যুব সমাজের কর্মসংস্থানেও জোর দিয়েছে সরকার। ১২টি যুব বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং ৯১২টি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু রয়েছে বর্তমানে। মমতার দাবি, খেলাধুলা ও কর্মসংস্থান—এই দুই ক্ষেত্রেই উন্নতির সুযোগ তৈরি করে দেওয়াই তাঁর সরকারের অন্যতম লক্ষ্য।

ভবিষ্যতের অঙ্গীকার: খেলাধুলায় আরও উন্নতির পথে বাংলা

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেষবার্তায় বলেছেন, “আগামীদিনেও বাংলায় খেলাধুলোর উন্নয়নে আমরা এভাবেই কাজ করে যাব।” তাঁর মতে, খেলাধুলা শুধু বিনোদন নয়, এটি সমাজকে ঐক্যবদ্ধ রাখার বড় শক্তি। তাই শহর থেকে গ্রাম—সর্বত্র খেলাধুলাকে জনপ্রিয় করতে তিনি বদ্ধপরিকর।

Leave a comment