ভারত বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা ডেটা সেন্টার হাব: কম খরচ ও সরকারি নীতি টানছে বিদেশী বিনিয়োগ

ভারত বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা ডেটা সেন্টার হাব: কম খরচ ও সরকারি নীতি টানছে বিদেশী বিনিয়োগ

ভারত ডেটা সেন্টার স্থাপনে বিশ্বের সবচেয়ে সাশ্রয়ী কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এখানে প্রতি ওয়াট খরচ মাত্র ৭ ডলার, যা আমেরিকা, জাপান এবং ব্রিটেনের তুলনায় অনেক কম। কম খরচ, রাজ্য সরকারের ছাড় এবং কঠোর ডেটা স্থানীয়করণ আইন বিদেশী সংস্থাগুলিকে আকৃষ্ট করছে। বর্তমানে মাত্র ৩% ডেটা সেন্টার ভারতে রয়েছে, তবে দ্রুত বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।

Worlds cheapest data center hub: ভারত এখন বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা ডেটা সেন্টার হাব হিসেবে উঠে আসছে, যেখানে এক ওয়াটের একটি ডেটা সেন্টার তৈরি করতে মাত্র ৭ ডলার খরচ হয়। কোটাক মিউচুয়াল ফান্ডের রিপোর্ট অনুযায়ী, জাপান, ব্রিটেন এবং আমেরিকায় এই খরচ ১০ থেকে ১৪ ডলার পর্যন্ত। চীন কিছুটা সস্তা হলেও, ভারতের শক্তিশালী অবস্থানকে রাজ্য সরকারের ভর্তুকি, বিদ্যুৎ ছাড় এবং ডেটা স্থানীয়করণ আইন আরও শক্তিশালী করছে। বর্তমানে দেশে বৈশ্বিক ডেটা সেন্টারের মাত্র ৩% রয়েছে, যেখানে ডেটা ব্যবহার ২০% এর বেশি, যার ফলে ভারত অদূর ভবিষ্যতে ডেটা হাব হওয়ার পথে রয়েছে।

সর্বনিম্ন খরচে তৈরি হচ্ছে ডেটা সেন্টার

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ভারতে এক ওয়াটের একটি ডেটা সেন্টার তৈরি করতে মাত্র ৭ ডলার খরচ হয়। এই খরচ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের তুলনায় কম। চীনে এই খরচ প্রতি ওয়াট ৬ ডলার, কিন্তু সেখানকার অন্যান্য পরিস্থিতি ততটা আকর্ষণীয় নয়। জাপানে এই খরচ প্রায় ১৪ ডলার প্রতি ওয়াট। ব্রিটেনে ১১ ডলার প্রতি ওয়াট এবং আমেরিকা, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় ১০ ডলার প্রতি ওয়াট পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের সস্তা বিকল্প বিদেশী সংস্থাগুলির জন্য একটি বড় সুযোগ হিসেবে সামনে এসেছে।

বাড়ছে হাইপারস্কেল ডেটা সেন্টার

ভারতে বৃহৎ আকারে ডেটা সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণকারী হাইপারস্কেল ডেটা সেন্টারের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। ২০১৯ সালে দেশে মাত্র ৫টি হাইপারস্কেল ডেটা সেন্টার ছিল। কিন্তু ২০২৪ সাল নাগাদ এই সংখ্যা বেড়ে ১৫ হয়েছে। এটি স্পষ্ট দেখায় যে ইন্টারনেট, মোবাইল অ্যাপ, অনলাইন পরিষেবা এবং ডিজিটাল পেমেন্টের ক্রমাগত বৃদ্ধি ডেটা সংরক্ষণের চাহিদা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। কলোকেশন স্পেস, অর্থাৎ ডেটা সংরক্ষণের জন্য ভাড়া নেওয়া জায়গা, গত পাঁচ বছরে চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

রাজ্যগুলির পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে উদার ছাড়

ডেটা সেন্টার তৈরিতে মেশিন ও বিল্ডিংয়ের পাশাপাশি বিদ্যুৎ, সংযোগ এবং জমির মতো সুবিধারও বড় প্রয়োজন হয়। এই ক্ষেত্রকে উৎসাহিত করার জন্য রাজ্য সরকারগুলিও আকর্ষণীয় নীতি নিয়ে এসেছে।

  • তামিলনাড়ু ২০২১ সালে একটি নীতি তৈরি করেছে, যার অধীনে কোম্পানিগুলিকে বিদ্যুতে ১০০% ভর্তুকি এবং দ্বৈত বিদ্যুৎ সরবরাহের বিকল্প দেওয়া হয়েছে।
  • উত্তর প্রদেশ ট্রান্সমিশন ফি এবং ওপেন অ্যাক্সেস বিদ্যুতে সম্পূর্ণ ছাড় দিয়েছে।
  • তেলেঙ্গানা ২০১৬ সালেই নীতি কার্যকর করেছিল, যেখানে নবায়ানবীল শক্তি এবং সস্তা জ্বালানি সরবরাহ করা হচ্ছে।
  • মহারাষ্ট্র ২০২৩ সালে তাদের নীতি পেশ করেছে, যেখানে বিদ্যুতের উপর আজীবন ছাড় এবং প্রথম পাঁচ বছরের জন্য প্রতি ইউনিট ১ টাকার ভর্তুকি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এই পদক্ষেপগুলির মাধ্যমে রাজ্যগুলি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করছে এবং সংস্থাগুলি দ্রুত ভারতে বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।

আইনও দিচ্ছে শক্তি

ভারতে ডেটা সেন্টারের বৃদ্ধির একটি বড় কারণ সরকারের কঠোর আইনও বটে।

  • ২০১৮ সালে আরবিআই নির্দেশ দিয়েছিল যে সমস্ত পেমেন্ট কোম্পানিকে ভারতীয় ডেটা ভারতেই রাখতে হবে।
  • ২০২৩ সালে সেবিও আর্থিক সংস্থাগুলির উপর একই নিয়ম প্রয়োগ করেছে।
  • ডিজিটাল পার্সোনাল ডেটা প্রোটেকশন অ্যাক্ট ২০২৩ এর অধীনে সরকার এখন প্রয়োজনে বলতে পারবে যে ভারতীয় ডেটা দেশের বাইরে যেন না যায়।

এই আইনগুলির কারণে সংস্থাগুলির কাছে ভারতেই ডেটা সেন্টার তৈরির বাধ্যবাধকতা এবং একই সাথে একটি বড় সুযোগ উভয়ই বিদ্যমান।

ভারতে বর্তমানে মাত্র ৩% ডেটা সেন্টার

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের মোট ডেটা সেন্টারের মাত্র ৩% ভারতে রয়েছে। কিন্তু বৈশ্বিক ডেটা ব্যবহারে ভারতের অংশ ২০% এর বেশি। এর অর্থ হল, ভারতে ডেটার চাহিদা অনেক বেশি, কিন্তু এখন পর্যন্ত এর বেশিরভাগ অংশ বিদেশেই সংরক্ষিত হয়ে আসছে। আগামী সময়ে এই পরিস্থিতি সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত হতে পারে।

কম খরচ, সরকারি সহায়তা এবং আইনের কঠোরতা ভারতকে ডেটা সেন্টার হাব হওয়ার পথে দাঁড় করিয়েছে। এই কারণেই ব্রিটেন এবং আমেরিকার মতো বড় দেশগুলিও এই ক্ষেত্রে ভারতের থেকে পিছিয়ে রয়েছে এবং আগামী বছরগুলিতে ভারত বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ ডেটা সেন্টার বাজার হয়ে উঠতে পারে।

Leave a comment