বর্ধমানের সভায় সরব মুখ্যমন্ত্রী
পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে দাঁড়িয়ে নির্বাচন কমিশনকে সরাসরি হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, কমিশন যেন বিজেপির ললিপপ হয়ে না যায়। এদিন জনসভা থেকে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন আপনাকে অনেক প্রণাম জানাই। কিন্তু দয়া করে বিজেপির হাতিয়ার হবেন না। তা হলে দেশের মানুষ ক্ষমা করবে না।
ভোটার কার্ড ইস্যুতে কেন্দ্রকে কড়া আক্রমণ
ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে আঙুল তুললেন। তাঁর অভিযোগ, বারবার বাংলার মানুষের পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। মমতার হুঁশিয়ারি, বাংলায় নাকি সব বাংলাদেশি থাকে। সব বাংলাদেশ হয়ে যাচ্ছে—এ কথা ওরা কোথা থেকে আনে? এটা নিছক অপপ্রচার।
১৯৪৭-এর ইতিহাস মনে করালেন মমতা
স্বাধীনতার সময় দেশভাগের প্রসঙ্গ টেনে বিজেপিকে একহাত নিলেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর কথায়, “১৯৪৭ সালে আপনারাই বাংলা ভাগ করেছিলেন। পাঞ্জাবেরও তো একদিক পাকিস্তান হয়েছে। কই, সেটা তো বলেন না! আমাদের পাশে বাংলাদেশ আছে, সেটা আপনারাই তৈরি করেছেন।” তিনি দাবি করেন, এভাবেই বাংলা নিয়ে বিজেপির অসৎ রাজনীতি বরদাস্ত করা হবে না।
বাংলা ভাষা নিয়ে কটাক্ষ সহ্য নয়
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, বিজেপি বাংলার ভাষা ও সংস্কৃতিকে লক্ষ্য করে আক্রমণ শানাচ্ছে। তিনি গর্জে ওঠেন, “বাংলা ভাষা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাষা। আমরা অন্যান্য ভাষাকে সম্মান করি, কিন্তু বাংলাকে অবজ্ঞা করা চলবে না। বাংলা দেখলেই ওরা জ্বলে।” তাঁর মতে, ভাষা নিয়ে রাজনীতি করে বাংলাকে খাটো করার চেষ্টা হচ্ছে।
পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা নিয়ে আক্রমণ
ভিনরাজ্যে বাঙালি শ্রমিকদের দুর্ব্যবহারের প্রসঙ্গও এদিন উত্থাপন করেন মমতা। তিনি বলেন, “বাংলার অবদান দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে রয়েছে। শ্রমিক থেকে শুরু করে বিদ্বজ্জন—সকলকে অবহেলা করবেন না। বাংলার ইতিহাস মনে রাখুন।” তাঁর দাবি, বাংলাকে হেয় করার চেষ্টা বিজেপির দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অঙ্গ।
১৯৭১ সালের চুক্তি টেনে স্মরণ করালেন মুখ্যমন্ত্রী
বাংলাদেশ যুদ্ধের সময়ের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটও তুলে ধরেন মমতা। তিনি বলেন, “১৯৭১ সালের ১লা মার্চ পর্যন্ত আপনারাই চুক্তি করেছিলেন, যারা আসবে তারা দেশের নাগরিক হিসেবে গণ্য হবে। আজ সেই ইতিহাস ভুলে গিয়ে বিজেপি মানুষের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে।”
বাংলার সম্মান রক্ষায় লড়াইয়ের ডাক
সভা থেকে মমতার সাফ বার্তা, বাংলার মানুষকে ভয় দেখিয়ে কখনও বশ মানানো যাবে না। তিনি ঘোষণা করেন, “বাংলার মাথা কখনও নত হবে না। বাংলা নতুন সুরে গান গাইবে। বাংলাকে সম্মান জানাতে হলে হাজার বার জয় বাংলা বলব।” তাঁর কণ্ঠে উঠে আসে প্রতিবাদের শ্লোগান।
বর্ধমানে মমতার হুঙ্কার ঘিরে উত্তেজনা
সভাস্থলে মমতার বক্তব্য ঘিরে ব্যাপক উচ্ছ্বাস তৈরি হয়। সমর্থকদের দাবি, বিজেপির বিভাজনের রাজনীতির জবাব দিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তৃতা। রাজনৈতিক মহলেও আলোচনায় উঠে এসেছে—বর্ধমানের এই বক্তব্য কি রাজ্যের ভোটের আগে বিজেপির বিরুদ্ধে জনমতকে আরও শক্তিশালী করবে?