বিধায়ক-সাংসদদের অর্থে গড়ে উঠবে 'জল স্বপ্ন' কেন্দ্রকে আক্রমণ করে বড় ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রী মমতার

বিধায়ক-সাংসদদের অর্থে গড়ে উঠবে 'জল স্বপ্ন' কেন্দ্রকে আক্রমণ করে বড় ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রী মমতার

কেন্দ্র দিচ্ছে না টাকা, নিজেরাই পথ খুঁজছে রাজ্য, বললেন মমতা

বীরভূমের ইলামবাজার থেকে মঙ্গলবার ‘সরকারি পরিষেবা প্রদান সভা’-য় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি অভিযোগ করেন— কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের কোনও প্রকল্পে আর্থিক বরাদ্দ দিচ্ছে না। তিনি জানান, আবাস, ১০০ দিনের কাজ, কৃষকবন্ধুর মতো একাধিক জনমুখী প্রকল্প রাজ্য নিজের কোষাগার থেকে চালিয়ে যাচ্ছে। এবার ‘জল স্বপ্ন’ প্রকল্পের ক্ষেত্রেও কেন্দ্রের অংশীদারিত্ব না থাকায়, রাজ্য বাধ্য হয়ে নতুন রাস্তায় হাঁটছে।

বিধায়কদের ১০ লক্ষ, সাংসদদের ১ কোটি—জল স্বপ্নে অর্থ দানের নির্দেশ

জনপ্রতিনিধিদের প্রতি সরাসরি বার্তা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের দলের বিধায়করা তাঁদের তহবিল থেকে ১০ লক্ষ টাকা করে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরকে দেবেন। সাংসদরা তাঁদের এলাকা উন্নয়ন তহবিল (MPLADS) থেকে ১ কোটি টাকা জেলাশাসকদের মাধ্যমে দেবেন। এভাবে রাজ্য সরকারের মতে ‘জুমলা সরকার’-এর ফেলে রাখা প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে নিজস্ব অর্থে। মমতা আরও বলেন, “আগে কেন্দ্র ৪০ শতাংশ দেওয়ার কথা বলেছিল, এখন সেটাও দেয় না। তাই আমরা নিজেরাই নিজেদের রাস্তা তৈরি করব।

জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েতের জন্যও এল নির্দিষ্ট নির্দেশ

‘জল স্বপ্ন’ প্রকল্প যাতে জেলায় জেলায় বাস্তবায়িত হয়, তার জন্য রাজ্যের সব জেলা পরিষদ এবং পঞ্চায়েত সমিতিগুলিকে প্রকল্প খরচের ৫ শতাংশ অর্থ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, যেখানে যেখানে কাজ অসম্পূর্ণ, সেখানেও অবিলম্বে কাজ শেষ করতে হবে। পাইপ পড়ে থাকলেও সয়েল টেস্ট, কানেকশন—সব কাজ সময়মতো সম্পন্ন করতে হবে। প্রকল্পের লক্ষ্য একটাই— রাজ্যের প্রতিটি বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া।

কৃষকদের জন্য বড় সুখবর, ফের চালু 'কৃষকবন্ধু' প্রকল্প

‘জল স্বপ্ন’-র পাশাপাশি এ দিন ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পে নতুন অর্থবরাদ্দের ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, ২০২৫ সালের খরিফ মরসুমের জন্য রাজ্যের ১ কোটি ৯ লক্ষ কৃষক ও বর্গাদারকে অর্থ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এই প্রকল্পে ১ একর বা তার বেশি জমির মালিকরা পান ১০ হাজার টাকা, আর কম জমির মালিক ও বর্গাদাররা পান ৪ হাজার টাকা। এবার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি পাঠানো হচ্ছে ২,৯৩০ কোটি টাকা। মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, রবি মরসুমেও একই হারে অর্থ সহায়তা চলবে।

বিজেপির 'জল স্বপ্ন' ছিল জুমলা, তীব্র আক্রমণ মমতার

লোকসভা ভোটের আগে কেন্দ্র যে 'জল স্বপ্ন' প্রকল্পকে বড় করে প্রচার করেছিল, সেই প্রসঙ্গ টেনে তীব্র আক্রমণ শানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কটাক্ষ, ভোটের আগে প্রচার করল ওরাই টাকা দিচ্ছে! অথচ প্রকৃত বাস্তব হল ৯০ শতাংশ খরচ আমাদের। তিনি আরও বলেন, এরকম জুমলা সরকারের মুখোশ খুলে দিতে হবে জনতার সামনে। যারা নিজেদের অবদান বলেই প্রকল্প চালাতে চায়, তারা একটা পাইপ পর্যন্ত বসাতে পারেনি।

জনপ্রতিনিধিদের অর্থেই এবার চলবে ‘জল স্বপ্ন’, কেন্দ্রকে পাশ কাটিয়ে পরিকল্পনায় গতি

জল সরবরাহকে সর্বজনগ্রাহ্য করতে রাজ্যের পদক্ষেপে এবার নতুন দিশা—জনপ্রতিনিধিরাই হয়ে উঠবেন ‘জল স্বপ্ন’ প্রকল্পের মূল পৃষ্ঠপোষক। মমতার এই কৌশল স্পষ্ট করে দিল, কেন্দ্রীয় সাহায্যের আশায় বসে না থেকে রাজ্য নিজের কাঁধেই দায়িত্ব তুলে নিতে চায়। 'জল স্বপ্ন' শুধু প্রকল্প নয়, এটি এখন রাজনীতির কৌশল এবং জনসেবার এক বাস্তব রূপরেখা।

Leave a comment