মমতার হুঁশিয়ারি ভোটার তালিকা ইস্যুতে না জেনে কোনও ফর্ম ফিলআপ করবেন না ফের কেন্দ্রকে তোপ মুখ্যমন্ত্রীর

মমতার হুঁশিয়ারি ভোটার তালিকা ইস্যুতে না জেনে কোনও ফর্ম ফিলআপ করবেন না ফের কেন্দ্রকে তোপ মুখ্যমন্ত্রীর

ভোটার তালিকায় নাম তোলার ছুতোয় চক্রান্ত! অভিযোগ তুললেন মমতা

ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক সভা থেকে সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপিকে নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, সংখ্যালঘু, তপশিলি জাতি, উপজাতিদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। এমনকি, সাধারণ শ্রেণির মানুষরাও এই ষড়যন্ত্রের শিকার হতে পারেন বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

‘না জেনে কোনও ফর্ম ফিলআপ করবেন না’, ভোটারদের সতর্ক করলেন মুখ্যমন্ত্রী

ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য কেন্দ্র যেসব ফর্ম বা তথাকথিত আধিকারিক প্রক্রিয়ার কথা বলছে, তা নিয়ে প্রবল সন্দেহ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। বললেন, “না জেনে কিছুতেই কোনও ফর্ম ফিলআপ করবেন না। তাতে নাম কেটে দেওয়া হবে। তারপর জোর করে এনআরসি করা হবে।” রাজ্যে ভোটারবিহীন করার ষড়যন্ত্র চলছে বলেও অভিযোগ তাঁর।

ভোটার কার্ড থাকলেই চলবে না, তালিকা দেখে নিশ্চিত হতে বললেন মমতা

মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, শুধুমাত্র EPIC কার্ড থাকলেই নাম ভোটার লিস্টে থাকবে, এই ধারণা ভুল। তিনি বলেন, “ভোটার কার্ড থাকলেই ভোট দেওয়া যাবে না—এখন এই নতুন ছক কষছে কেন্দ্র। তাই সবাইকে নতুন ভোটার তালিকা প্রকাশের পর তা ভালো করে দেখে নিতে হবে।” পুরনো তালিকার ওপর ভরসা করা চলবে না বলেও সতর্ক করেছেন তিনি।

২০০২ সালের পর জন্ম নিলেই লাগবে বাবা-মায়ের জন্ম প্রমাণপত্র, কী বলছে মমতা?

বিস্ফোরক দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী, বলেন, “২০০২ সালের পর যাঁরা জন্মেছেন, তাঁদের ভোটার তালিকায় নাম তুলতে গেলে বাবা-মায়ের জন্ম সার্টিফিকেট চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু যাঁরা এই নিয়ম চাপিয়ে দিচ্ছেন, তাঁদের নিজেদের বাবা-মায়ের সার্টিফিকেট নেই।” একে ‘দুই মুখো নীতি’ বলে আখ্যা দেন তৃণমূল নেত্রী।

এনআরসি ভয় দেখিয়ে বাংলার ভোটারদের বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্র, বলছেন মুখ্যমন্ত্রী

মমতার কথায়, কেন্দ্র সরকার নতুন তালিকা তৈরি করে, গোপনে এনআরসি চালু করতে চাইছে। উদ্দেশ্য একটাই—বাংলার মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া। ঝাড়গ্রামের সভায় দাঁড়িয়ে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, বাংলার মাটি থেকে কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নিতে দেব না। ভোটারদের তালিকা থেকে নাম বাদ গেলেই তারা ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেবে—এই ভয় দেখানো হচ্ছে।

পরিযায়ী শ্রমিক, মতুয়াদের বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ মমতার

ফের পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রসঙ্গ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “অসম, গুরগাঁওয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে রেখে দেওয়া হচ্ছে বাংলার শ্রমিকদের। এমনকী মুম্বইয়ে শুধু বাংলায় কথা বলার অপরাধে একজনকে খুন করা হয়েছে। কুচিয়ে কুচিয়ে কাটা হয়েছে!” এই বর্বরতার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার বার্তা দেন তিনি।

“বাংলায় কথা বলার অপরাধে খুন!”—মুম্বইয়ের ঘটনার কড়া প্রতিবাদ মুখ্যমন্ত্রীর

মমতা বলেন, বাংলায় কথা বলার জন্য যদি কাউকে খুন হতে হয়, তাহলে তো প্রতিবাদ করতেই হবে। নিজের মাতৃভাষায় কথা বলা কখনোই অপরাধ হতে পারে না। তিনি মতুয়া সমাজ এবং বাংলাদেশ থেকে আসা নাগরিকদের পাশে থাকার বার্তা দেন। বলেন, “যাঁরা আইন মেনে এসেছেন, তাঁরা ভারতের নাগরিক। কেন্দ্র যদি অবৈধদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়, রাজ্যের তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু মিথ্যে ছুতোয় নাগরিকদের হেনস্থা মানা যাবে না।

চাপে পড়া সরকারি কর্মীদের পাশে থাকার আশ্বাস রাজ্যের

নির্বাচনের অনেক আগেই কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের অভিযোগও তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “অফিসারদের ভয় দেখানো হচ্ছে। কেন? সরকার কিন্তু সরকারি কর্মীদের পাশে আছে। শিক্ষকদের জন্য পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ এবং চাকরির ব্যবস্থা করার কথাও বলেন তিনি। বুঝিয়ে দেন—ভোট হোক বা চাকরি, রাজ্য সরকার সক্রিয়।

অল্পবয়সে মেয়েদের বিয়ে নয়, মেয়েদের শিক্ষার পক্ষে সওয়াল মমতার

ঝাড়গ্রাম ও জঙ্গলমহলের অভিভাবকদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, “মেয়েরা আজ ছেলেদের মতোই পারদর্শী। অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে তাঁদের ভবিষ্যৎ বন্ধ করবেন না। পড়াশোনা শেখান, তাদের পাখা ছড়াতে দিন।” মেয়েদের ক্ষমতায়নের পক্ষেই সরব মুখ্যমন্ত্রী।

ভোটের আগে বৃহৎ বার্তা, নাগরিকদের সচেতন থাকার আহ্বান

এই ভাষণের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী ভোটের আগে স্পষ্ট বার্তা দিলেন—নাগরিকদের সচেতন হতে হবে। চোখ-কান খোলা রেখে তবেই ফর্ম ফিলআপ করবেন। কেন্দ্রের ওপর আর ভরসা রাখা যাবে না। গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে তাঁর কণ্ঠে ফের ঝাঁঝালো প্রতিবাদ, আর সাধারণ মানুষকে পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান।

Leave a comment