মেধা পাটকরের মানহানির মামলায় সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ নয়, বহাল থাকছে সাজা

মেধা পাটকরের মানহানির মামলায় সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ নয়, বহাল থাকছে সাজা

সুপ্রিম কোর্ট ২৫ বছর আগে দিল্লির উপরাজ্যপাল ভি কে সাক্সেনা কর্তৃক দায়ের করা মানহানির মামলায় সমাজকর্মী মেধা পাটকরকে কোনো প্রকার ছাড় দেয়নি। আদালত মেধা পাটকরের দোষী সাব্যস্তকরণ এবং সাজা বহাল রেখে দিল্লি হাইকোর্টের নির্দেশে হস্তক্ষেপ করতে অস্বীকার করেছে।

নয়াদিল্লি: সুপ্রিম কোর্ট নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের প্রধান নেত্রী মেধা পাটকরের বিরুদ্ধে ২৪ নভেম্বর ২০০০ সালে দায়ের হওয়া মানহানির মামলায় তাঁর দোষী সাব্যস্তকরণ এবং সাজা বহাল রেখেছে। এই মামলাটি দিল্লির তৎকালীন উপরাজ্যপাল ভি কে সাক্সেনা দায়ের করেছিলেন, যিনি সেই সময় গুজরাটের একটি বেসরকারি সংস্থার প্রধান ছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট দিল্লি হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে পাটকরকে কোনো প্রকার ছাড় দেয়নি, তবে জরিমানার নির্দেশ বাতিল করেছে।

মানহানির অভিযোগ এবং সুপ্রিম কোর্টের রায়

এই মামলার শুরু ২০০০ সালে, যখন ভি কে সাক্সেনা মেধা পাটকরের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করেন। অভিযোগ ছিল যে পাটকর তাঁর বিরুদ্ধে এমন সব মন্তব্য করেছেন, যা শুধুমাত্র মানহানিকরই নয়, বরং তাঁর সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি করার উদ্দেশ্যে প্রণোদিত। পাটকর অভিযোগ করেছিলেন যে সাক্সেনা গুজরাটের সম্পদ বিদেশি স্বার্থের কাছে বন্ধক রাখছেন, যা আদালত তাঁর বিরুদ্ধে একটি গুরুতর আক্রমণ হিসেবে মনে করেছে।

ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ১ জুলাই ২০২৪ তারিখে মেধা পাটকরকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০০ (মানহানি) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে পাঁচ মাসের কারাদণ্ড এবং ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা ধার্য করে। এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে দায়রা আদালতে আপিল করা হলে ২ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে পাটকরের আবেদন খারিজ হয়ে যায় এবং দোষী সাব্যস্তকরণের রায় বহাল থাকে।

সাজা স্থগিতকরণ এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশ

দায়রা আদালত ৮ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে পাটকরকে ২৫,০০০ টাকার বন্ডে ভালো আচরণের শর্তে প্রবেশন মঞ্জুর করে মুক্তি দেয়। এর সাথে তাঁর উপর এক লক্ষ টাকা জরিমানা জমা দেওয়ার শর্তও আরোপ করা হয়। এরপর পাটকর দিল্লি হাইকোর্টে এই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করেন। দিল্লি হাইকোর্ট তদন্তের পর নিম্ন আদালতের আদেশে কোনো প্রকার ত্রুটি খুঁজে পায়নি। আদালত জানায় যে পাটকরের দোষী সাব্যস্তকরণ এবং সাজার ক্ষেত্রে যথাযথ আইনি বিবেচনা করা হয়েছে।

তবে, উচ্চ আদালত প্রবেশনের শর্তে সংশোধন করে স্পষ্ট করে যে পাটকরকে প্রতি তিন মাসে নিম্ন আদালতে হাজিরা দিতে হবে, যেখানে তিনি শারীরিকভাবে, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অথবা তাঁর আইনজীবীর মাধ্যমে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন।

সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায়

এই মামলায় বিচারপতি এম এম সুন্দরেশ এবং বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিং-এর বেঞ্চ দিল্লি হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখে মেধা পাটকরের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে যে তারা এই মামলায় হাইকোর্টের রায়ে হস্তক্ষেপ করবে না। তবে, আদালত পাটকরের আইনজীবীর করা জরিমানার আবেদন মঞ্জুর করে জরিমানা বাতিল করেছে। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের ফলে পাটকরের দোষী সাব্যস্তকরণ এবং সাজা বহাল থাকলেও জরিমানা মকুব হওয়ায় তাঁর আর্থিক চাপ কিছুটা কমেছে।

এই মামলাটি ভারতে মানহানি আইনের ব্যাখ্যা এবং সমাজকর্মীদের বিরুদ্ধে আইনি চ্যালেঞ্জের একটি উদাহরণ। মেধা পাটকরের মতো সমাজকর্মীরা নর্মদা বাঁধের বিরোধিতায় দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয়, এবং তাঁর এই মামলা ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার সামনে এই প্রশ্ন তোলে যে সামাজিক সমালোচনা এবং মানহানির মধ্যেকার সীমারেখা কী হওয়া উচিত।

Leave a comment