কর্মচারী ছাঁটাই নিয়ে মুখ খুললেন মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নাদেলা

কর্মচারী ছাঁটাই নিয়ে মুখ খুললেন মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নাদেলা

মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নাদেলা অবশেষে সেই বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুললেন, যা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। কোম্পানি কর্তৃক ৯ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের পরে কর্মচারী এবং শিল্প মহলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। এখন নাদেলা এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন।

একটি অভ্যন্তরীণ বার্তায় নাদেলা বলেছেন যে, এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া তাঁর জন্য অত্যন্ত কঠিন। তিনি বলেন, যারা কোম্পানি ছেড়ে যাচ্ছেন, তারা কেবল কর্মচারী নন, বরং তাঁর সাথে কাজ করা সহযোগী, টিমের সদস্য এবং বন্ধুও ছিলেন।

নাদেলা বলেছেন যে, এই সিদ্ধান্তগুলি আবেগগতভাবে তাঁকেও প্রভাবিত করছে, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে কোম্পানির জন্য এই পরিবর্তন জরুরি ছিল।

কর্মচারীদের মধ্যে উদ্বেগ, ছাঁটাই নিয়ে আগে কোনো ব্যাখ্যা আসেনি

এই বছরের জুনের শুরুতে মাইক্রোসফট প্রায় ৯০০০ কর্মীকে ছাঁটাই করেছে। সেই সময় এই ছাঁটাই হঠাৎ এবং নীরবে করা হয়েছিল। কোম্পানির পক্ষ থেকে কোনো বিস্তারিত বিবৃতি আসেনি, এমনকি কর্মীদের কোনো প্রকার পূর্ব সূচনাও দেওয়া হয়নি।

এখন যখন সত্য নাদেলা এই বিষয়ে কথা বলতে শুরু করেছেন, তখন অনেক প্রশ্নের উত্তরও পাওয়া যাচ্ছে। তিনি স্বীকার করেছেন যে, এই প্রক্রিয়া সহজ ছিল না। তবে তিনি এটাও স্পষ্ট করেননি যে, এটাই শেষ ছাঁটাই ছিল নাকি ভবিষ্যতে আরও कटौती হতে পারে।

তবে, নাদেলা অবশ্যই বলেছেন যে, কর্মচারীদের মোট সংখ্যায় খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি এবং কোম্পানির অগ্রগতিতে এর কোনো প্রভাব পড়েনি।

এআই এবং সাইবার সুরক্ষা অগ্রাধিকার

নাদেলা তাঁর বার্তায় কোম্পানির বর্তমান অগ্রাধিকারের ওপরও আলোকপাত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন যে, এই মুহূর্তে মাইক্রোসফটের পুরো মনোযোগ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রের ওপর রয়েছে – নিরাপত্তা, গুণমান এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অর্থাৎ এআই।

তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সাইবার ঘটনা এবং ডেটা সুরক্ষা নিয়ে ওঠা প্রশ্নের পরে নিরাপত্তাকে কোম্পানির প্রথম অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, প্রোডাক্টের গুণগত মান এবং নির্ভরযোগ্যতার ওপর বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।

নাদেলা বলেছেন যে, মাইক্রোসফটের পরিষেবা বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষ এবং কোম্পানির জন্য অত্যন্ত জরুরি। এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা এবং আস্থা বজায় রাখা তাঁদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।

এআই-এর দিকে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে মাইক্রোসফট

ছাঁটাইয়ের এই সিদ্ধান্তের পেছনে একটি বড় কারণ মাইক্রোসফটের এআই কেন্দ্রিক কৌশলও বলে মনে করা হচ্ছে। কোম্পানি গত কিছু সময়ে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ক্ষেত্রে বড় বিনিয়োগ করেছে।

তথ্য অনুযায়ী, মাইক্রোসফট এআই ইনফ্রাস্ট্রাকচারে ৮০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে। একই সময়ে, কোম্পানির শেয়ার প্রথমবারের মতো ৫০০ মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যা এর ঐতিহাসিক স্তর।

গত তিন ত্রৈমাসিকে মাইক্রোসফটের নেট আয় প্রায় ৭৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট যে, কোম্পানির আর্থিক অবস্থা মজবুত রয়েছে, কিন্তু তবুও অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের প্রয়োজন অনুভূত হচ্ছে।

খারাপ পারফরম্যান্স এবং কাঠামোগত পরিবর্তনের কারণে চাকরি গেছে

ছাঁটাই সংক্রান্ত আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, রিপোর্ট অনুসারে, প্রায় ২ হাজার কর্মীকে খারাপ পারফরম্যান্সের কারণে বরখাস্ত করা হয়েছে। বাকি ৭ হাজারের ওপর এআই এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক বিভাগে পুনর্গঠনের প্রভাব পড়েছে।

এই ছাঁটাইয়ের প্রভাব বিশেষভাবে প্রোডাক্ট, রিসার্চ এবং সাপোর্ট টিমের ওপর দেখা গেছে। কিছু বিভাগকে সম্পূর্ণরূপে নতুন করে তৈরি করা হয়েছে যাতে কোম্পানি ভবিষ্যতে আরও বেশি चुस्त, নিরাপদ এবং প্রযুক্তিগতভাবে সক্ষম হতে পারে।

আসন্ন ত্রৈমাসিকের ফলাফলের দিকে সবার নজর

মাইক্রোসফট এখন ৩০ জুলাই তাদের ফিনান্সিয়াল ইয়ার ২০২৫-এর চতুর্থ ত্রৈমাসিকের ফলাফল ঘোষণা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে এটা দেখা दिलचस्प হবে যে, এই ছাঁটাই এবং কৌশলগত পরিবর্তনগুলির কোম্পানির পারফরম্যান্সের ওপর কী প্রভাব পড়েছে।

কোম্পানির পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে যে, এআই ভিত্তিক বিনিয়োগ এবং অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন ভবিষ্যতের বৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করবে। যদিও, আপাতত কর্মচারী এবং বাজার উভয়েরই নজর কোম্পানির পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে রয়েছে।

Leave a comment