মুম্বাইয়ে হানিট্র্যাপ চক্রের পর্দাফাঁস: ব্যবসায়ী ফাঁদে, গ্রেপ্তার ৩ মহিলা

মুম্বাইয়ে হানিট্র্যাপ চক্রের পর্দাফাঁস: ব্যবসায়ী ফাঁদে, গ্রেপ্তার ৩ মহিলা

মুম্বাইয়ে হানিট্র্যাপ চক্রের পর্দাফাঁস, ভিপি রোড পুলিশ তিন মহিলাকে গ্রেপ্তার করেছে। ব্যবসায়ীকে হোটেলে ডেকে ৩৫,০০০ টাকা আদায়ের ঘটনা সামনে এসেছে। চতুর্থ মহিলা অভিযুক্ত এখনও পলাতক।

মুম্বাই: দক্ষিণ এলাকায় সক্রিয় হানিট্র্যাপ চক্রের পর্দাফাঁস হয়েছে। ভিপি রোড পুলিশ এই চক্রে জড়িত তিন মহিলাকে গ্রেপ্তার করেছে, যদিও চতুর্থ মহিলা এখনও পলাতক। পুলিশ জানিয়েছে যে এই চক্র সুসংগঠিতভাবে ব্যবসায়ী এবং অন্যান্যদের জালে ফেলে তাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক অর্থ আদায় করত। ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে এবং পলাতক অভিযুক্তের খোঁজ চলছে।

ব্যবসায়ীর সাথে প্রতারণার ঘটনা 

পুলিশের মতে, সাম্প্রতিক ঘটনায় ৪৬ বছর বয়সী এক ব্যবসায়ী এই চক্রের শিকার হয়েছেন। ভুক্তভোগী জলগাঁওয়ের বাসিন্দা এবং কাজের সূত্রে মুম্বাইয়ে আসা-যাওয়া করেন। তিনি ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ টার্মিনাস (সিএসএমটি)-এ পৌঁছান, যেখানে স্টেশনের বাইরে এক মহিলা তার সাথে যোগাযোগ করেন এবং ৫০০ টাকায় যৌন পরিষেবা দেওয়ার প্রস্তাব দেন।

মহিলাটি ব্যবসায়ীকে ট্যাক্সিতে বসিয়ে গিরগাঁও নিয়ে যান এবং ভারত ভবন হোটেলের কাছে একটি ভবনের একটি ঘরে ডাকেন। সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত অন্য এক মহিলা ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলতে শুরু করেন এবং হঠাৎ করেই অশ্লীল ভিডিও রেকর্ড করার অভিযোগ তোলেন। তখনই ঘরে আরও তিন মহিলা আসেন এবং ব্যবসায়ীকে ভয় দেখিয়ে তার মোবাইল তথ্য ব্যবহার করে ২২,০০০ টাকা অনলাইনে ট্রান্সফার করিয়ে নেন।

চক্রটি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নগদ ও অনলাইনে টাকা আদায় করে

ঘটনার সময় চক্রটি ব্যবসায়ীর মানিব্যাগ থেকে ১৩,০০০ টাকা নগদও জোর করে নিয়ে নেয়। অভিযুক্ত মহিলারা তাকে জনসম্মুখে অপমান করার হুমকি দিয়ে মানসিকভাবে চাপ সৃষ্টি করে। ভুক্তভোগী প্রথমে ভয়ে চুপচাপ ছিলেন, কিন্তু পরে ৩০ সেপ্টেম্বর ভিপি রোড পুলিশ স্টেশনে অভিযোগ দায়ের করেন।

পুলিশ তদন্তে অনলাইন স্থানান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে এবং সিসিটিভি ফুটেজও সংগ্রহ করেছে। কর্মকর্তারা বলছেন যে চক্রটির পদ্ধতি অত্যন্ত সুসংগঠিত ছিল এবং তারা ব্যবসায়ীকে ভয় দেখিয়ে পুরো টাকা জোর করে আদায় করেছে। পুলিশ এখন এটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে যে চক্রটি আরও কতজনকে নিশানা করেছে।

পুলিশের অভিযান ও গ্রেপ্তার

পুলিশ তিন অভিযুক্তকে মাজিদা নূর সরদার গাজী, রূপা বিশ্বনাথ দাস এবং নাসিমা জামান শেখ হিসাবে চিহ্নিত করেছে। তিন জনকেই আদালতে পেশ করা হয়, যেখানে তাদের দুই দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়। চতুর্থ মহিলা অভিযুক্ত এখনও পলাতক এবং তার খোঁজ তীব্র করা হয়েছে।

পুলিশ মনে করছে যে এই চক্র আরও অনেক মানুষকে একইভাবে নিশানা করে থাকতে পারে, কিন্তু সামাজিক কলঙ্ক এবং ভয়ের কারণে অনেক ভুক্তভোগী সামনে আসেননি। তদন্তে এটিও দেখা হচ্ছে যে এই মহিলারা কোনও বড় চাঁদাবাজি সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত কিনা।

পুলিশের সতর্কতা ও পরবর্তী পদক্ষেপ

ভিপি রোড পুলিশ মামলার গুরুত্ব বিবেচনা করে একটি দল গঠন করেছে। কর্মকর্তারা বলেছেন যে চক্রের অন্যান্য সদস্যদের চিহ্নিতকরণ এবং গ্রেপ্তারের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ আরও সতর্ক করেছে যে কোনও ধরনের জোরপূর্বক অর্থ আদায় এবং হানিট্র্যাপের মতো কার্যকলাপ বরদাস্ত করা হবে না।

কর্মকর্তারা আরও বলছেন যে ব্যবসায়ী এবং অন্যান্য ব্যক্তিরা ভয়ের কারণে এই ধরনের ঘটনা প্রায়শই রিপোর্ট করেন না। পুলিশ আবেদন করেছে যে এই ধরনের ক্ষেত্রে অবিলম্বে অভিযোগ দায়ের করা হোক, যাতে অপরাধীদের দ্রুত শাস্তি দেওয়া যায় এবং চক্রের পুরো নেটওয়ার্ক ফাঁস করা যায়।

Leave a comment