নবরাত্রিতে ‘ভোর ভই দিন চড় গয়া মেরি অম্বে’ ভজনের আধ্যাত্মিক গুরুত্ব ও প্রভাব

নবরাত্রিতে ‘ভোর ভই দিন চড় গয়া মেরি অম্বে’ ভজনের আধ্যাত্মিক গুরুত্ব ও প্রভাব
সর্বশেষ আপডেট: 1 ঘণ্টা আগে

নবরাত্রির সময় মা দুর্গার ভক্তিতে গাওয়া ভজন ‘ভোর ভই দিন চড় গয়া মেরি অম্বে’ সারা দেশে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এই ভজনটি মন্দির এবং বাড়িতে সকালে প্রতিধ্বনিত হয় এবং ভক্তদের ভক্তি, শান্তি ও ইতিবাচক শক্তিতে ভরিয়ে তোলে।

নবরাত্রি ভজন: সারা দেশে শারদীয় নবরাত্রির সময় মা দুর্গার নয়টি রূপের পূজা ও ব্রত পালনের পাশাপাশি ভজন গাওয়ার ঐতিহ্যও চলে আসছে। এরই অংশ হিসেবে ‘ভোর ভই দিন চড় গয়া মেরি অম্বে’ ভজনটি মন্দির এবং বাড়িতে ভক্তদের আস্থার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, এই ভজন পাঠ ও গানে ইতিবাচকতা, মানসিক শান্তি এবং আত্মবিশ্বাস লাভ হয়।

নবরাত্রি ও ভজনের গুরুত্ব

নবরাত্রি হিন্দু ধর্মে শক্তি উপাসনার এক বিশেষ সময়। এই উৎসব বছরে দুবার আসে—চৈত্র নবরাত্রি এবং শারদীয় নবরাত্রি। এই নয় দিনে মা দুর্গার বিভিন্ন রূপের পূজা ও ব্রত করা হয়। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, এই সময়ে দেবীর ভজন, আরতি এবং মন্ত্র গাওয়ার মাধ্যমে সাধকের মনে ইতিবাচক শক্তি, শান্তি এবং আত্মবিশ্বাস সঞ্চারিত হয়।

ভোর ভই দিন চড় গয়া মেরি অম্বে কেন বিশেষ

ভক্তদের মধ্যে ভোর ভই দিন চড় গয়া মেরি অম্বে ভজনটির একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। এই ভজনটি সকালে গাওয়া হয় এবং মা অম্বার দরবারের মহিমা বর্ণনা করে। এর সুর সহজ ও প্রভাবশালী, যা সব বয়সের মানুষকে আকর্ষণ করে। মন্দির, বাড়ি এবং ভজন সন্ধ্যায় এই ভজনটি খুব শোনা যায়।

ভজনের বার্তা

ভজনের কথাগুলো মা অম্বার প্রতি অবিচল আস্থা ও ভক্তিকে তুলে ধরে। এতে মায়ের দরবারের আরতি, ভক্তদের অনুভূতি এবং তাদের দ্বারা করা পূজার দৃশ্য ফুটে ওঠে। এই ভজন ভক্তদের মনে করিয়ে দেয় যে মায়ের আরাধনা কেবল আচার-অনুষ্ঠান নয়, বরং আত্মিক শান্তি ও ইতিবাচকতার এক গভীর অনুভব।

ভজনের কথা ও ভাব

ভোর ভই দিন চড় গয়া মেরি অম্বে ভজনে মা অম্বার জন্য বিভিন্ন উপমা ব্যবহার করা হয়েছে—দরবারা ওয়ালি, পাহাড়া ওয়ালি, পিন্ডি রানী, ত্রিকুটা রানী। ভজনে আরতি, দীপ এবং পূজার দৃশ্য গভীর আবেগ দিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। এটি কেবল মায়ের মহিমার গুণগান নয়, বরং ভক্তদের মনে বিশ্বাসকেও দৃঢ় করে।

মন্দিরে প্রতিধ্বনিত ভজন

নবরাত্রির সময় সারা দেশের মন্দিরগুলিতে এই ভজন সকালে প্রতিধ্বনিত হয়। বিশেষ করে শক্তিপীঠ এবং মায়ের প্রধান মন্দিরগুলিতে ভোর হতেই ভক্তরা মায়ের আরতি করেন এবং এই ভজন দিয়েই দিনের শুরু করেন। এই ঐতিহ্য কেবল ভক্তি নয়, এটি একটি সম্মিলিত অভিজ্ঞতা, যেখানে বহু ভক্ত একসঙ্গে বসে মায়ের মহিমা গান।

বাড়িতেও জনপ্রিয়

মন্দির ছাড়াও এই ভজন বাড়িতেও খুব গাওয়া এবং শোনা হয়। অনেক পরিবার নবরাত্রির সময় প্রতিদিন সকালে এই ভজন দিয়ে দিনের শুরু করেন। ইউটিউব এবং মিউজিক প্ল্যাটফর্মগুলিতেও এই ভজনের অনেক সংস্করণ পাওয়া যায়, যেখানে ঐতিহ্যবাহী এবং আধুনিক সঙ্গীতের মিশ্রণে এটিকে নতুন রূপে উপস্থাপন করা হয়েছে।

ইতিবাচকতা ও শক্তি

ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, নবরাত্রির সময় মাতা রানীর ভজন গান এবং শুনলে ঘর-পরিবারে সুখ-সমৃদ্ধি ও ইতিবাচকতা আসে। “ভোর ভই দিন চড় গয়া মেরি অম্বে” এর মতো ভজনগুলিকে ভক্তি, শান্তি এবং আত্মবিশ্বাসের উৎস হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এই ভজন কেবল ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে না, বরং মানসিক ভারসাম্য এবং বিশ্বাসকেও সুদৃঢ় করে।

ভজন ও সম্মিলিত ভক্তি

নবরাত্রির দিনগুলিতে অনেক জায়গায় সম্মিলিত ভজন সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়। লোকেরা মন্দির বা সামাজিক স্থানে একত্রিত হয়ে মা দুর্গার গান গায়। এই ধরনের আয়োজনে ভোর ভই দিন চড় গয়া মেরি অম্বে প্রায়শই প্রথম বা প্রধান ভজন হয়। এটি মানুষকে একত্রিত করতে এবং ভক্তির সম্মিলিত অভিজ্ঞতা প্রদান করতে সাহায্য করে।

ধর্মীয় গুরুদের মতামত

ধর্মীয় আচার্যদের মতে, মা দুর্গার ভজন পাঠ বা গানে মনের অশান্ত শক্তি দূর হয় এবং সাধক আত্মিক সন্তুষ্টি লাভ করেন। “ভোর ভই দিন চড় গয়া মেরি অম্বে” এর মতো ভজনগুলি কেবল ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখে না, বরং নতুন প্রজন্মকেও ভক্তির দিকে অনুপ্রাণিত করে।

সোশ্যাল মিডিয়াতেও জনপ্রিয়

আজকের ডিজিটাল যুগে এই ভজন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিতেও প্রচুর শেয়ার করা হয়। নবরাত্রির সময় ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক এবং ইউটিউবে এই ভজনের ভিডিও এবং রিলগুলি ভাইরাল হতে থাকে। এর ফলে কেবল এর প্রচার বাড়েনি, বরং নতুন শ্রোতাদের কাছেও এর পৌঁছন সম্ভব হয়েছে।

লোকসুর দ্বারা প্রভাবিত সঙ্গীত

এই ভজনটির বিশেষত্ব হলো এর লোকসুর দ্বারা প্রভাবিত সঙ্গীত। এতে ঢোলক, হারমোনিয়াম এবং মंजीরার মতো বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হয়। এই কারণেই যারা এটি গান এবং শোনেন তারা তাৎক্ষণিক সংযোগ অনুভব করেন। অনেক গায়ক এই ভজনটিকে তাদের নিজস্ব কণ্ঠে রেকর্ড করেছেন, যার ফলে এটি বিভিন্ন শৈলীতে উপলব্ধ।

আবেগপ্রবণ সংযোগ

অনেক ভক্তের মতে, এই ভজনটি শুনতেই তাদের মনে মা দুর্গার দরবারের দৃশ্য ভেসে ওঠে। ভোরের সময় গাওয়া এই ভজন দিনের শুরুটাকে বিশেষ করে তোলে। অনেক ভক্ত এটিকে ধ্যান বা যোগের আগে শুনতে পছন্দ করেন, যাতে তাদের মন স্থির হতে পারে।

বাচ্চা ও তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ

আকর্ষণীয় বিষয় হলো, এই ভজনটি বাচ্চা এবং তরুণরাও গাইতে পছন্দ করে। এর সুর সহজ এবং কথাগুলো মনে রাখা সহজ। অনেক স্কুল এবং ধর্মীয় সংস্থা নবরাত্রির সময় বাচ্চাদের এই ভজনটি শেখায়। এর মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত এবং ভক্তিগানের ঐতিহ্য নতুন প্রজন্ম পর্যন্ত পৌঁছায়।

Leave a comment