নেপালের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী পদে কুল মান ঘিসিংয়ের নাম আলোচিত, সুশীলা কার্কির দাবি দুর্বল

নেপালের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী পদে কুল মান ঘিসিংয়ের নাম আলোচিত, সুশীলা কার্কির দাবি দুর্বল

নেপালে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী পদের দৌড়ে নতুন মোড়। সুশীলা কার্কির জায়গায় প্রকৌশলী কুল মান ঘিসিংয়ের নাম সামনে আসছে। বিক্ষোভকারীরা তাঁকে 'দেশপ্রেমিক ও জনগণের প্রিয়' আখ্যা দিয়ে সমর্থন জানিয়েছেন।

Nepal: গত কয়েকদিন ধরে নেপালে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী খোঁজা নিয়ে আলোচনা চলছে। প্রাথমিকভাবে সুশীলা কার্কির নামই সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হচ্ছিল। নেপালের সুপ্রিম কোর্টের প্রথম মহিলা প্রধান বিচারপতি হিসেবে তাঁর কঠোর ও সৎ ভাবমূর্তি তাঁকে একজন শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলেছিল। কিন্তু আলোচনা যত এগিয়েছে, সংবিধান ও তাঁর বয়স নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

সংবিধান অনুযায়ী, প্রাক্তন বিচারকরা প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন না। এছাড়াও, ৭৩ বছর বয়সে প্রশ্ন উঠেছে যে তিনি বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের দায়িত্ব নিতে পারবেন কিনা। আর এই কারণেই ধীরে ধীরে তাঁর নাম দুর্বল হতে থাকে।

জেন-জেড বিক্ষোভকারীদের বৈঠক

নেপালে চলমান জেন-জেড আন্দোলন-এর সাথে যুক্ত বিক্ষোভকারীরা ছয় ঘণ্টার এক ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। এই বৈঠকে কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন্দ্র শাহ, সুশীলা কার্কি এবং কুল মান ঘিসিং - এই তিনজনের নাম বিবেচনা করা হয়। প্রথমে প্রস্তাব দেওয়া হয় বালেন্দ্র শাহের নাম, যিনি তরুণদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়।

তবে শাহ দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেন এবং বলেন যে তিনি রাজনৈতিক পদের পরিবর্তে জনগণের পাশে থাকতে চান। এরপর কার্কির নাম সামনে আসে, কিন্তু সংবিধান ও বয়সের কারণে তাঁর নামে ঐক্যমত্য হয়নি। এই সময়েই কুল মান ঘিসিংয়ের নাম প্রধান্য পায় এবং বিক্ষোভকারীরা তাঁকে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে গ্রহণ করেন।

কুল মান ঘিসিং কে?

কুল মান ঘিসিং একজন প্রকৌশলী, যিনি নেপাল বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের প্রধান থাকাকালীন দেশের বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। দীর্ঘ সময় ধরে নেপাল বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সমস্যায় জর্জরিত ছিল, কিন্তু ঘিসিং সিস্টেমের উন্নতি করেন এবং জনগণকে স্থিতিশীল বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করেন। তাঁর এই সাফল্য তাঁকে একজন নায়কে পরিণত করে। মানুষ তাঁকে এমন একজন নেতা হিসেবে দেখে যিনি শুধু সৎই নন, প্রশাসনিক দক্ষতায়ও পারদর্শী।

জনগণের নায়ক হলেন ঘিসিং কেন?

ঘিসিং শুধু বিদ্যুৎ সংকট দূর করার জন্যই নন, তাঁর দুর্নীতি-বিরোধী ভাবমূর্তির জন্যও পরিচিত। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত না থাকায় তাঁর জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে। আর এই কারণেই তাঁকে একটি নিরপেক্ষ বিকল্প হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিক্ষোভকারী তরুণদের বিশ্বাস, ঘিসিং পুরোনো নেতাদের থেকে ভিন্ন এবং তাঁর অভিজ্ঞতা দেশকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করবে।

সুশীলা কার্কির দাবি কেন দুর্বল হলো?

সুশীলা কার্কির নাম যখন সামনে আসে, তখন রাজনৈতিক মহলে এক ধরনের উৎসাহ দেখা যায়। তিনি নারী ক্ষমতায়ন এবং কঠোর সিদ্ধান্তের জন্য পরিচিত। কিন্তু সংবিধানের বাধা এবং বয়স নিয়ে ওঠা আপত্তি তাঁর দাবিকে দুর্বল করে দেয়। জেন-জেড বিক্ষোভকারীদের বিশ্বাস ছিল যে দেশের নতুন উদ্যম ও প্রাণশক্তিতে ভরপুর নেতৃত্বের প্রয়োজন। আর এই কারণেই তাঁর নাম পিছিয়ে যায় এবং ঘিসিংয়ের নাম এগিয়ে আসে।

ঘিসিংয়ের নাম কেন শক্তিশালী হলো?

ঘিসিংয়ের নাম বেশ কয়েকটি কারণে শক্তিশালী হয়েছে। বিদ্যুৎ সংকট দূর করার কারণে তিনি জনগণের মধ্যে জনপ্রিয়। তিনি রাজনৈতিক দল থেকে দূরে থাকায় তাঁর নিরপেক্ষতার উপর আস্থা রাখা হচ্ছে। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ হওয়ায় তাঁকে সমস্যা সমাধানে পারদর্শী মনে করা হচ্ছে। এবং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তরুণদের একটি বড় অংশ তাঁকে ভবিষ্যতের মুখ হিসেবে দেখছে।

Leave a comment