নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতার পর সুশীলা কার্কি দেশটির নতুন অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। ৭৩ বছর বয়সী কার্কি নেপালের প্রথম মহিলা প্রধান বিচারপতি এবং এখন অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী, যিনি দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে জনসাধারণের মধ্যে তাঁর স্বতন্ত্র পরিচয় তৈরি করেছেন।
কাঠমান্ডু: নেপালে সম্প্রতি ভয়াবহ সহিংসতার পর আবারও ক্ষমতার পরিবর্তন দেখা গেছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করায় তাঁর সরকার পতন হয়। এরপর নেপালের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কিকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়েছে। আলোচিত বিচারক এবং সুপরিচিত লেখক হিসেবে সুশীলা কার্কি জেন-জি-এর সমর্থনও পেয়েছেন। ৫০০০-এরও বেশি লোকের এক বৈঠকে বেশিরভাগ সদস্য তাঁর নামে সম্মতি জানিয়েছেন।
বিচারক হিসেবে তাঁর মেয়াদকালে সুশীলা কার্কি দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন, যার ফলে তিনি জেন-জি-এর প্রথম পছন্দ হয়েছিলেন।
ক্ষমতা পরিবর্তনের পর নেপালের নতুন সরকার
নেপালের সাম্প্রতিক সহিংসতা ও রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করেছিলেন। তাঁর পদত্যাগের পর রাজনৈতিক দল এবং জনজীবনের প্রতিনিধিদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা হয়। এই সময়ে সুশীলা কার্কির নাম উঠে আসে এবং ৫০০০-এরও বেশি প্রতিনিধির বৈঠকে তাঁকে সর্বসম্মতিক্রমে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।
তাঁর বিচারিক পটভূমি এবং দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান তাঁকে জনজাগরণের জন্য উপযুক্ত প্রার্থী করে তুলেছে। নেপালের তরুণ প্রজন্ম অর্থাৎ Gen-Z-এর মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তাও ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছিল।
ভারত থেকে পড়াশোনা এবং প্রাথমিক জীবন
সুশীলা কার্কি ১৯৫২ সালের ৭ জুন নেপালের বিরাটনগরের শঙ্করপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সাত ভাইবোনের মধ্যে জ্যেষ্ঠ কন্যা ছিলেন এবং তাঁর বাবা পেশায় কৃষক ছিলেন।
- স্নাতক শিক্ষা: ১৯৭১ সালে ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে महेंद्र মোরং-এ স্নাতক ডিগ্রি।
- স্নাতকোত্তর: ১৯৭৫ সালে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় (BHU) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর।
- আইন পড়াশোনা: ১৯৭৮ সালে ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন পড়াশোনা সম্পন্ন করেন।
তিনি বিরাটনগর থেকে আইন পেশা শুরু করেন।
স্বামী বিমান ছিনতাই করেন
সুশীলা কার্কির বিবাহ হয় নেপাল কংগ্রেসের নেতা দুর্গা প্রসাদ সুবেদীর সাথে। তাঁদের দেখা হয়েছিল বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে। সুবেদীর নাম নেপালের রাজনৈতিক আলোড়নেও যুক্ত। ১৯৭০ সালে তিনি নেপাল কংগ্রেসের তরুণ বিপ্লবীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। সেই সময়ে রাজা বীরেন্দ্র শাহের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার জন্য বিপ্লবীদের ৩০ লক্ষ টাকা জোগাড় করতে হত, যার অংশ হিসেবে সুবেদী রয়্যাল নেপাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ছিনতাই করেন। ২০১৮ সালে তিনি এই ঘটনা নিয়ে একটি বই লেখেন, যার শিরোনাম ছিল ‘বিমান বিদ্রোহ’।
বিচারিক পেশা এবং অভিশংসন প্রস্তাব
সুশীলা কার্কি বিচার বিভাগে তাঁর দীর্ঘ এবং সম্মানজনক কর্মজীবন গড়ে তোলেন।
- ২০০৭: সিনিয়র আইনজীবী নিযুক্ত।
- ২০০৯: নেপালের সুপ্রিম কোর্টের প্রথম মহিলা প্রধান বিচারপতি।
- ২০১৬-২০১৭: সুপ্রিম কোর্টের ২৪তম প্রধান বিচারপতি এবং কার্যনির্বাহী প্রধান বিচারপতি।
তবে, ২০১৭ সালে শের বাহাদুর দেউবা সরকার তাঁর বিরুদ্ধে একটি অভিশংসন প্রস্তাব আনেন, কিন্তু জনগণ এবং বিচার বিভাগের চাপের মুখে তা অল্প সময়ের মধ্যেই প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এই ঘটনা তাঁকে এমন একজন বিচারক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে, যিনি ক্ষমতার চাপে নতি স্বীকার করেন না।