বেঙ্গালুরুর মতো দ্রুত বর্ধনশীল মহানগরীর জন্য আরও একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৈরির প্রস্তুতি চলছে। রাজ্য সরকার এই দিকে বড় পদক্ষেপ নিয়ে কেন্দ্র সরকারকে ৪,৫০০ একর জমি দেওয়ার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠিয়েছে। বর্তমানে কেম্পেগৌড়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ক্রমাগত যাত্রী চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন বিমানবন্দরের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে তিনটি স্থানকে সম্ভাব্য সাইট হিসেবে বাছাই করা হয়েছে।
কাগলিপুরা, হারোহাল্লি এবং চিক্কাসোলুর সম্ভাব্য বিকল্প
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, এয়ারপোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (এএআই) গত এপ্রিলে বেঙ্গালুরুর কাছাকাছি তিনটি স্থান পরিদর্শন করেছে। এই জায়গাগুলোর মধ্যে কাগলিপুরা, হারোহাল্লি এবং চিক্কাসোলুর অন্তর্ভুক্ত। এই তিনটি স্থানই বেঙ্গালুরু শহর কেন্দ্র থেকে প্রায় ২৫ থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
কাগলিপুরা এবং হারোহাল্লি উভয়ই কানাকপুরা রোডে অবস্থিত।
অন্যদিকে, চিক্কাসোলুর নেলামঙ্গলা-কুণিগল রোডের কাছে অবস্থিত।
আপাতত এএআই-এর চূড়ান্ত রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে, যার পরে পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
রাজ্য মন্ত্রী কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সাথে দেখা করবেন
রাজ্যের শিল্প ও পরিকাঠামো উন্নয়ন মন্ত্রী এম বি পাটিল শীঘ্রই কেন্দ্রীয় বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী রাম মোহন নাইডুর সাথে দেখা করতে চলেছেন। এই বৈঠকে নতুন বিমানবন্দরের প্রস্তাব আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা করা হবে। মনে করা হচ্ছে, কেন্দ্র সরকারের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার পরে প্রক্রিয়াটি দ্রুত হতে পারে।
তামিলনাড়ুর হোসুর থেকে আসছে প্রতিযোগিতা
তবে, এই বিমানবন্দর প্রকল্পের সামনে আরও একটি বড় চ্যালেঞ্জ এসে দাঁড়িয়েছে। তামিলনাড়ু সরকারও তাদের রাজ্যের হোসুর অঞ্চলে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৈরির পরিকল্পনা করছে। সেখানেও দুটি সম্ভাব্য স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু হোসুর বিমানবন্দরের জন্য বেঙ্গালুরু ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট লিমিটেড (বিআইএএল)-এর কাছ থেকে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) এর প্রয়োজন হবে, যা সহজে পাওয়া কঠিন বলে মনে করা হচ্ছে।
ভূমি অধিগ্রহণ বড় সমস্যা হতে পারে
বেঙ্গালুরুতে দ্বিতীয় বিমানবন্দর তৈরি নিয়ে সরকার উৎসাহিত হলেও জমি অধিগ্রহণ এই প্রকল্পের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হতে পারে। যে এলাকাগুলো নির্বাচন করা হয়েছে, সেগুলি হয় চাষযোগ্য জমি, না হয় জনবসতিপূর্ণ এলাকা। এতে শুধু অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াই দীর্ঘ হবে না, বিরোধিতারও সম্মুখীন হতে হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত, মহীশূরের কাছে হওয়া উচিত বিমানবন্দর
একজন বিমান চলাচল বিশ্লেষকের মতে, বেঙ্গালুরু এবং মহীশূরের মধ্যে কোনো বিমানবন্দর তৈরি করা বেশি যুক্তিযুক্ত হবে। এতে শুধু আঞ্চলিক বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থাই উন্নত হবে না, মহীশূর, রামনগর, চেন্নাপাটনার মতো শিল্পাঞ্চলগুলোও উপকৃত হবে। এর পাশাপাশি, এটি বিদ্যমান কেম্পেগৌড়া বিমানবন্দরের যাত্রী চাপ কমাতে পারে।
বেঙ্গালুরু এয়ার ট্রাফিকে ক্রমাগত বৃদ্ধি
বেঙ্গালুরুর বর্তমান কেম্পেগৌড়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দেশের ব্যস্ততম বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে অন্যতম। এখান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার ফ্লাইট টেকঅফ এবং ল্যান্ড করে। গত কয়েক বছরে এখানে যাত্রীদের সংখ্যা ১২ থেকে ১৫ শতাংশ হারে বেড়েছে। অনুমান করা হচ্ছে, আগামী ৫ বছরে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে আরও একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না।
বিআইএএল-এর এক্সক্লুসিভ অপারেশন এগ্রিমেন্টও বাধা হতে পারে
সূত্রের খবর অনুযায়ী, বেঙ্গালুরু ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট লিমিটেড (বিআইএএল) এবং সরকারের মধ্যে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী, বিআইএএল-এর ২০৩৩ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চলে দ্বিতীয় বিমানবন্দর তৈরি না করার বিশেষ অধিকার রয়েছে। এই শর্তের কারণে নতুন প্রকল্পে আইনি বাধা আসতে পারে। তবে সরকার আত্মবিশ্বাসী যে জাতীয় স্বার্থে যেকোনো চুক্তির পর্যালোচনা করা যেতে পারে।
সরকারের দাবি: জমি চিহ্নিত, প্রাথমিক সার্ভে সম্পন্ন
কর্ণাটক সরকারের দাবি, ৪,৫০০ একর জমি আগে থেকেই চিহ্নিত করা হয়েছে এবং প্রাথমিক স্তরে সমীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে। তবে, যতক্ষণ না এএআই-এর চূড়ান্ত রিপোর্ট আসে এবং কেন্দ্র সরকারের অনুমতি পাওয়া যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকল্পটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে রূপ দেওয়া সম্ভব নয়।
বিজনেস হাব হিসেবে বেঙ্গালুরুর ক্রমবর্ধমান ভূমিকা
আইটি এবং স্টার্টআপ হাব হিসেবে বেঙ্গালুরুর ভূমিকা ক্রমাগত বাড়ছে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণ এবং কার্গো ট্রাফিকের ক্ষেত্রেও বেঙ্গালুরু এখন দিল্লি-মুম্বাইকে টেক্কা দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন এয়ার কানেক্টিভিটি এবং সুবিধাজনক ইনফ্রাস্ট্রাকচার এই শহরের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
এখন নজর কেন্দ্র সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে
রাজ্য সরকারের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে। এখন সবার নজর কেন্দ্র সরকার এবং এএআই-এর রিপোর্টের দিকে, যার পরে নির্ধারিত হবে বেঙ্গালুরু কবে এবং কোথায় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পাবে।