আয়কর রিটার্ন ই-ভেরিফিকেশন: পদ্ধতি, নিয়ম এবং সময়সীমা

আয়কর রিটার্ন ই-ভেরিফিকেশন: পদ্ধতি, নিয়ম এবং সময়সীমা

ডিজিটাল ইন্ডিয়ার পথে আরও একধাপ এগিয়ে, আয়কর সংক্রান্ত অনেক প্রক্রিয়া এখন আগের থেকে অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। করদাতাদের জন্য ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন ফাইল করা যেমন জরুরি, তেমনই এর পরে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ রয়েছে, যা এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। সেটি হল ই-ভেরিফিকেশন। যদি আপনি আপনার রিটার্ন ফাইল করে থাকেন, কিন্তু ৩০ দিনের মধ্যে সেটি ই-ভেরিফিকেশন না করেন, তাহলে সেই রিটার্ন দপ্তরের নথিতে নথিভুক্ত হবে না।

আগে যেখানে রিটার্ন ভেরিফিকেশনের জন্য ১২০ দিন সময় পাওয়া যেত, এখন তা কমিয়ে মাত্র ৩০ দিন করা হয়েছে। এই নিয়ম ১ অগাস্ট ২০২২ থেকে চালু হয়েছে। অর্থাৎ, আপনাকে আপনার আইটিআর ফাইল করার ৩০ দিনের মধ্যে সেটি ইলেকট্রনিক উপায়ে ভেরিফাই করতে হবে।

ই-ভেরিফিকেশন কী?

ই-ভেরিফিকেশন, অর্থাৎ ইলেকট্রনিক ভেরিফিকেশন হল সেই প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে করদাতারা অনলাইনে তাদের ফাইল করা রিটার্ন নিশ্চিত করেন। এতে কোনো ডকুমেন্ট পোস্ট করা বা শারীরিকভাবে জমা দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ অনলাইন এবং কয়েক মিনিটের মধ্যেই সম্পন্ন করা যেতে পারে।

এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, এতে সময় বাঁচে এবং কোনো ঝামেলাও হয় না। করদাতাদের শুধু এটা নিশ্চিত করতে হয় যে, তাদের রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বর এবং ইমেল আইডি যেন আধার ও প্যান কার্ডের সঙ্গে লিঙ্ক করা থাকে।

ই-ভেরিফিকেশনের জন্য জরুরি বিষয়

  • রিটার্ন ফাইল করার ৩০ দিনের মধ্যে ভেরিফিকেশন জরুরি
  • ভেরিফিকেশন ছাড়া রিটার্ন অবৈধ বলে গণ্য হবে
  • প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ অনলাইন
  • কোনো ডকুমেন্টের হার্ডকপি পাঠানোর প্রয়োজন নেই
  • ভেরিফিকেশন সম্পূর্ণ হলেই ট্রানজ্যাকশন আইডি পাওয়া যায়

ই-ভেরিফিকেশনের উপায়: একাধিক বিকল্প, সহজ প্রক্রিয়া

ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্ট ই-ভেরিফিকেশনের জন্য করদাতাদের একাধিক বিকল্প দিয়েছে, যাতে সকলে নিজের সুবিধা অনুযায়ী প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে পারেন।

আধার ওটিপি-র মাধ্যমে ই-ভেরিফিকেশন

এই পদ্ধতিটি সবচেয়ে সহজ এবং প্রচলিত বলে মনে করা হয়। এর জন্য জরুরি হল আপনার আধার নম্বর প্যান কার্ডের সঙ্গে লিঙ্ক করা থাকতে হবে এবং আধারের সঙ্গে যুক্ত মোবাইল নম্বরটি চালু থাকতে হবে।

  • ইনকাম ট্যাক্স পোর্টালে লগইন করুন
  • ‘ই-ভেরিফাই রিটার্ন’ অপশনটি নির্বাচন করুন
  • আধার ওটিপি-কে বিকল্প হিসেবে নির্বাচন করুন
  • রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরে পাঠানো ওটিপিটি প্রবেশ করান
  • ওটিপি প্রবেশ করানোর সঙ্গে সঙ্গেই ভেরিফিকেশন সম্পূর্ণ হয়ে যাবে

নেট ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে ভেরিফিকেশন

যদি আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সেই ব্যাঙ্কে থাকে, যা ইনকাম ট্যাক্স পোর্টালে নেট ব্যাঙ্কিং সুবিধার অধীনে রেজিস্টার্ড, তাহলে আপনি এই উপায়েও ভেরিফিকেশন করতে পারেন।

  • আপনার ব্যাঙ্কের নেট ব্যাঙ্কিং ওয়েবসাইটে লগইন করুন
  • ‘ইনকাম ট্যাক্স ই-ফাইলিং’ বিভাগে যান
  • সেখান থেকে সরাসরি ইনকাম ট্যাক্স পোর্টালে পৌঁছান
  • ‘ই-ভেরিফাই রিটার্ন’ অপশনটি নির্বাচন করুন
  • নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন এবং ভেরিফিকেশন সম্পূর্ণ করুন

ইভিসি অর্থাৎ ইলেকট্রনিক ভেরিফিকেশন কোডের মাধ্যমে

এই পদ্ধতিটিও খুব সহজ এবং এর জন্য আপনার কোনো অ্যাপ বা নেট ব্যাঙ্কিংয়ের প্রয়োজন নেই।

  • ইভিসি হল একটি কোড যা আপনার রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বর এবং ইমেল আইডিতে পাঠানো হয়
  • এই কোডটি প্রবেশ করানোর পরে ভেরিফিকেশন সঙ্গে সঙ্গে সম্পূর্ণ হয়ে যায়
  • ইভিসি-র ব্যবহার শুধুমাত্র সেই ব্যবহারকারীদের জন্য সম্ভব, যাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বা ডিમેટ অ্যাকাউন্ট প্যান কার্ডের সঙ্গে লিঙ্ক করা আছে

ডিজিটাল সিগনেচার সার্টিফিকেট (ডিএসসি)

এই বিকল্পটি সেই করদাতাদের জন্য যাদের রিটার্ন অডিটেড হয় অথবা যাদের উপর এই বাধ্যবাধকতা থাকে। এই বিকল্পে আপনাকে নিজের ডিজিটাল সিগনেচার আপলোড করতে হয়।

ই-ভেরিফিকেশনের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া: স্টেপ বাই স্টেপ গাইড

  1. প্রথমত, ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইট incometax.gov.in-এ যান
  2. সেখানে নিজের প্যান নম্বর এবং পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে লগইন করুন
  3. ‘ই-ফাইল’ ট্যাবে ক্লিক করুন
  4. সেখানে ‘ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন’-এ যান এবং ‘ই-ভেরিফাই রিটার্ন’ নির্বাচন করুন
  5. এবার আপনাকে প্যান, অ্যাসেসমেন্ট ইয়ার এবং অ্যাকনলেজমেন্ট নম্বর ভরতে হবে
  6. এর পরে ভেরিফিকেশনের একাধিক বিকল্প আসবে: আধার ওটিপি, নেট ব্যাঙ্কিং, ইভিসি বা ডিএসসি
  7. নিজের সুবিধা অনুযায়ী বিকল্পটি নির্বাচন করুন
  8. যদি আপনি আধার ওটিপি নির্বাচন করেন, তাহলে মোবাইলে ওটিপি আসবে
  9. ওটিপি প্রবেশ করানোর সঙ্গে সঙ্গেই স্ক্রিনে ট্রানজ্যাকশন আইডি এবং কনফার্মেশন মেসেজ আসবে
  10. ভেরিফিকেশন সম্পূর্ণ হওয়ার পর এর নিশ্চিতকরণ ইমেলের মাধ্যমেও পাওয়া যাবে

যদি ৩০ দিন পেরিয়ে যায়, তাহলে কী করবেন?

যদি আপনি কোনো কারণে ৩০ দিনের মধ্যে ভেরিফিকেশন না করে থাকেন, তাহলে আপনি ‘কন্ডোনেশন অফ ডিলে রিকুয়েস্ট’ দায়ের করতে পারেন। এর জন্য আপনাকে ইনকাম ট্যাক্স পোর্টালে একটি অ্যাপ্লিকেশন ভরতে হবে, যেখানে দেরির কারণ উল্লেখ করতে হবে। বিভাগ এই আবেদন মঞ্জুর করার পরেই রিটার্নটিকে বৈধ করবে।

আপডেটেড মোবাইল এবং ইমেল জরুরি

ই-ভেরিফিকেশনের প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য এটা জরুরি যে, আপনার কাছে একটি অ্যাক্টিভ মোবাইল নম্বর এবং ইমেল আইডি থাকে, যা ইনকাম ট্যাক্স পোর্টালে রেজিস্টার্ড। যদি এগুলো আপডেটেড না থাকে, তাহলে ওটিপি বা ইভিসি পেতে সমস্যা হতে পারে।

Leave a comment