কৃষিক্ষেত্রে নতুন মোড়— প্রচলিত সেগুন-শাল ভুলে কৃষকরা এখন ইউক্যালিপটাসের দিকে ঝুঁকছেন। কারণ এই গাছ কেবল কাঠেই নয়, পাতা ও বাকল বিক্রি করেও আনে লক্ষাধিক টাকার আয়। অল্প জমিতেও শুরু করা যায় এই চাষ, ধৈর্য ও সঠিক যত্নই সাফল্যের মূল মন্ত্র।শাল-সেগুনের বিকল্প হিসেবে ইউক্যালিপটাস চাষ কৃষকদের নতুন আর্থিক ভরসা হয়ে উঠছে।
দামি কাঠের চাহিদা, বাজারে ইউক্যালিপটাসের উত্থান
আধুনিক কৃষির লাভজনক দিশা— আগে শিরিষ, সেগুন, শাল বা মেহগনি চাষে মগ্ন ছিলেন কৃষকরা। এখন ইউক্যালিপটাস সেই জায়গা দখল করছে। কারণ কাঠ ছাড়াও এই গাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে অতিরিক্ত আয়। পাতার নির্যাস, বাকল— সবকিছুর বাজারে আলাদা দাম।প্রচলিত কাঠের গাছের পাশাপাশি ইউক্যালিপটাস দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে বহুমুখী ব্যবহার ও আয়ের কারণে।
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ: কম খরচে বেশি মুনাফা
অভিজ্ঞ কৃষি উপদেষ্টা রবিকান্ত পান্ডের দাবি— প্লাইউড শিল্পে ইউক্যালিপটাসের ব্যাপক চাহিদা। ক্ষেতের ধারে লাগিয়ে কৃষকরা অন্য ফসলের সঙ্গেও আয় করতে পারেন। সার, সেচ, যত্ন— প্রায় কিছুই লাগে না। চার-পাঁচ বছরের মধ্যে গাছ কাটা যায়, আর প্রতিটি গাছ বিক্রি হয় হাজার টাকায়।ইউক্যালিপটাস চাষে খরচ কম, যত্ন কম, কিন্তু আয় হয় বহুগুণ বেশি।
পাঁচ বছরে এক একর থেকে কোটি টাকার স্বপ্ন
হিসেব স্পষ্ট— এক একর জমিতে ১২০০ ইউক্যালিপটাস গাছ লাগানো সম্ভব। মাত্র ৫ বছরেই প্রতিটি গাছ ১৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। অর্থাৎ পাঁচ বছর পর ১৮ লক্ষ টাকা আয় হাতের মুঠোয়। এত কম সময়ে এত বড় অঙ্ক কৃষকদের কাছে এক বিরাট সম্ভাবনা।ইউক্যালিপটাস চাষে পাঁচ বছরের মধ্যে কৃষকরা পেতে পারেন ১৮ লক্ষ টাকারও বেশি আয়।
একবার লাগালে বারবার ফলন
অন্য চাষের মতো বারবার খরচ নেই— একবার লাগালেই শিকড় থেকে নতুন চারা গজায়। ফলে প্রতি বছর আলাদা বিনিয়োগের দরকার পড়ে না। ধৈর্য ধরতে পারলেই এই চাষ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় নিশ্চিত।ইউক্যালিপটাসের বিশেষত্ব হল স্বয়ংক্রিয়ভাবে চারা গজানো, যা দীর্ঘমেয়াদে কৃষকদের বিনিয়োগ কমায়।
বিহারের সফল কৃষকদের দৃষ্টান্ত
পশ্চিম চম্পারণ জেলার উদাহরণ— শত শত কৃষক ইতিমধ্যেই ইউক্যালিপটাস চাষে সফল। স্থানীয় কৃষক পরশুরাম জানালেন, এটি একটি ঔষধি গাছও। এর পাতা ও বাকল দিয়ে নানা ওষুধ তৈরি হয়। সঠিকভাবে চাষ করলে তাই কাঠের বাইরে থেকেও বাড়তি আয় সম্ভব।পশ্চিম চম্পারণের শত শত কৃষক প্রমাণ করেছেন— ইউক্যালিপটাস চাষ আয়ের এক নতুন দরজা।