ট্রাম্প-মোদি বন্ধুত্ব শেষ: ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তলানিতে, মত প্রাক্তন NSA জন বোল্টনের

ট্রাম্প-মোদি বন্ধুত্ব শেষ: ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তলানিতে, মত প্রাক্তন NSA জন বোল্টনের

প্রাক্তন NSA জন বোল্টন বলেছেন যে ট্রাম্প এবং মোদির ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব শেষ হয়ে গেছে। শুল্ক বিরোধ এবং মার্কিন সমালোচনার কারণে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে।

Trump-Modi Friendship: আমেরিকার প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (NSA) জন বোল্টন ভারত এবং আমেরিকার সম্পর্ক নিয়ে একটি বড় মন্তব্য করেছেন। তাঁর মতে, ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বন্ধুত্বের সেই সময় এখন অতীত, যখন দুই নেতার ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নত বলে মনে করা হত। বোল্টন স্পষ্টভাবে বলেছেন যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক (Personal Relations) সর্বদা অস্থায়ী হয় এবং শেষ পর্যন্ত দেশগুলির কৌশলগত স্বার্থ (Strategic Interests)-ই সর্বোচ্চ প্রমাণিত হয়।

ট্রাম্প-মোদি বন্ধুত্বের বিষয়ে বোল্টনের মন্তব্য

বোল্টন এক সাক্ষাৎকারে স্মরণ করিয়ে দেন যে এক সময় ট্রাম্প এবং মোদির ঘনিষ্ঠতা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আলোচনার বিষয় ছিল। আমেরিকায় আয়োজিত 'হাউডি মোদি' (Howdy Modi) র‍্যালি এবং ট্রাম্পের ভারত সফর সেই বন্ধুত্বকে আরও জোরদার করেছিল। সেই সময় একে "ব্রোমেন্স" (Bromance) ও বলা হত। কিন্তু আজ পরিস্থিতি বদলে গেছে এবং সেই ব্যক্তিগত সমীকরণ আর কোনো অর্থ রাখে না।

বোল্টন বলেন যে নেতাদের বোঝা উচিত যে ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব (Friendship) কেবল একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত কার্যকর হয়। দীর্ঘমেয়াদী কোনো সম্পর্কের ভিত্তি পারস্পরিক কৌশলগত সিদ্ধান্ত এবং নীতির উপরই নির্ভর করে।

শুল্ক বিরোধ সম্পর্কে সম্পর্কের অবনতি

ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে সম্পর্কের অবনতির সবচেয়ে বড় কারণ হল শুল্ক (Tariff) বিরোধ। বোল্টনের মতে, গত দুই দশকে শুল্কের কারণে দুই দেশের সম্পর্ক সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে। মার্কিন প্রশাসন ক্রমাগত ভারতের বাণিজ্য নীতি এবং শুল্ক কাঠামো নিয়ে সমালোচনা করছে, যা সম্পর্কের মধ্যে আরও তিক্ততা এনেছে।

বোল্টনের মতে, কেবল ট্রাম্প নন, যেকোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য ব্যক্তিগত সম্পর্কের চেয়ে বাণিজ্য এবং কৌশলগত সিদ্ধান্তই অগ্রাধিকার পায়।

ব্যক্তিগত সম্পর্কের উপর ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি

প্রাক্তন NSA ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদেশ নীতি নিয়েও মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন যে ট্রাম্প প্রায়শই আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে নেতাদের ব্যক্তিগত সমীকরণের সঙ্গে যুক্ত করে দেখেন। উদাহরণ দিয়ে বোল্টন বলেন যে যদি ট্রাম্পের রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকে, তবে তিনি মনে করেন যে আমেরিকা ও রাশিয়ার সম্পর্কও ততটাই ভালো। কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এই দৃষ্টিভঙ্গি সবসময় সঠিক হয় না।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর জন্যও সতর্কবার্তা

জন বোল্টন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকেও সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন যে এটা ভাবা ভুল হবে যে কেবল ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জটিলতা সামলানো যায়। ব্যক্তিগত সমীকরণ কিছু সময়ের জন্য সাহায্য করতে পারে, কিন্তু কঠিন এবং কড়া সিদ্ধান্ত (Hard Decisions) এড়ানো সম্ভব নয়।

পরিবর্তিত অগ্রাধিকারের ইঙ্গিত

সম্প্রতি চীনে অনুষ্ঠিত SCO (Shanghai Cooperation Organisation) শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি পুতিন এবং চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের সাক্ষাৎ হয়েছিল। এই সাক্ষাৎকে ভারতের পরিবর্তিত অগ্রাধিকারের ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে ভারত এখন তার বিদেশ নীতিকে কেবল আমেরিকার উপর নির্ভরশীল রাখতে চায় না, বরং বহুপাক্ষিক সম্পর্ক (Multilateral Relations) শক্তিশালী করার দিকে কাজ করছে।

"হাউডি মোদি" থেকে আজকের সফর

২০১৯ সালে আমেরিকার হিউস্টনে অনুষ্ঠিত "হাউডি মোদি" র‍্যালি বিশ্বজুড়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। সেই সময় নরেন্দ্র মোদি এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুগলবন্দীকে ভারত-মার্কিন সম্পর্কের স্বর্ণযুগ বলা হচ্ছিল। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে গেছে। এখন সেই ব্যক্তিগত উষ্ণতাও নেই, সেই রাজনৈতিক পরিবেশও নেই।

Leave a comment