প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’ এবং নর্থ ইস্ট স্পেশাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট স্কিম (NESIDS) উত্তর-পূর্ব ভারতে, রেলওয়ে সহ অবকাঠামো খাতে ঐতিহাসিক পরিবর্তন এনেছে।
নয়াদিল্লি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই উত্তর-পূর্ব ভারত সম্পর্কে কেন্দ্র সরকারের নীতিতে বড় পরিবর্তন এনেছেন এবং এই অঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়নে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছেন। গত ১১ বছরে উত্তর-পূর্বে পরিকাঠামোর উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা গেছে। অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি এবং নর্থ ইস্ট স্পেশাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট স্কিম (NESIDS) এর মতো প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন সড়ক, রেল প্রকল্প, বিমানবন্দর এবং ডিজিটাল নেটওয়ার্কের বিস্তার ঘটেছে। এই প্রচেষ্টাগুলি অর্থনৈতিক একত্রীকরণকে শক্তিশালী করেছে এবং জাতীয় সংযোগ বাড়িয়েছে, যা এই অঞ্চলের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
মিজোরামে প্রথমবার রেল পরিষেবা – ৭৮ বছরের অপেক্ষার অবসান
স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম মিজোরাম যাত্রী ট্রেন পেতে চলেছে। বৈরবী-সাইরাং রেল প্রকল্পের অধীনে, ৫১.৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথের মাধ্যমে মিজোরামের রাজধানী আইজল জাতীয় রেল নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত হয়েছে। প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২৯ নভেম্বর ২০১৪ সালে এবং এটি সম্পন্ন হয়েছে ১০ জুন ২০২৫ তারিখে। মোট ব্যয় হয়েছে ৮,০৭১ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৪৮টি সুড়ঙ্গ এবং ১৪২টি সেতু রয়েছে, যার মধ্যে ৫৫টি বড় সেতু। এই প্রকল্পটি মায়ানমার সীমান্ত পর্যন্ত সম্প্রসারণের পরিকল্পনা সহ বাণিজ্য ও পর্যটনকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।
मणिपुर – জিরিবাম থেকে ইম্ফাল পর্যন্ত রেল সংযোগ
मणिपुरের রাজধানী ইম্ফাল এখন জিরিবামের সাথে সংযুক্ত। ননি ব্রিজ, যার উচ্চতা ১৪১ মিটার, এই প্রকল্পের মূল অংশ। এই সেতুটি যাত্রার সময় ১২ ঘন্টা থেকে কমিয়ে ২ ঘন্টায় নিয়ে আসে। এই রেল সংযোগ ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদার করার পথ প্রশস্ত করেছে।
নাগাল্যান্ড – দুর্গম এলাকাগুলিকে জাতীয় নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্তিকরণ
নাগাল্যান্ডে ১৫.৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে, যা বাণিজ্য ও পরিবহনে গতি এনেছে। এই প্রকল্পটি নাগাল্যান্ডের দুর্গম এলাকাগুলিকে জাতীয় নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত করছে এবং রাজ্যে কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক কার্যকলাপ বাড়িয়ে তুলছে। নাগাল্যান্ডে রেল নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণের ফলে এই রাজ্য দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্য মানচিত্রে উঠে আসছে।
মেঘালয় – পণ্য পরিবহনে নতুন দিগন্ত
মেঘালয়ের নর্থ গারো হিলসে প্রথমবারের মতো ২১ ওয়াগনের একটি মালগাড়ি পৌঁছেছে, যা অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সরবরাহকে সহজ করেছে। তেতেলিয়া-বারনিহাট প্রকল্পের গতি বাড়িয়ে এই অঞ্চলকে আর্থিকভাবে শক্তিশালী করার দিকে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
ত্রিপুরা – আন্তর্জাতিক সংযোগের দিকে পদক্ষেপ
ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা ইতিমধ্যেই রেল নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত ছিল, তবে ২০১৪ সালের পর থেকে এটিকে আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। বিশেষ করে আগরতলা থেকে আখাউড়া (বাংলাদেশ) পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণ আন্তর্জাতিক সংযোগকে উন্নত করবে। এছাড়াও, ত্রিপুরায় রেলপথের বিদ্যুতায়নও দ্রুত সম্পন্ন করা হচ্ছে।
অরুণাচল প্রদেশ – নাহরলাগুন থেকে সম্প্রসারণ
অরুণাচল প্রদেশে নাহরলাগুন পর্যন্ত রেল পরিষেবা ২০১৪ সালে চালু হয়েছিল। এরপর নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ অব্যাহত রয়েছে। ২০১৮ সালে আসামে ব্রহ্মপুত্র নদীর উপর নির্মিত বোগিবিল ব্রিজ অরুণাচল প্রদেশ এবং আসামের মধ্যে রেল ও সড়ক সংযোগে নতুন মাত্রা এনেছে। এর ফলে বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও পর্যটন বৃদ্ধি পেয়েছে।
আসাম – আধুনিক রেল নেটওয়ার্ক
আসামে গুয়াহাটি এবং অন্যান্য প্রধান শহরগুলিকে সংযুক্তকারী রেল লাইনগুলির আধুনিকীকরণ ও বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। এর ফলে দ্রুত ও নিরাপদ রেল পরিষেবা নিশ্চিত হয়েছে। একই সাথে, আঞ্চলিক অর্থনৈতিক কার্যকলাপেও উন্নতি দেখা গেছে।
সিকিম – সেবক-রংপো রেল প্রকল্প থেকে নতুন সম্ভাবনা
সিকিমে সেবক-রংপো রেল প্রকল্প (৪৪.৯৬ কিমি) দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। এই প্রকল্পটি সিকিমকে রেল নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত করবে এবং পর্যটন ও বাণিজ্যকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। এর কিছু অংশ ২০১৪ সালের পরে শুরু হয়েছিল এবং এখন এটি অগ্রগতিতে রয়েছে।
‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’-র অধীনে রেল প্রকল্পগুলি উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত করতে সাহায্য করেছে। এছাড়াও, এই অঞ্চলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পর্যটন এবং কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ তৈরি করেছে। এই প্রকল্পগুলি কেবল ভৌত সংযোগই বাড়াচ্ছে না, বরং সাংস্কৃতিক ও সামাজিক একীকরণকেও শক্তিশালী করছে।