মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেছেন যে শুল্ক আরোপের কারণে ভারত ও আমেরিকার সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তিনি শুক্রবার বলেন যে রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে ভারতের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হলে দুই দেশের মধ্যে তিক্ততা তৈরি হয়েছে।
ওয়াশিংটন: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি স্বীকার করেছেন যে ভারতের উপর আরোপিত ৫০% শুল্ক উভয় দেশের সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ ছিল না, তবে রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে ভারতকে এই বিশাল শুল্ক দিতে হয়েছে। তিনি স্বীকার করেন যে এই পদক্ষেপে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে তিক্ততা বেড়েছে এবং বাণিজ্যিক সহযোগিতা প্রভাবিত হয়েছে।
শুল্ক আরোপের কারণ
ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেন যে ভারত রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণে তেল কিনছে, যা আমেরিকার কৌশলগত স্বার্থের পরিপন্থী। এই কারণেই তিনি ভারতের উপর ৫০% শুল্ক আরোপ করেছেন। পূর্বে ভারতের উপর ২৫% শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল, যা এখন বাড়িয়ে ৫০% করা হয়েছে। এই শুল্ক ২৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে। ট্রাম্প বলেন, "ভারত রাশিয়ার সবচেয়ে বড় ক্রেতা। আমি রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে ভারতের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছি। এটি করা সহজ ছিল না।"
তার মতে, এই সিদ্ধান্তটি অর্থনৈতিক নীতির সাথে যুক্ত থাকার পাশাপাশি বৈশ্বিক নিরাপত্তা এবং ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্যের অংশ। আমেরিকা চায় তার অংশীদাররা রাশিয়ার মতো দেশগুলির সাথে বাণিজ্য হ্রাস করুক এবং আমেরিকান সংস্থাগুলির জন্য আরও সুযোগ তৈরি করুক।
ভারতে প্রতিবাদ ও বাণিজ্যে প্রভাব
শুল্ক আরোপের সাথে সাথেই ভারতে মার্কিন নীতির বিরোধিতা শুরু হয়। ব্যবসায়িক মহল থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অঙ্গন পর্যন্ত, সকলেই এই পদক্ষেপকে ভারতের অর্থনীতির উপর আঘাত বলে অভিহিত করে। ট্রাম্প স্বীকার করেছেন যে এর ফলে ভারতের সাথে বাণিজ্যিক সহযোগিতায় টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, "এটি একটি বড় বিষয় এবং এর ফলে ভারতের সাথে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।"
ভারত-আমেরিকার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বার্ষিক প্রায় ১৯০ বিলিয়ন ডলার। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক কৌশলগত ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। কিন্তু ট্রাম্পের শুল্ক এই সহযোগিতাকে প্রভাবিত করছে। আমেরিকা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে যদি ভারত কৃষি ও দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার আমেরিকান সংস্থাগুলির জন্য উন্মুক্ত করে তবেই শুল্ক হ্রাস সম্ভব। এখন পর্যন্ত আলোচনার পরেও দুই দেশের মধ্যে কোনো ठोस চুক্তি হয়নি।
শুল্কের সম্ভাব্য সমাধান
যদিও ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে আলোচনা করতে পারেন। তিনি বলেন যে যদি আলোচনা ইতিবাচক হয় তবে শীঘ্রই একটি নতুন বাণিজ্যিক চুক্তিতে সম্মতি হতে পারে। আমেরিকা চায় যে ভারত বাণিজ্য ক্ষেত্রে আমেরিকান সংস্থাগুলির জন্য উন্মুক্ততা বাড়াক, যাতে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা শক্তিশালী হয়।
ভারতের জন্য এই পরিস্থিতি চ্যালেঞ্জিং। একদিকে তাকে জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য বিকল্প উৎস খুঁজতে হবে, অন্যদিকে তাকে বাণিজ্যিক স্বার্থকেও ভারসাম্যপূর্ণ রাখতে হবে। আমেরিকান বাজারে প্রবেশ ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তাই শুল্কের প্রভাব কমাতে কূটনৈতিক সংলাপ এবং বাণিজ্যিক চুক্তির প্রয়োজন রয়েছে।