ওল্ড ট্র্যাফোর্ড টেস্টে ভারতের সামনে ইতিহাস গড়ার সুযোগ—পিচ পেস সহায়ক, আবহাওয়ায় সুইংয়ের প্রভাব এবং গিলের উপর রেকর্ড ভাঙার নজর।
IND vs ENG 4th: ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যে পাঁচ ম্যাচের রোমাঞ্চকর টেস্ট সিরিজটি এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে। সিরিজে ২-১ ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা ভারতীয় দলের সামনে এখন 'ডু অর ডাই' পরিস্থিতি। চতুর্থ টেস্টটি ম্যানচেস্টারের ঐতিহাসিক এমিরেটস ওল্ড ট্র্যাফোর্ড স্টেডিয়ামে খেলা হবে, যেখানে পিচ ও আবহাওয়া দুটোই ম্যাচের গতিপথ নির্ধারণ করতে পারে। এখন প্রশ্ন হল, শুভমান গিল কি ইতিহাস গড়তে পারবেন? জসপ্রিত বুমরাহর সুইং কি চলবে? এবং ভারতীয় দল কি এই প্রথম এই মাঠে টেস্ট জয়ের স্বাদ পাবে?
ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের পিচ: পেস বোলারদের প্রথম পছন্দ
ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ড মাঠ ইংল্যান্ডের সেই বিশেষ কয়েকটি মাঠের মধ্যে অন্যতম, যেখানে পেস বোলাররা শুরু থেকেই বাউন্স ও সীম মুভমেন্টের সুবিধা পেয়ে থাকেন। বিশেষ করে নতুন বলে জসপ্রিত বুমরাহ, মহম্মদ সিরাজ এবং আকাশ দীপ-এর মতো বোলাররা প্রথম দুই দিনেই প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের সমস্যায় ফেলতে পারেন। পিচের ঘাস এবং পরিবেশের আর্দ্রতা সুইংয়ের জন্য অনুকূল থাকবে।
তৃতীয় দিন থেকে স্পিনারদের দাপট
যদিও পিচে প্রথম দুই দিন পেস বোলারদের দাপট থাকবে, তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পিচ পুরনো হতে থাকলে স্পিনারদের প্রভাব বাড়তে শুরু করবে। ইংল্যান্ডের শোয়েব বশির অথবা ভারতের রবীন্দ্র জাদেজা তৃতীয় দিন থেকে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। গতবার যখন এই মাঠে টেস্ট খেলা হয়েছিল, তখনও একই রকম প্রবণতা দেখা গিয়েছিল।
টসে জয়ী হওয়া দল নিতে পারে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত
এই মাঠে টসে জয়ী দলগুলি প্রায়শই প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যায়, ৮৪টি টেস্ট ম্যাচের মধ্যে ৩৬টিতে প্রথমে ব্যাট করা দল জয়লাভ করেছে। এখানে প্রথম ইনিংসের গড় স্কোর প্রায় ৩৩০ রান, যা ইঙ্গিত দেয় যে দল যদি ভালো শুরু করতে পারে, তাহলে ম্যাচের রাশ নিজেদের হাতে রাখতে পারবে।
ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ভারতের টেস্ট ইতিহাস
ম্যানচেস্টারের এই মাঠে ভারতীয় দল আজ পর্যন্ত একটিও টেস্ট ম্যাচ জিততে পারেনি। এখনও পর্যন্ত খেলা ৯টি টেস্ট ম্যাচের মধ্যে ভারত ৪টিতে হেরেছে এবং ৫টি ম্যাচ ড্র হয়েছে। শেষবার ভারত এই মাঠে ২০১৪ সালে খেলেছিল এবং সেই ম্যাচে টিম ইন্ডিয়াকে বড় পরাজয় স্বীকার করতে হয়েছিল।
- ১৯৩৬ - ড্র
- ১৯৪৬ - ড্র
- ১৯৫২ - পরাজয়
- ১৯৫৯ - পরাজয়
- ১৯৭১ - ড্র
- ১৯৭৪ - পরাজয়
- ১৯৮২ - ড্র
- ১৯৯০ - ড্র
- ২০১৪ - পরাজয়
ম্যানচেস্টারের আবহাওয়া: মেঘ ও বৃষ্টির সঙ্গে হবে মোকাবিলা
রিপোর্ট অনুযায়ী, টেস্ট ম্যাচের প্রথম দিন অর্থাৎ ২৩শে জুলাই ম্যানচেস্টারের আকাশ মেঘলা থাকবে। তবে, চতুর্থ ও পঞ্চম দিনে হালকা বৃষ্টির ২০% সম্ভাবনা রয়েছে। তাপমাত্রা ১৮ থেকে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকার সম্ভাবনা আছে এবং বাতাসে আর্দ্রতা প্রায় ৬৫% পর্যন্ত থাকবে। এই আবহাওয়া সুইং বোলারদের জন্য স্বর্গ হতে পারে। জসপ্রিত বুমরাহ এবং ইংল্যান্ডের ক্রিস ওকসের মতো বোলাররা এই পরিস্থিতিতে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন। ভালো কথা হল, ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই, যার ফলে ম্যাচটি পুরো ৫ দিন ধরে খেলা যেতে পারে।
শুভমান গিলের সামনে ইতিহাস গড়ার সুবর্ণ সুযোগ
ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের মাঠে যেখানে ভারত কখনো টেস্ট জেতেনি, সেখানে শুভমান গিলের কাছে সুনীল গাভাসকরের ৫৪ বছর পুরনো রেকর্ড ভাঙার সুযোগ রয়েছে। ইংল্যান্ডের মাটিতে এক সিরিজে সবচেয়ে বেশি রান করা ভারতীয় ব্যাটসম্যান হওয়ার জন্য এই টেস্টে তার আর মাত্র ১৬৮ রান দরকার।
কে বাজিমাত করতে পারে?
ইংল্যান্ডের দল ঘরের পরিস্থিতিতে শক্তিশালী বলে মনে করা হয়, তবে ভারতের কাছেও বুমরাহ, অশ্বিন এবং রোহিতের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড় রয়েছে, যারা যেকোনো পরিস্থিতিতে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। যদি ব্যাটসম্যানরা প্রথম ইনিংসে ভালো স্কোর করতে পারে, তাহলে ভারতের জন্য এটি একটি ঐতিহাসিক জয় হতে পারে।