শ্রাবণ মাস ভগবান শিবের ভক্তের জন্য সবচেয়ে পবিত্র সময় হিসাবে বিবেচিত হয়। এই মাসে আসা শিবরাত্রি শ্রাবণ শিবরাত্রি নামে পরিচিত, যা শিবভক্তদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনে, সারা দেশে ভোলেনাথের ভক্তরা উপবাস করে, রাত্রি জাগরণ করে এবং শিবলিঙ্গে জলাভিষেক করে আশীর্বাদ লাভ করে।
এই বছর ২০২৫ সালে, শ্রাবণ শিবরাত্রি ২৩শে জুলাই পালিত হবে। বিশেষ বিষয় হল, এই বার শিবরাত্রিতে ভদ্রার প্রভাবও থাকবে। তাই পূজার সময় সম্পর্কে সতর্কতা অবলম্বন করা খুবই জরুরি। আসুন জেনে নেওয়া যাক এই দিনে কোন কোন শুভ মুহূর্ত রয়েছে এবং কোন সময়ে শিবকে জল অর্পণ করা সবচেয়ে উত্তম হবে।
কবে শ্রাবণ শিবরাত্রি ২০২৫
শ্রাবণ মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুर्दशी তিথিতে শ্রাবণ শিবরাত্রি পালিত হয়। এই বছর এই তিথি ২৩শে জুলাই সকাল ৪টা ৩৯ মিনিটে শুরু হচ্ছে এবং ২৪শে জুলাই গভীর রাত ২টো ২৮ মিনিট পর্যন্ত থাকবে। পঞ্চাঙ্গ অনুসারে, উদয় তিথি অর্থাৎ সূর্যোদয়ের সময় যে তিথি থাকে, সেটিই মান্য হয়। তাই শ্রাবণ শিবরাত্রি ২৩শে জুলাই ২০২৫ তারিখে পালিত হবে।
ভদ্রার প্রভাব থাকবে শিবরাত্রিতে
এই বার শিবরাত্রিতে ভদ্রার যোগও তৈরি হচ্ছে, যা কিছু সময় পূজার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশ্বাস করা হয় যে ভদ্রা কালে কোনও শুভ কাজ করা উচিত নয়, কারণ এই সময়ে পূজা করলে শুভ ফল পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
পঞ্জিকা অনুসারে, ২৩শে জুলাই সকাল ৫টা ৩৭ মিনিট থেকে দুপুর ৩টে ৩১ মিনিট পর্যন্ত ভদ্রার প্রভাব থাকবে। এই সময়ে শিব পূজা বা জলাভিষেক করা নিষিদ্ধ বলে মনে করা হয়। তাই ভক্তদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে যে তারা এই সময়ের পরেই পূজা করুন।
শিবরাত্রির পূজার জন্য শুভ সময়
শিবরাত্রির পূজা রাতের চার প্রহরে করা হয়। প্রতিটি প্রহরে আলাদা আলাদা ভাবে শিবের আরাধনা করা হয়। নিচে চারটি প্রহরের পূজার মুহূর্ত দেওয়া হল:
- প্রথম প্রহর: সন্ধ্যা ৬টা ৫৯ মিনিট থেকে রাত ৯টা ৩৬ মিনিট পর্যন্ত
- দ্বিতীয় প্রহর: রাত ৯টা ৩৬ মিনিট থেকে রাত ১২টা ১৩ মিনিট পর্যন্ত
- তৃতীয় প্রহর: রাত ১২টা ১৩ মিনিট থেকে গভীর রাত ২টো ৫০ মিনিট পর্যন্ত
- চতুর্থ প্রহর: গভীর রাত ২টো ৫০ মিনিট থেকে সকাল ৫টা ২৭ মিনিট পর্যন্ত
এই প্রহরগুলোতে শিবলিঙ্গে জল, দুধ, দই, ঘি, মধু, চিনি এবং বেলপাতা অর্পণ করে ভোলেনাথের অভিষেক করা অত্যন্ত পুণ্যদায়ক বলে মনে করা হয়।
জল অর্পণের সবচেয়ে উত্তম সময়
শিবরাত্রিতে শিবলিঙ্গে জল অর্পণের ঐতিহ্য অনেক পুরনো। বলা হয় যে শুধু এক লোটা জলও যদি ভক্তি ভরে অর্পণ করা হয়, তাহলে ভোলেনাথ প্রসন্ন হন। এই বার ভদ্রার সময় দুপুর ৩টে ৩১ মিনিট পর্যন্ত থাকবে, তাই সকালে ব্রহ্ম মুহূর্তে জলাভিষেক করা সবচেয়ে উত্তম হবে।
ব্রহ্ম মুহূর্তের সময়: ২৩শে জুলাই সকাল ৪টে ১৫ মিনিট থেকে ৪টে ৫৬ মিনিট পর্যন্ত
এই সময় শান্ত পরিবেশে শিবমন্ত্র জপ করার সাথে শিবলিঙ্গে জল অর্পণ করা অত্যন্ত ফলদায়ক বলে মনে করা হয়।
শ্রাবণ শিবরাত্রি ব্রতের পারণ সময়
যে ভক্তরা এই দিনে ব্রত রাখেন, তাদের জন্য ব্রত পারণেরও বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। ব্রত পারণ অর্থাৎ উপবাস ভাঙার সময়ও পঞ্জিকা অনুসারে নির্ধারণ করা হয়।
ব্রত পারণের সময়: ২৪শে জুলাই ২০২৫ সকাল ৫টা ২৭ মিনিটের পর
এই সময়ের পর ফল বা খাবার খেয়ে ব্রত সমাপ্ত করা যেতে পারে।
শ্রাবণ শিবরাত্রির মান্যতা এবং গুরুত্ব
পুরাণ অনুসারে, শ্রাবণ শিবরাত্রির দিনে শিব ও পার্বতীর পুনর্মিলন হয়েছিল। এই কারণে এই দিনটি বিবাহিত জীবনের সুখের জন্য অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। কুমারী মেয়েরা এই দিনে ব্রত রেখে ভালো বর কামনা করে, অন্যদিকে বিবাহিত মহিলারা স্বামীর দীর্ঘায়ু জন্য শিবলিঙ্গে জল অর্পণ করেন।
এই দিনে শিবপুরাণ পাঠ করা, মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র এবং শিব পঞ্চাক্ষরী মন্ত্র (ওঁ নমঃ শিবায়) জপ করাও খুব ফলদায়ক। শিবভক্তরা রাত্রি জাগরণ করেন এবং সারা রাত ভক্তির মধ্যে ডুবে থাকেন।
ভদ্রাতে কী করবেন এবং কী করবেন না
ভদ্রা কালে শুভ কাজ নিষিদ্ধ। বিশেষ করে কোনও প্রকার পূজা, অভিষেক বা যজ্ঞ ইত্যাদি এই সময়ে করা উচিত নয়। তাই শ্রাবণ শিবরাত্রিতেও ভদ্রার সময় নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে এবং পূজা-পাঠ সন্ধ্যায় বা রাতের মুহূর্তে করাই উচিত।
শিব মন্দিরগুলোতে উপচে পড়বে ভক্তদের ভিড়
প্রতি বছরের মতো এই বারও শ্রাবণ শিবরাত্রিতে দেশের শিব মন্দিরগুলোতে ভক্তদের প্রচুর ভিড় দেখা যাবে। বিশেষ করে কাশী বিশ্বনাথ, বৈদ্যনাথ ধাম, মহাকালেশ্বর এবং সোমনাথের মতো প্রধান শিবালয়গুলোতে সকাল থেকেই ভক্তদের লম্বা লাইন লাগবে। ভক্তরা বেলপাতা, ধুতুরা, ভাং, গঙ্গাজল এবং ফল-ফুল নিয়ে শিবলিঙ্গের অভিষেক করবেন।
দেশের অনেক স্থানে এই দিনে কাওয়ড় যাত্রাও তার চরম পর্যায়ে থাকে, যেখানে শিবভক্তরা গঙ্গাজল এনে শিবলিঙ্গে অর্পণ করেন। শ্রাবণ শিবরাত্রি নিয়ে প্রশাসনও নিরাপত্তা ও ব্যবস্থার কড়া বন্দোবস্ত করে।