পাকিস্তান-আফগানিস্তান উত্তেজনা চরমে: বিমান হামলায় ক্রিকেটার নিহত, ত্রিদেশীয় টি২০ সিরিজ থেকে সরে দাঁড়াল আফগানিস্তান

পাকিস্তান-আফগানিস্তান উত্তেজনা চরমে: বিমান হামলায় ক্রিকেটার নিহত, ত্রিদেশীয় টি২০ সিরিজ থেকে সরে দাঁড়াল আফগানিস্তান
সর্বশেষ আপডেট: 5 ঘণ্টা আগে

পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান তালেবানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা আবারও সহিংস মোড় নিয়েছে। শুক্রবার ইসলামাবাদ এবং কাবুলের মধ্যে ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর বিষয়ে ঐকমত্য হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই পাকিস্তান আফগানিস্তানের পাক্তিকা প্রদেশে বিমান হামলা চালায়।

খেলাধুলা সংবাদ: পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের মধ্যে বাড়তে থাকা উত্তেজনা এখন খেলার মাঠকেও গ্রাস করেছে। পাকিস্তানের কথিত বিমান হামলায় আফগানিস্তানের তিনজন ক্রিকেটারের মৃত্যু হয়েছে, যার পর আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (ACB) পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার সাথে অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন ত্রিদেশীয় টি২০ আন্তর্জাতিক সিরিজ থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছে।

এসিবি তাদের আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলেছে যে এই হামলা কেবল ক্রীড়া সম্প্রদায়ের জন্যই নয়, আফগানিস্তানের সমগ্র ক্রিকেট সমাজের জন্য “এক অপূরণীয় ক্ষতি”। বোর্ড হামলায় নিহত খেলোয়াড়দের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পাকিস্তানের সাথে যেকোনো আসন্ন ক্রিকেট কার্যকলাপ অবিলম্বে স্থগিত করেছে।

পাক্তিকা প্রদেশে ভয়াবহ হামলা

ঘটনাটি আফগানিস্তানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পাক্তিকা প্রদেশের উরগুন জেলার। প্রতিবেদন অনুসারে, তিনজন ক্রিকেটার — কবির, সিবগাতুল্লাহ এবং হারুন — একটি বন্ধুত্বপূর্ণ ক্রিকেট ম্যাচে অংশ নেওয়ার পর তাদের বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়ি ফেরার পর তারা একটি স্থানীয় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, যখন তারা পাকিস্তানের বিমান হামলার লক্ষ্যবস্তু হন।

আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড তাদের বিবৃতিতে লিখেছে, পাক্তিকার উরগুন জেলার সাহসী ক্রিকেটারদের মর্মান্তিক শাহাদাত বরণে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড গভীর শোক প্রকাশ করছে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর দ্বারা সংঘটিত এই কাপুরুষোচিত হামলা খেলাধুলা এবং মানবতা উভয়েরই বিরুদ্ধে। এই হামলায় তিনজন খেলোয়াড় ছাড়াও আরও পাঁচজন স্থানীয় নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে, যখন সাতজন আহত হয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসনের মতে, বোমা হামলায় আবাসিক এলাকাগুলি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও হামলা

এই বিমান হামলা এমন এক সময়ে ঘটল যখন পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের মধ্যে ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর ছিল। উভয় দেশ সম্প্রতি সীমান্তে সংঘর্ষের পর যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল। তবে, চুক্তির কয়েক ঘণ্টা পরই পাক্তিকা প্রদেশে এই বিমান হামলা হয়, যা উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তোলে।

পাকিস্তান এই পদক্ষেপকে তাদের “নিরাপত্তা অভিযান” এর অংশ বলে অভিহিত করেছে, যেখানে আফগানিস্তান এটিকে “সাধারণ নাগরিকদের উপর সরাসরি হামলা” বলেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং জাতিসংঘ এটিকে সীমান্ত জুড়ে সহিংসতায় “উদ্বেগজনক বৃদ্ধি” বলে বর্ণনা করেছে। আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড ঘোষণা করেছে যে তারা নভেম্বরের শেষে অনুষ্ঠিতব্য ত্রিদেশীয় টি২০ সিরিজে অংশ নেবে না। এই সিরিজটি পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার মধ্যে খেলা হওয়ার কথা ছিল। এসিবি বলেছে যে বর্তমান পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের সাথে খেলা “অসম্ভব এবং অসংবেদনশীল” হবে।

বোর্ডের মুখপাত্র বলেছেন, এই হামলা কেবল আমাদের খেলোয়াড়দের উপর নয়, বরং আফগানিস্তানের ক্রীড়া এবং যুব সমাজের উপর একটি হামলা। ক্রিকেট আমাদের দেশে ঐক্য এবং আশার প্রতীক হয়ে আছে, এবং এমন সময়ে যখন আমাদের খেলোয়াড়রা শান্তির দূত হয়ে উঠছিলেন, তখন তাদের উপর হামলা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

Leave a comment