পণ্ডিত ভীমসেন জোশী: ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের কিংবদন্তী

পণ্ডিত ভীমসেন জোশী: ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের কিংবদন্তী

পণ্ডিত ভীমসেন জোশী ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে অসামান্য অবদান রেখেছেন। তাঁর খেয়াল গান, ভক্তিগীতি এবং রাগগুলির গভীরতা তাঁকে দেশ-বিদেশে বিখ্যাত করেছে। তাঁর জীবন ও সংগীত নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছে এবং ভারতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছে।

ভীমসেন জোশী: ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের ক্ষেত্রে পণ্ডিত ভীমসেন জোশীর নাম সর্বদা সম্মান ও শ্রদ্ধার সাথে উচ্চারিত হয়। ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯২২ সালে কর্ণাটকের ধারওয়াড় জেলার রোঁ-তে জন্মগ্রহণ করেন ভীমসেন জোশী। তিনি তাঁর জীবনকে সংগীতের সর্বোচ্চ সাধনায় উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁর কণ্ঠ এবং গানের ধরণ তাঁকে কেবল ভারতেই নয়, আন্তর্জাতিক মঞ্চেও এক অনন্য পরিচিতি এনে দিয়েছে।

ভীমসেন জোশীর সংগীত জীবন কেবল প্রযুক্তিগত দক্ষতায় সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তাঁর গানে অনুভূতির এক অপূর্ব সমন্বয় এবং রাগগুলির গভীরতাও প্রতিফলিত হত। তিনি হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতের খেয়াল গানে পারদর্শী ছিলেন এবং ভক্তিগীতি যেমন ভজন ও অভঙ্গের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে তাঁর শিল্পকলা পৌঁছে দিয়েছিলেন। পণ্ডিত জোশীর সংগীত ঐতিহ্য কিরানা ঘরানার সাথে সম্পর্কিত ছিল এবং তিনি তাঁর গুরু পণ্ডিত সওয়াই গন্ধর্বের ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

প্রাথমিক জীবন এবং সঙ্গীতের প্রতি ঝোঁক

ভীমসেন জোশীর জন্ম একটি দেশস্থ মাধব ব্রাহ্মণ পরিবারে। তাঁর পিতা গুরুরাজ জোশী ছিলেন একজন শিক্ষক এবং মা অল্প বয়সে মারা যান। ১৬ ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় হওয়ায় ভীমসেনের উপর পারিবারিক responsibilities-ও ছিল। ছোটবেলা থেকেই তাঁর সঙ্গীত ও বাদ্যযন্ত্রের প্রতি গভীর আগ্রহ ছিল। তিনি প্রায়শই বাদ্যযন্ত্রের দলের সাথে শোভাযাত্রার পিছু নিতেন এবং ক্লান্ত হয়ে কোথাও ঘুমিয়ে যেতেন। তাঁর বাবা তাঁর নাম ও পরিচয়ের জন্য শার্টে "শিক্ষক জোশীর ছেলে" লিখে দিতেন, যাতে কেউ তাঁকে নিরাপদে বাড়ি ফিরিয়ে দিতে পারে।

তাঁর প্রথম সঙ্গীত শিক্ষা চন্নप्पा অফ কুর্টকোটীর কাছে হয়েছিল, যিনি তাঁকে রাগ ভৈরব এবং ভীমপলাশীর बारीकियां শিখিয়েছিলেন। এই প্রাথমিক প্রশিক্ষণ তাঁর ভবিষ্যতের অনন্য গানের শৈলীর ভিত্তি তৈরি করেছিল। ভীমসেন জোশী শৈশবেই সঙ্গীতকে তাঁর জীবনের সর্বোচ্চ উদ্দেশ্য হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন।

গুরুর খোঁজ এবং সওয়াই গন্ধর্বের কাছে প্রশিক্ষণ

ভীমসেন যখন ওস্তাদ আব্দুল করিম খানের ঠুমরি 'পিয়া বিন নহি आवत चैन' শোনার সুযোগ পান, তখন তাঁর সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগ আরও প্রবল হয়। এরপর তিনি পণ্ডিত সওয়াই গন্ধর্বের গানও শোনেন এবং তাঁর শিষ্য হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৩৩ সালে, মাত্র ১১ বছর বয়সে ভীমসেন তাঁর গুরুর সন্ধানে বিজাপুর এবং পরে পুনে, গোয়ালিয়র এবং অন্যান্য অনেক শহর ভ্রমণ করেন।

১৯৩৬ সালে, সওয়াই গন্ধর্ব তাঁকে তাঁর শিষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন। পণ্ডিত জোশী গুরু-শিষ্য পরম্পরা অনুসরণ করে তাঁর গুরুর বাড়িতে থেকে সঙ্গীতের গভীর শিক্ষা লাভ করেন। তাঁর वरिष्ठ সহ-শিক্ষার্থী ছিলেন গঙ্গুবাই হাঙ্গাল, যাঁকে তিনি অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন।

কেরিয়ারের শুরু এবং জনপ্রিয়তা

ভীমসেন জোশী ১৯৪১ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে তাঁর প্রথম জনসমক্ষে গান পরিবেশন করেন। ১৯৪২ সালে তাঁর প্রথম অ্যালবামে কিছু মারাঠি ও হিন্দি ভজন অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা "হিজ মাস্টার ভয়েস" প্রকাশ করে। ১৯৪৩ সালে মুম্বাইয়ে রেডিও শিল্পী হিসেবে যোগ দেওয়ার পর তাঁর কর্মজীবন দ্রুত প্রসারিত হতে শুরু করে।

১৯৪৬ সালে তাঁর গুরু সওয়াই গন্ধর্বের ৬০তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে তাঁর পরিবেশনা দর্শক এবং গুরু উভয়ের দ্বারাই অত্যন্ত প্রশংসিত হয়েছিল। এই পরিবেশনা তাঁকে জাতীয় পরিচিতি এনে দেয়।

হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতে অবদান

পণ্ডিত ভীমসেন জোশীর গানের বৈশিষ্ট্য ছিল তাঁর স্বাভাবিকতা, শুদ্ধ স্বর, দ্রুত এবং দীর্ঘ তানে দক্ষতা এবং তালের প্রতি তাঁর দক্ষতা। তিনি সুরেলা এবং দীর্ঘ আ-কার তানের अद्भुत प्रयोग করতেন, যা তাঁর অসাধারণ শ্বাস নিয়ন্ত্রণকে दर्शाता ছিল। যদিও তিনি সরগম তানের ব্যবহার কম করতেন, তবুও তাঁর গানে सहज এবং अप्रत्याशित मोड़ हमेशा मौजूद থাকত।

তাঁর পছন্দের রাগগুলির মধ্যে ছিল শুদ্ধ কল্যাণ, মিঞার তোড়ি, ভীমপলাশী, दरबारी, मलकोस, यमन এবং রামকলি। পণ্ডিত জোশী কখনই পরীক্ষামূলক সঙ্গীতে যাননি, তবে তিনি পণ্ডিত এম. বালমুরালী কৃষ্ণার সাথে যুগলবন্দী করে হিন্দুস্তানি এবং কর্ণাটকী শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের अद्भुत मिश्रण प्रस्तुत করেছিলেন।

ভক্তি ও राष्ट्रगीत

ভীমসেন জোশী শুধু শাস্ত্রীয় সংগীতেই নন, ভক্তি সঙ্গীতেও उत्कृष्ट ছিলেন। তিনি হিন্দি, মারাঠি এবং কন্নড় ভজন রেকর্ড করেছেন। তাঁর ভক্তি গানগুলি সাধারণ মানুষের হৃদয়ে গভীর ছাপ ফেলেছিল।

তাঁর জাতীয় পরিচয়কে আরও শক্তিশালী করেছে গান "মিলে সুর মেরা तुम्हारा" (১৯৮৮), যা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর অনুরোধে তিনি রচনা করেছিলেন। এই গানটি ভারতের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং एकताকে दर्शाता है। এছাড়া, তিনি ভারতের ৫০তম প্রজাতন্ত্র বর্ষ উপলক্ষে এ. আর. রহমানের সাথে "জন গণ মন"-এও অংশ নিয়েছিলেন।

সিনেমাতে অবদান এবং প্লেব্যাক सिंगिंग

পণ্ডিত ভীমসেন জোশী বেশ কয়েকটি সিনেমার জন্যও গান গেয়েছেন। এর মধ্যে হিন্দি চলচ্চিত্র "বসন্ত বাহার" (১৯৫৬), মারাঠি চলচ্চিত্র "स्वयंवर झाले সিটেচে" (১৯৬৪) এবং কন্নড় চলচ্চিত্র "संध्या राग" (১৯৬৬) রয়েছে। তিনি বাংলা চলচ্চিত্র "তানসেন" এবং বলিউড চলচ্চিত্র "अंकही" (১৯৮৫)-তেও গেয়েছেন, যেটিতে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পান।

সওয়াই গন্ধর্ব সংগীত উৎসব

ভীমসেন জোশী তাঁর গুরু সওয়াই গন্ধর্বের স্মৃতিতে ১৯৫৩ সালে পুনেতে সওয়াই গন্ধর্ব সংগীত উৎসবের প্রতিষ্ঠা করেন। এই উৎসব আজও প্রতি ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয় এবং হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীত প্রেমীদের জন্য একটি বার্ষিক तीर्थस्थल बन गया है। পণ্ডিত জোশী ২০০২ সাল পর্যন্ত এই উৎসবের আয়োজন করেছিলেন এবং এটিকে उच्चतम स्तर পর্যন্ত पहुंचा दिया।

পুরস্কার এবং সম্মান

ভীমসেন জোশী তাঁর জীবনকালে অনেক प्रतिष्ठित পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৯৮ সালে তাঁকে সঙ্গীত নাটক আকাদেমি ফেলোশিপ প্রদান করা হয়। ২০০৮ সালে তাঁকে ভারতের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান, ভারত रत्न প্রদান করা হয়। তাঁর জীবন ও অবদানকে স্মরণ করে ২০১৪ সালে ভারত পোস্ট তাঁর चित्रांकित ডাক टिकट जारी किया।

ব্যক্তিগত জীবন

ভীমসেন জোশী দুবার বিয়ে করেন। তাঁর প্রথম স্ত্রী ছিলেন সুনন্দা কাত্তি, তাঁর चार संतानें हुईं। ১৯৫১ সালে তিনি বৎসলা মুঢোলকরকেও বিয়ে করেন और उनके तीन बच्चे हुए। তিনি মদ্যপানের অভ্যাস ১৯৭০ এর দশকে পুরোপুরি ত্যাগ করেন। এছাড়া, তিনি গাড়ি এবং অটো মেকানিক্স সম্পর্কেও গভীর জ্ঞান রাখতেন।

স্বাস্থ্য এবং निधन

ভীমসেন জোশীকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১০ সালে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ब्लीडिंग এবং दुष्ट निमोनिया-র কারণে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তিনি ২৪ জানুয়ারি ২০১১ সালে পুনেতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর শেষকৃত্য বৈকুণ্ঠ क्रेमेटोरियम-এ पूर्ण राज्य सम्मान-এর সাথে সম্পন্ন হয়েছিল।

পণ্ডিত ভীমসেন জোশী কেবল একজন অদ্বিতীয় গায়ক ছিলেন না, বরং ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সত্যিকারের संरक्षक और प्रेरकও ছিলেন। তাঁর জীবন ও গান সংগীত প্রেমীদের হৃদয়ে अमिट छाप छोड़ी है। তাঁর সরলতা, ভক্তি এবং रागों में गहनता ने उन्हें राष्ट्रव्यापी सम्मान दिलाया। ভীমসেন জোশীর গান আজও नई पीढ़ी के लिए प्रेरणा का स्रोत है এবং তাঁর धरोहर ভারতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে हमेशा जीवित रहेगी।

Leave a comment