ওয়াইএস জগন রেড্ডি কর্তৃক পুলিশ আধিকারিকদের 'মাফিয়া' বলায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানালেন উপমুখ্যমন্ত্রী পবন কল্যাণ। তিনি এটিকে স্বৈরাচারী শাসন বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন যে এখন সেই আধিকারিকদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
পবন কল্যাণ নাকি জগন মোহন রেড্ডি: অন্ধ্রপ্রদেশের রাজনীতিতে আবারও শুরু হয়েছে বাগযুদ্ধ। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং ওয়াইএসআর কংগ্রেস পার্টির প্রধান ওয়াইএস জগন মোহন রেড্ডি পুলিশ আধিকারিকদের ‘মাফিয়া ডন’ আখ্যা দিয়েছেন, যার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী এবং জনসেনা প্রধান পবন কল্যাণ বলেছেন – 'এখন তাঁর কথা শুনলে হাসি পায়।' এই বিতর্ক রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছে এবং জনগণের মধ্যে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
বিতর্কের শুরু: 'মাফিয়া ডন' ডিআইজি-দের বিবৃতি
ওয়াইএস জগন মোহন রেড্ডি সম্প্রতি একটি জনসভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় দাবি করেছেন যে রাজ্যের সমস্ত ডিআইজি (DIG) নিজ নিজ এলাকায় মাফিয়া ডনের মতো কাজ করছেন। তিনি বলেন যে এই আধিকারিকরা মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু এবং তাঁর ছেলে নারা লোকেশের জন্য 'তোলা আদায়কারী এজেন্ট'-এর ভূমিকা পালন করছেন। জগন আরও অভিযোগ করেন যে মদ, বালি, ক্লাব, খনি এবং শিল্প থেকে তোলা টাকা দুই ভাগে ভাগ করা হয় – অর্ধেক পুলিশ এবং স্থানীয় বিধায়কদের মধ্যে এবং অর্ধেক মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর ছেলের কাছে যায়।
পবন কল্যাণের কড়া জবাব
জগন রেড্ডির এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপমুখ্যমন্ত্রী পবন কল্যাণ শুধু ক্ষোভই প্রকাশ করেননি, বরং ব্যঙ্গ করে বলেছেন – 'যখনই তিনি এমন কথা বলেন, আমার হাসি পায়। কারণ এ কথা সেই ব্যক্তি বলছেন যিনি নিজে স্বৈরাচারী শাসন চালিয়েছিলেন। এখন নিজেকে সাধু প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন।'
পবন কল্যাণ অভিযোগ করেন যে জগন তাঁর আগের মেয়াদে পুলিশ ব্যবস্থাকে মাফিয়ার মতোই ব্যবহার করেছিলেন। তিনি বলেন, 'আজ যে আধিকারিকদের জেলে পাঠানো হয়েছে বা যারা আগে জেলে ছিলেন – তাঁরাই আগে মাফিয়ার স্টাইলে শাসন চালাতেন। এখন যখন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তখন তিনি নিজেকে ভুক্তভোগী বলছেন।'
আগের সরকারকে 'স্বৈরাচারী শাসন' বলা হল
পবন কল্যাণ জগন মোহন রেড্ডির আগের ওয়াইএসআরসিপি সরকারকে সরাসরি 'স্বৈরাচারী শাসন'-এর আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন যে সেই সময় বিরোধী নেতা, কর্মী এবং এমনকি সাধারণ নাগরিকদের ওপরও অত্যাচার করা হয়েছিল। তিনি বলেন, 'আমি নিজে সেই সময়ের শিকার ছিলাম। এমনকি চন্দ্রবাবু নাইডুও সেই শাসনের শিকার হয়েছিলেন। আজ বিধানসভার ৭০-৮০ শতাংশ সদস্য সেই পুরোনো শাসনের অত্যাচারে কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।'
পুলিশ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: জবাবে কঠোরতা
পবন কল্যাণ স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে বর্তমান জোট সরকার এখন সেই পুলিশ আধিকারিকদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিচ্ছে যারা আগে রাজনৈতিক স্বার্থে আইনকে লঙ্ঘন করেছিলেন। তিনি বলেন যে আজ যাদের ওপর খাঁড়া নেমে এসেছে, তাঁরাই সেই ব্যক্তি যারা গণতন্ত্রের মর্যাদা লঙ্ঘন করেছিলেন। 'আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। আইন মেনেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।'
অবৈধ মদ ও বালির কারবার: কে সঠিক?
জগন রেড্ডি আরও দাবি করেছেন যে বর্তমান সরকারের নাকের ডগায় অবৈধ মদের দোকান (বেল্ট শপ) চলছে, এবং বালিকে 'ফ্রি' দেখিয়ে আসলে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করা হচ্ছে। তাঁর অভিযোগ ছিল যে যেখানে ওয়াইএসআরসিপি শাসনের সময় বালি থেকে বার্ষিক ৭৫০ কোটি টাকা রাজস্ব আসত, সেখানে এখন বালির লুটপাট চলছে। এর জবাবে সরকার জানিয়েছে যে 'বালি বিনামূল্যে দেওয়ার নীতি জনগণের জন্য, তবে যদি কোথাও কোনো অনিয়ম হয়, তবে তার বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'