আমেরিকা ও জাপানের মধ্যে একটি বৃহৎ বাণিজ্যিক চুক্তি ঘোষিত হয়েছে, যাকে আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প "এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক চুক্তি" বলে অভিহিত করেছেন। ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম 'ট্রুথ সোश্যাল'-এর মাধ্যমে এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এই চুক্তির অধীনে জাপান আমেরিকাতে 550 বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে এবং এর বিনিময়ে আমেরিকা মোট 90 শতাংশ লাভ পাবে।
550 বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা
ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতে, জাপান আমেরিকাতে 550 বিলিয়ন ডলারের বিশাল বিনিয়োগ করবে। যদিও এই বিনিয়োগের সঠিক বিবরণ এখনও জনসমক্ষে আসেনি যে এই অর্থ কোন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা হবে, তবে মনে করা হচ্ছে যে এতে অটোমোবাইল, প্রযুক্তি, কৃষি এবং শিল্প ক্ষেত্রগুলির একটি বড় অংশ থাকতে পারে।
ট্রাম্প বলেছেন যে এই চুক্তির ফলে আমেরিকাতে লক্ষ লক্ষ নতুন চাকরির সৃষ্টি হবে। তিনি এটিকে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন, যা এর আগে কোনও সরকার করেনি।
জাপান 15 শতাংশ শুল্ক দেবে, অভ্যন্তরীণ বাজার খুলবে
এই চুক্তিতে আমেরিকার একটি বড় দাবি ছিল জাপান তাদের দেশের বাজারগুলি আমেরিকান সংস্থাগুলির জন্য খুলে দিক। ট্রাম্প বলেছেন যে এখন জাপান তাদের দরজা খুলতে প্রস্তুত হয়েছে। এতে বিশেষ করে গাড়ি, ট্রাক, চাল এবং অন্যান্য কিছু কৃষি পণ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
পাশাপাশি ট্রাম্প এও জানিয়েছেন যে জাপান আমেরিকাকে 15 শতাংশ শুল্ক দেবে। এতে আমেরিকা সরাসরি লাভবান হবে, যেখানে জাপান আমেরিকান প্রযুক্তি এবং পণ্যগুলিতে আরও বেশি প্রবেশাধিকার পাবে।
আমেরিকার তরফে লাভের দাবি
ট্রাম্প দাবি করেছেন যে এই চুক্তি থেকে আমেরিকা 90 শতাংশ লাভবান হবে। যদিও এই লাভের হিসাব কোন ভিত্তিতে করা হয়েছে, সে বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। এখনও পর্যন্ত এই চুক্তির কোনও আইনি নথিও প্রকাশ করা হয়নি। তবে ট্রাম্পের দাবি, এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে লাভজনক বাণিজ্যিক চুক্তি।
চাল এবং গাড়ি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে ছিল বিতর্ক
আমেরিকা ও জাপানের মধ্যে বাণিজ্যিক বিরোধে চালের বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে। ট্রাম্প বহুবার প্রকাশ্যে বলেছেন যে জাপান আমেরিকান চাল কেনে না, যদিও তাদের এটির প্রয়োজন। এই চুক্তির অধীনে এখন জাপানকে আমেরিকান চালের জন্যও তাদের দরজা খুলতে হবে।
অন্যদিকে, আমেরিকান গাড়ি সংস্থাগুলিও দীর্ঘ দিন ধরে জাপানের বাজারে প্রবেশ করা নিয়ে অভিযোগ করে আসছে। ট্রাম্প সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বলেছিলেন যে জাপান গত 10 বছরে আমেরিকা থেকে একটিও গাড়ি কেনেনি। যদিও জাপান অটোমোবাইল ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিসংখ্যান বলছে যে 2024 সালে জাপান 16,707টি আমেরিকান গাড়ি কিনেছিল।
ট্রেড ব্যালেন্স এবং বিনিয়োগের পরিসংখ্যান
2024 সালে জাপান আমেরিকার জন্য পঞ্চম বৃহত্তম আমদানিকারক ছিল। তারা আমেরিকা থেকে মোট 148 বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, যার মধ্যে প্রধানত গাড়ি, অটো পার্টস এবং মেশিনারি অন্তর্ভুক্ত ছিল। অন্যদিকে আমেরিকা জাপানকে 80 বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করেছে, যার মধ্যে পেট্রোলিয়াম পণ্য, ওষুধ এবং এরোস্পেস প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এছাড়াও জাপান আমেরিকান ট্রেজারি বন্ডের বৃহত্তম বিদেশি ধারক। তাদের কাছে 1.1 ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি আমেরিকান ট্রেজারি সিকিউরিটিজ রয়েছে। এতে স্পষ্ট যে জাপান আগে থেকেই আমেরিকার অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
চুক্তির পেছনের কূটনীতি
এই চুক্তিটি কয়েক মাস ধরে আটকে ছিল এবং উভয় দেশের মধ্যে শুল্ক নিয়ে উত্তেজনা ছিল। আমেরিকার পক্ষ থেকে বারবার জাপানের উপর চাপ দেওয়া হচ্ছিল যাতে তারা তাদের বাজার আমেরিকান পণ্যের জন্য খুলে দেয়। একই সময়ে জাপানও তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থের কথা বিবেচনা করে টালবাহানা করছিল।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পের চাপ এবং বাণিজ্যিক কৌশলের কাছে জাপানকে নতি স্বীকার করতে হয়েছে এবং এই চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে। এই চুক্তি এমন এক সময়ে এসেছে যখন বিশ্ব বাণিজ্যে আমেরিকার দখল দুর্বল হয়ে যাচ্ছিল এবং চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তি নিয়ে আমেরিকা উদ্বিগ্ন ছিল।
এখনও পর্যন্ত সরকারি নথি প্রকাশ করা হয়নি
এই চুক্তি নিয়ে এখনও পর্যন্ত আমেরিকা ও জাপান কোনও দেশের পক্ষ থেকেই কোনও আনুষ্ঠানিক চুক্তিপত্র জারি করা হয়নি। শুধুমাত্র ট্রাম্পের বিবৃতি এবং দাবির ভিত্তিতেই তথ্য পাওয়া গেছে। এই কারণেই বাণিজ্য মহল এখনও এই চুক্তির প্রযুক্তিগত এবং অর্থনৈতিক দিকগুলির জন্য অপেক্ষা করছে।