করোনা পরবর্তী সময়ের সহায়তা প্রকল্প
করোনার দাপটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন হকার ও ফুটপাথ ব্যবসায়ীরা। একেবারে শূন্য থেকে শুরু করতে হয়েছিল তাঁদের। এই প্রেক্ষিতেই ২০২০ সালে কেন্দ্র চালু করে প্রধানমন্ত্রী স্ট্রিট ভেন্ডরস আত্মনির্ভর নিধি, সংক্ষেপে প্রধানমন্ত্রী স্বনিধি যোজনা। প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্যবসায়ীদের গ্যারান্টি ছাড়াই ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করা।
৮০ হাজার নয়, এবার মিলবে ৯০ হাজার টাকা
প্রকল্পের শুরুতে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণের সুবিধা দেওয়া হতো। কিন্তু নতুন সিদ্ধান্তে কেন্দ্রীয় সরকার সেই সীমা আরও বাড়িয়ে দিল। এখন একজন সুবিধাভোগী সর্বোচ্চ ৯০,০০০ টাকা পর্যন্ত গ্যারান্টি-মুক্ত ঋণ পেতে পারবেন। এর ফলে লক্ষ লক্ষ হকার ও ছোট ব্যবসায়ী স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন।
সময়সীমা বাড়ল ২০৩০ সাল পর্যন্ত
কেবল ঋণের পরিমাণই নয়, প্রকল্পের মেয়াদকালও আরও দীর্ঘ হলো। প্রধানমন্ত্রী স্বনিধি যোজনার সুবিধা এবার ৩১ মার্চ ২০৩০ পর্যন্ত পাওয়া যাবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর গৃহ ও নগর বিষয়ক মন্ত্রক এবং আর্থিক পরিষেবা বিভাগ যৌথভাবে প্রকল্পটি চালাবে। এতে সরকারের কোষাগার থেকে প্রায় ৭,৩৩২ কোটি টাকা খরচ হবে বলে জানা গিয়েছে।
১.১৫ কোটি হকার উপকৃত হবেন
সরকারি অনুমান অনুযায়ী, এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রায় ১.১৫ কোটি হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সরাসরি উপকৃত হবেন। এর মধ্যে প্রায় ৫০ লক্ষ নতুন সুবিধাভোগীও রয়েছেন। অর্থাৎ আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে এই স্বনিধি প্রকল্প। শহর ও মফস্বল মিলিয়ে ব্যবসায়িক পরিবেশে যে নতুন প্রাণসঞ্চার হবে, তা স্পষ্ট।
কিস্তিতে দেওয়া হবে ঋণ
প্রকল্প অনুযায়ী, ঋণ একবারে নয়, ধাপে ধাপে দেওয়া হবে। প্রথম পর্যায়ে ১৫,০০০ টাকা, দ্বিতীয় পর্যায়ে ২৫,০০০ টাকা এবং তৃতীয় পর্যায়ে ৫০,০০০ টাকা ঋণ পাবেন সুবিধাভোগীরা। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আগের ঋণ শোধ করতে পারলেই পরের ধাপে আরও বড় অঙ্কের ঋণ মিলবে। এই ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় ব্যবসায়ীরা ধাপে ধাপে নিজেদের কাজ বিস্তৃত করার সুযোগ পাবেন।
ইতিমধ্যেই লক্ষাধিক মানুষ উপকৃত
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ৩০ জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৬৮ লক্ষেরও বেশি ব্যবসায়ী প্রায় ১৩,৭৯৭ কোটি টাকার ঋণ পেয়েছেন। মোট ঋণ বিতরণের সংখ্যা ৯৬ লক্ষ ছাড়িয়েছে। আরও বড় চমক, প্রায় ৪৭ লক্ষ সুবিধাভোগী ইতিমধ্যেই ডিজিটাল লেনদেনে যুক্ত হয়েছেন। তাদের মাধ্যমে ৬.০৯ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি ৫৫৭ কোটি লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে।
আধার কার্ড থাকলেই মিলবে ঋণ
এই ঋণের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো—কোনও গ্যারান্টি দিতে হবে না, বন্ধক রাখতে হবে না। আবেদনকারীকে কেবল আধার কার্ড দেখালেই চলবে। এরপর কিস্তি অনুসারে টাকা পাওয়া যাবে। তবে শর্ত, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা শোধ করতে হবে। চাইলে EMI সুবিধাও রয়েছে, যা সাধারণ ব্যবসায়ীদের জন্য অনেকটাই স্বস্তিদায়ক।
Rupay ক্রেডিট কার্ডের বাড়তি সুযোগ
যেসব সুবিধাভোগী দ্বিতীয় কিস্তির ঋণ সময়মতো শোধ করবেন, তাঁরা পাবেন ইউপিআই-লিঙ্ক Rupay ক্রেডিট কার্ড। এর মাধ্যমে ব্যবসায়িক বা ব্যক্তিগত খরচ নির্বিঘ্নে মেটানো যাবে। শুধু তাই নয়, ডিজিটাল লেনদেনকে উৎসাহ দিতে সর্বোচ্চ ১,৬০০ টাকা পর্যন্ত ক্যাশব্যাক সুবিধাও দেওয়া হবে।
ব্যবসায়ীদের জন্য বড় ভরসা
ছোট ব্যবসা বা ফুটপাতের হকারদের জীবনে প্রায়ই দেখা দেয় আর্থিক অনিশ্চয়তা। অনেক সময় ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া সম্ভব হয় না, কারণ গ্যারান্টি বা জামিন দিতে পারেন না তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী স্বনিধি যোজনা তাঁদের জন্য বড় ভরসা হয়ে উঠেছে। গ্যারান্টি ছাড়াই ধাপে ধাপে ঋণ পেয়ে তাঁরা আবার ব্যবসা শুরু করতে পারছেন।
সরকারের লক্ষ্য আরও বিস্তৃত
এই প্রকল্পের সম্প্রসারণের মাধ্যমে কেন্দ্র সরকারের লক্ষ্য আরও স্পষ্ট হয়েছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি তাঁদের ডিজিটাল পদ্ধতির সঙ্গে যুক্ত করা এবং আর্থিক শৃঙ্খলা তৈরি করাই মূল উদ্দেশ্য। ২০৩০ সাল পর্যন্ত এই প্রকল্প চালু থাকার ফলে আগামী কয়েক বছরে ভারতের ক্ষুদ্র ব্যবসা খাতে এক নতুন দিগন্ত খুলে যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।