আগামী দশকে ভারতে ১১ লক্ষ কোটি টাকায় তৈরি হবে ১৭,০০০ কিমি উচ্চ-গতির সড়ক নেটওয়ার্ক

আগামী দশকে ভারতে ১১ লক্ষ কোটি টাকায় তৈরি হবে ১৭,০০০ কিমি উচ্চ-গতির সড়ক নেটওয়ার্ক

ভারত সরকার আগামী দশকে উচ্চ-গতির সড়ক নেটওয়ার্ক পাঁচগুণ সম্প্রসারণের জন্য ১১ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় করবে। এর অধীনে ১৭,০০০ কিমি রাস্তা তৈরি করা হবে, যেখানে ১২০ কিমি/ঘন্টা গতিতে ভ্রমণ সম্ভব হবে। ৪০% প্রকল্প ইতিমধ্যে নির্মাণাধীন রয়েছে এবং বাকিগুলো ২০৩৩ সালের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। 

High speed road network: ভারত তার উচ্চ-গতির সড়ক নেটওয়ার্ককে উন্নত করার জন্য প্রায় ১১ লক্ষ কোটি টাকার একটি মেগা পরিকল্পনা তৈরি করেছে, যার অধীনে ২০৩৩ সালের মধ্যে ১৭,০০০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হবে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হল লজিস্টিক খরচ কমানো এবং দ্রুত ও নিরাপদ সংযোগ নিশ্চিত করা। প্রায় ৪০% নেটওয়ার্ক ইতিমধ্যে নির্মাণাধীন রয়েছে এবং বাকি করিডোরগুলোতে ২০২৮ সালের মধ্যে কাজ শুরু হবে। সরকার হাইব্রিড অ্যানুইটি ও বিওটি মডেলের মাধ্যমে ব্যক্তিগত বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে, যেখানে আদানি সহ বেশ কয়েকটি বৈশ্বিক কোম্পানি বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে।

৪০ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যে চলছে

এই মেগা প্রকল্পের প্রায় ৪০ শতাংশ অংশ ইতিমধ্যে নির্মাণাধীন। অনুমান করা হচ্ছে যে এর একটি বড় অংশ ২০৩০ সালের মধ্যে শেষ হবে, যেখানে বাকি করিডোরগুলোতে ২০২৮ সালে কাজ শুরু হয়ে ২০৩৩ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার আশা করা হচ্ছে। সরকারের পরিকল্পনা হল বিনিয়োগ এবং নির্মাণের গতি ভারসাম্যপূর্ণ রাখতে এই নেটওয়ার্কটি পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন করা।

ভারতের এই প্রচেষ্টা বিশ্বব্যাপীও গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। চীন ১৯৯০-এর দশক থেকে এ পর্যন্ত ১.৮০ লক্ষ কিলোমিটারের বেশি এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করেছে, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৭৫,০০০ কিলোমিটারের বেশি ইন্টারস্টেট হাইওয়ে রয়েছে। ভারতের পরিকল্পনা এই দেশগুলোর তুলনায় ছোট হলেও এর বৈশিষ্ট্য হল দ্রুত সময়সীমা এবং বিনিয়োগ সংগ্রহের নতুন মডেল।

বিনিয়োগের জন্য নতুন মডেল

সরকার এই প্রকল্পে ব্যক্তিগত কোম্পানিগুলির অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন মডেল গ্রহণ করছে। যে প্রকল্পগুলোতে ১৫ শতাংশ বা তার বেশি রিটার্ন পাওয়ার আশা করা হচ্ছে, সেগুলোকে বিল্ড-অপারেট-ট্রান্সফার অর্থাৎ বিওটি মডেলে নিলাম করা হবে। এতে কোম্পানিগুলি রাস্তা তৈরি করে টোল আদায়ের মাধ্যমে তাদের খরচ তুলে নিতে পারবে। অন্যদিকে, যে প্রকল্পগুলোতে কম রিটার্নের অনুমান করা হচ্ছে, সেগুলোর জন্য হাইব্রিড অ্যানুইটি মডেল গ্রহণ করা হবে। এই মডেলে সরকার নির্মাণ খরচের ৪০ শতাংশ অগ্রিম প্রদান করে এবং বাকি পরিশোধ একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে করা হয়।

ব্যক্তিগত কোম্পানিগুলির অংশগ্রহণ

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সড়ক খাতে ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমেছে, তবে সরকার আশা করছে যে এই নতুন পরিকল্পনায় ব্যক্তিগত কোম্পানিগুলি পুনরায় আকৃষ্ট হবে। বর্তমানে নির্মাণাধীন বেশিরভাগ প্রকল্প হাইব্রিড অ্যানুইটি মডেলে চলছে। সরকার চায় যে আগামী প্রকল্পগুলোতে বিওটি মডেলেও বেশি বিড পাওয়া যায়।

দেশের জাতীয় সড়ক নেটওয়ার্কের উন্নয়নের দায়িত্ব ভারতীয় জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ এনএইচএআই-এর উপর ন্যস্ত। গত আর্থিক বছরে এনএইচএআই নির্মাণে রেকর্ড ২.৫ ট্রিলিয়ন টাকা ব্যয় করেছে, যা গত বছরের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি। এখন সরকার আগামী আর্থিক বছরের জন্য সড়ক ও মহাসড়কে ব্যয় বাড়িয়ে ২.৯ ট্রিলিয়ন টাকা করার ঘোষণা দিয়েছে।

বড় বিনিয়োগকারীরা অংশ নেবেন

এই প্রকল্পে বেশ কয়েকটি বড় বিনিয়োগকারী কোম্পানি আগ্রহ দেখাচ্ছে। ব্রুকফিল্ড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট, ব্ল্যাকস্টোন, ম্যাক্কারি গ্রুপ এবং কানাডা পেনশন প্ল্যান ইনভেস্টমেন্ট বোর্ড বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এছাড়াও, আদানি গোষ্ঠী রাস্তা সহ অবকাঠামোতে ১৮.৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নীতিগত সমর্থন এবং প্রকল্পগুলির বিশাল আকারের কারণে আগামী তিন বছরে ভারতের পরিকাঠামো খাতে বিপুল পরিমাণ বিদেশী বিনিয়োগ আসতে পারে।

লজিস্টিক সেক্টর উপকৃত হবে

উচ্চ-গতির সড়ক নেটওয়ার্ক তৈরি হওয়ার পর ভারতের লজিস্টিক সেক্টর সরাসরি উপকৃত হবে। দ্রুত এবং নিরাপদ সংযোগের ফলে পণ্য পরিবহনের সময় কমবে এবং জ্বালানী খরচও হ্রাস পাবে। এটি শিল্প ও বাণিজ্যকে স্বস্তি দেবে এবং দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে।

Leave a comment