গর্ভাবস্থার প্রস্তুতিতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং পুষ্টি অত্যন্ত জরুরি। প্রথম ট্রাইমেস্টারে ফলিক অ্যাসিড, দুধ ও ফল খান, দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারে ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন দুধ, পনির এবং মাছ নিন, যখন তৃতীয় ট্রাইমেস্টারে প্রোটিন ও আয়রনের ওপর মনোযোগ দিন। জাঙ্ক ফুড, আধা সেদ্ধ খাবার, অতিরিক্ত ক্যাফেইন এবং মাদকদ্রব্য এড়িয়ে চলুন।
Pregnancy Diet Guide: গর্ভাবস্থার প্রস্তুতি কেবল মানসিক নয়, শারীরিক এবং পুষ্টির দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ চঞ্চল শর্মার মতে, সুষম খাদ্যাভ্যাস মা ও শিশু উভয়ের স্বাস্থ্যকে উন্নত রাখে এবং গর্ভাবস্থার যাত্রা মসৃণ হয়। প্রথম ট্রাইমেস্টারে ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ সবজি, ফল এবং দুধ গ্রহণ করুন; দ্বিতীয়টিতে ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন; এবং তৃতীয়টিতে প্রোটিন ও আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের পাশাপাশি হাইড্রেশনের দিকে মনোযোগ দিন। একই সাথে, জাঙ্ক ফুড, অতিরিক্ত চা-কফি এবং মাদকদ্রব্য পরিহার করা জরুরি।
গর্ভাবস্থায় পুষ্টির গুরুত্ব
গর্ভাবস্থায় নারীর শরীরে নানা ধরনের শারীরিক ও হরমোনজনিত পরিবর্তন আসে। এই পরিবর্তনের কারণে শরীরের অতিরিক্ত পুষ্টির প্রয়োজন হয়। যদি নারী এই সময় সুষম ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করেন, তাহলে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী থাকে এবং গর্ভস্থ শিশুর সঠিক বিকাশ ঘটে। ডাঃ চঞ্চল শর্মার মতে, গর্ভাবস্থায় খাদ্যাভ্যাসে পুষ্টিকর জিনিস অন্তর্ভুক্ত করলে মা ও শিশু উভয়ই উপকৃত হন।
প্রথম ট্রাইমেস্টারে কী খাবেন
গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস অত্যন্ত সংবেদনশীল বলে বিবেচিত হয়। এই সময়ে শিশুর ভিত্তি তৈরি হয়। তাই এই সময় খাদ্যে ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাদ্যদ্রব্য অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। সবুজ শাকসবজি, পালং শাক, ব্রোকলি-এর মতো জিনিস এই সময়ে খুব উপকারী। এর সাথে ডালিম, কলা, দুধ, দই এবং ডিমের মতো পুষ্টিগুণে ভরপুর খাবার গ্রহণ করা উচিত। পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করাও জরুরি যাতে শরীর হাইড্রেটেড ও পুষ্টিযুক্ত থাকে।
দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারে কী খাবেন
দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারে, অর্থাৎ চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ মাস পর্যন্ত, শিশুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকশিত হতে শুরু করে। এই সময়ে নারীর শরীরের প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামের বেশি প্রয়োজন হয়। তাই এই সময় বাদাম, দুধ, দই, ডিম, পনির, মাছ এবং গোটা শস্য জাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত। এছাড়া হালকা ব্যায়াম বা প্রতিদিন হাঁটাহাঁটি করাও উপকারী। এটি কেবল শরীরকে সক্রিয় রাখে না, বরং রক্ত সঞ্চালনকেও উন্নত রাখে।
তৃতীয় ট্রাইমেস্টারে কী খাবেন
সপ্তম থেকে নবম মাস পর্যন্ত সময় গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়। এই সময়ে শিশুর ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তাই এই সময় শরীরের প্রোটিন ও আয়রন সমৃদ্ধ আহারের প্রয়োজন হয়। সবুজ শাকসবজি, ডাল, শুকনো ফল (ড্রাই ফ্রুটস), গোটা শস্য এবং তাজা ফল ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এই সময় শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা অত্যন্ত জরুরি, তাই ডাবের জল এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা উচিত।
গর্ভাবস্থায় কী খাবেন না
গর্ভাবস্থার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এমন মহিলাদের কিছু জিনিস থেকে দূরে থাকা জরুরি। বেশি চা বা কফি পান করা উচিত নয়। আধা সেদ্ধ, প্রক্রিয়াজাত বা প্যাকেটজাত খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। জাঙ্ক ফুড এবং ভাজাভুজি খাবার এই সময়ে ক্ষতিকারক হতে পারে। মদ, সিগারেট এবং অন্যান্য মাদকদ্রব্য সম্পূর্ণরূপে পরিহার করা জরুরি। যদি শরীরে কোনো সমস্যা বা অসুস্থতা অনুভব হয়, তাহলে অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং সুস্থ জীবনযাপন
গর্ভাবস্থার প্রস্তুতিতে সুষম খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি জীবনযাপনও গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত ব্যায়াম এবং চাপমুক্ত থাকা এই সময় উপকারী। সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং সুস্থ জীবনযাপন গ্রহণ করলে গর্ভাবস্থার প্রক্রিয়া সহজ হয় এবং শিশুর বিকাশে সাহায্য করে।