গর্ভকালীন খাদ্যাভ্যাস: পেঁপে ও আনারস খাওয়া কি ঝুঁকিপূর্ণ? চিকিৎসকরা কী বলছেন

গর্ভকালীন খাদ্যাভ্যাস: পেঁপে ও আনারস খাওয়া কি ঝুঁকিপূর্ণ? চিকিৎসকরা কী বলছেন

গর্ভাবস্থায় খাদ্য বাছাইয়ে সতর্কতা জরুরি: অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের খিদে সাধারণত স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি থাকে। হরমোনের পরিবর্তনের কারণে স্বাদের ভিন্নতা দেখা যায়, ফলে অচেনা বা পছন্দের বাইরের খাবার খাওয়ার ইচ্ছে বেড়ে যায়। কিন্তু সব খাবার তখন খাওয়া যায় না। চিকিৎসকেরা বারবার সতর্ক করে দেন, কারণ কিছু খাবার মা ও গর্ভস্থ শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

আনারস নিয়ে সতর্কতা

বিশেষজ্ঞদের মতে, গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস আনারস না খাওয়াই ভালো। আনারসে ‘ব্রোমিলিন’ নামে একটি উৎসেচক থাকে। অতিরিক্ত মাত্রায় এটি জরায়ুর সংকোচন ঘটাতে পারে, ফলে অকাল প্রসব বা গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে। যদিও পরিমাণে কম খেলে ক্ষতি হয় কি না তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত প্রমাণ নেই, তবে ঝুঁকি এড়াতে চিকিৎসকেরা আনারস বর্জনের পরামর্শ দেন।

পেঁপে নিয়ে বিতর্ক

কাঁচা পেঁপেতে থাকে ‘প্যাপেইন’ নামক একটি উৎসেচক। এটি জরায়ুর সংকোচন বাড়াতে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে গর্ভপাতের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে দাবি রয়েছে। তবে এই তত্ত্ব নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। বিদেশের অনেক দেশে এ নিয়ে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। চিকিৎসক ইন্দ্রনীল সাহার মতে, “পেঁপে বা আনারস গর্ভপাত ঘটায়—এমন কোনও হাতেগরম বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। তবে কাঁচা পেঁপে ও অতিরিক্ত আনারস খাওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকা ভালো।”

আর কোন খাবার এড়ানো উচিত?

শুধু পেঁপে-আনারস নয়, আরও কিছু খাবার আছে যা গর্ভাবস্থায় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে—

আঙুর: এতে প্রচুর কীটনাশক ব্যবহার হয়, যা মা ও শিশুর জন্য ক্ষতিকর।

আজিনামোটো দেওয়া খাবার: এতে মাথা ঘোরা, বমি ভাব, এমনকি স্নায়ুতন্ত্রে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।

চিংড়ি বা সি-ফুড: অনেক সময় ভালভাবে রান্না না হওয়ায় ব্যাকটেরিয়া রয়ে যায়, যা সংক্রমণ বা অ্যালার্জি ঘটাতে পারে।

কাঁচা সবজি: এতে পোকা ও পরজীবী থাকার সম্ভাবনা থাকে, যা পেটে গেলে মা ও শিশুর ক্ষতি করতে পারে।

ভ্রান্ত ধারণা দূর করা দরকার

অনেকের বিশ্বাস, গর্ভাবস্থায় সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ দেখলে গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা স্পষ্ট জানিয়েছেন—এমন কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বরং বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত তথ্যের উপর নির্ভর করে খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলাই নিরাপদ।

চিকিৎসকের পরামর্শই শেষ কথা

গর্ভাবস্থায় প্রতিটি মহিলার শরীর আলাদা। তাই কারও শরীরে যে খাবার সইবে, অন্য কারও ক্ষেত্রে তা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। ফলে ইন্টারনেটের গুজব বা লোকমুখে শোনা তথ্যের চেয়ে চিকিৎসকের ব্যক্তিগত পরামর্শই সবচেয়ে জরুরি। পুষ্টিকর খাবার, পর্যাপ্ত জল, বিশ্রাম এবং নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ—এই চারটি বিষয়ই মায়ের ও শিশুর সুস্থতার মূল চাবিকাঠি।

গর্ভাবস্থায় মায়ের খাদ্যাভ্যাস সরাসরি প্রভাব ফেলে গর্ভস্থ শিশুর সুস্থতায়। অনেক খাবার নিরাপদ হলেও কিছু খাবার নিয়ে রয়েছে বিতর্ক ও সতর্কবার্তা। বিশেষ করে পেঁপে ও আনারস—এই দুটি ফল নিয়ে গর্ভবতী মহিলাদের মনে তৈরি হয় নানান প্রশ্ন। চিকিৎসকদের মতে, কাঁচা পেঁপে ও আনারসে থাকা কিছু উপাদান ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, তবে বৈজ্ঞানিকভাবে সব দাবি সমর্থিত নয়। চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

Leave a comment