পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার মধ্যে ভাকরা খালের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে উত্তেজনা বাড়ছে। পাঞ্জাব সরকার হরিয়ানার কাছে ১১৩.২৪ কোটি টাকা বকেয়া দাবি করেছে। তারা বলেছে যে ভাকরা মূল লাইন খালের রক্ষণাবেক্ষণের কাজের জন্য এই টাকা দিতে হবে। পাঞ্জাবের অর্থমন্ত্রী হরপাল সিং চিমা বুধবার ক্যাবিনেট বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এই তথ্য জানান।
চিমা জানান, রাজ্য সরকার সম্প্রতি একটি অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা করে এই বকেয়া অর্থ খুঁজে পেয়েছে। এরপর পাঞ্জাব সরকার যথাযথ বিল পাঠিয়ে হরিয়ানা সরকারের কাছে এই টাকা চেয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন যে হরিয়ানা সরকার গত কয়েক বছর ধরে ভাকরা খালের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ দিচ্ছে না, যার কারণে পাঞ্জাবকে এখন এই বিপুল পরিমাণ বকেয়া বহন করতে হচ্ছে।
আগের সরকারগুলোকে দায়ী করলেন
অর্থমন্ত্রী এই বিষয়ে আগের রাজ্য সরকারগুলোকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। তিনি বলেন, আগের সরকারগুলো হরিয়ানার কাছ থেকে বকেয়া আদায়ের বিষয়ে কোনো গুরুত্ব দেয়নি, যার কারণে এই পরিমাণ টাকা বছরের পর বছর ধরে বকেয়া রয়ে গেছে। কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি জানান, হরিয়ানা সরকার দীর্ঘদিন ধরে ভাকরা খালের জন্য কোনো অর্থ পরিশোধ করছে না, অথচ খালের রক্ষণাবেক্ষণের সম্পূর্ণ দায়িত্ব পাঞ্জাবের।
চিমা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে পাঞ্জাব এখন এই বিষয়ে কোনো নমনীয়তা দেখাবে না এবং হরিয়ানা সরকারের কাছ থেকে যে কোনো মূল্যে এই বকেয়া আদায় করা হবে।
সিআইএসএফ মোতায়েন নিয়েও অসন্তোষ
পাঞ্জাব সরকার ভাকরা-নাঙ্গাল বাঁধ প্রকল্পস্থলে কেন্দ্রীয় শিল্প সুরক্ষা বাহিনী (সিআইএসএফ) মোতায়েন নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। অর্থমন্ত্রী হরপাল চিমা অভিযোগ করেছেন যে এটি কেন্দ্র সরকার এবং হরিয়ানার একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, যার মাধ্যমে পাঞ্জাবের জল সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, গত ৭০ বছর ধরে পাঞ্জাব পুলিশ বাঁধের নিরাপত্তার দায়িত্ব সামলাচ্ছে এবং এখন সিআইএসএফ মোতায়েন করা সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয়। তিনি আরো বলেন, রাজ্য সরকার এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে এবং পাঞ্জাব বিধানসভাও এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাশ করেছে। চিমা স্পষ্ট করে জানান যে পাঞ্জাব সিআইএসএফের মোতায়েন মেনে নেবে না এবং এর খরচও বহন করবে না। এই বিষয়ে আইনি পরামর্শ নেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু করা হয়েছে।
ভাকরা খাল প্রকল্প কী?
ভাকরা খাল প্রকল্প ভারতের বৃহত্তম এবং গুরুত্বপূর্ণ নদী উপত্যকা প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম। এর প্রধান উদ্দেশ্য হল সেচ ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদন। হিমাচল প্রদেশের বিলাসপুর জেলায় শতদ্রু নদীর উপর নির্মিত এই ভাকরা বাঁধের উচ্চতা প্রায় ২২৬ মিটার, যা এটিকে দেশের সবচেয়ে উঁচু কংক্রিট গ্র্যাভিটি বাঁধগুলোর মধ্যে অন্যতম করে তুলেছে।
এই প্রকল্পের শুরু হয়েছিল ১৯৪৮ সালে এবং এটি ১৯৬৩ সালে সম্পন্ন হয়েছিল। ভাকরা বাঁধ থেকে নির্গত বিশাল খাল ব্যবস্থা পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং রাজস্থানের লক্ষ লক্ষ হেক্টর কৃষি জমিকে সেচ সুবিধা প্রদান করে।
এই খাল ব্যবস্থার মোট দৈর্ঘ্য হাজার হাজার কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত এবং এটি তিনটি রাজ্যের কৃষি ক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে। পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং রাজস্থান এই প্রকল্প থেকে সরাসরি উপকৃত হয়েছে, যার ফলে এই রাজ্যগুলো 'ভারতের শস্য ভাণ্ডার' হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। এছাড়াও, দিল্লি এবং হিমাচল প্রদেশও এই প্রকল্প থেকে জল ও বিদ্যুৎ সরবরাহ পেয়ে থাকে।
দৃষ্টি এখন হরিয়ানার প্রতিক্রিয়ার দিকে
পাঞ্জাব সরকারের এই অবস্থানের পর এখন দেখার বিষয় হরিয়ানা সরকার কী প্রতিক্রিয়া দেখায়। হরিয়ানা কি এই বকেয়া পরিশোধ করবে নাকি এই বিষয়ে অন্য কোনো বিকল্প পথ বেছে নেবে, তা আগামী সময়ে স্পষ্ট হবে। তবে এটা নিশ্চিত যে ভাকরা খাল নিয়ে দুই রাজ্যের মধ্যে বিতর্ক এখন প্রকাশ্যে এসেছে, যার প্রভাব ভবিষ্যতের রাজনীতি এবং জলবণ্টন নীতির উপরও পড়তে পারে।