পূর্ব মেদিনীপুর কেঁপে উঠল পরপর দুর্ঘটনায়
শনিবার রাত নামতেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলা জুড়ে জাতীয় সড়ক ও রাজ্য সড়কে যেন মৃত্যু নৃত্য। পাঁশকুড়া থেকে তমলুক—সব জায়গায় একের পর এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে প্রাণ হারালেন অন্তত চারজন, আহত বহু মানুষ। আনন্দের সপ্তাহান্তের রাত মুহূর্তে পরিণত হল শোকের রাতে।
সিদ্ধা বাজারে ট্রাকের তাণ্ডব
রাত প্রায় ৯টা ৪০ মিনিট। ১৬ নম্বর জাতীয় সড়কের পাঁশকুড়ার সিদ্ধা বাজার তখনও মানুষের ভিড়ে সরগরম। হঠাৎই খড়গপুরগামী একটি ষোলো চাকার মালবাহী ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা মারে রাস্তার ধারে থাকা দুই দোকানে—একটি চায়ের দোকান এবং একটি মিষ্টির দোকান মুহূর্তে গুঁড়িয়ে যায়। ট্রাকের ধাক্কায় দোকানের ভিতরে থাকা মানুষদের রক্তাক্ত দেহ চারদিকে ছিটকে পড়ে।
তিনজনের মর্মান্তিক মৃত্যু
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সেক আমির উদ্দিন (৬২), আনসার পাখিরা (৪৮) ও মহিবুল শেখের (৫১)। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার পরে এলাকায় তীব্র চিৎকার, আর্তনাদ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এক ঘণ্টার চেষ্টায় পুলিশ ও প্রশাসনের সহায়তায় ক্রেন দিয়ে ট্রাক সরিয়ে জাতীয় সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।
ট্রাকচালকের অবিবেচনাপূর্ণ গতি
স্থানীয়রা অভিযোগ তুলেছেন, ট্রাকচালক অতিরিক্ত গতি ও অবহেলার কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন। সিদ্ধা বাজার এলাকায় প্রায়ই এমন দুর্ঘটনা ঘটছে, কিন্তু কার্যকরী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। দোকান ভেঙে পড়া ধ্বংসস্তূপে দীর্ঘক্ষণ আটকে ছিলেন আহতরা, যাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর।
মিলন নগর টোল প্লাজার কাছে নতুন দুর্ঘটনা
পাঁশকুড়ার রক্তাক্ত দৃশ্যের পর আরেকটি দুর্ঘটনা ঘটে ১১৬ নম্বর জাতীয় সড়কের মিলন নগর টোল প্লাজার কাছে। সেখানেও একটি গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে এক ব্যক্তি গুরুতর আহত হন এবং তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
কাপাসএড়িয়ায় ট্রাক বনাম ট্রাক সংঘর্ষ
কয়েক কিলোমিটার দূরে কাপাসএড়িয়া এলাকায় হলদিয়াগামী একটি ট্রাক সামনের দিক থেকে আসা আরেকটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি ধাক্কা খায়। সংঘর্ষ এতটাই তীব্র ছিল যে পেছনের ট্রাকের চালক ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। এখনো পর্যন্ত মৃত চালকের পরিচয় জানা যায়নি।
তমলুকে রাতের অন্ধকারে নতুন বিপর্যয়
এই ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তমলুক শহরের স্টেশন রোডে আরেকটি দুর্ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত এক ব্যক্তিকে তাম্রলিপ্ত গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
জেলায় শোকের ছায়া ও ক্ষোভ
এক রাতেই পরপর চারটি বড় দুর্ঘটনা জেলার সাধারণ মানুষকে হতবাক ও ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, জাতীয় ও রাজ্য সড়কে অতিরিক্ত গতি রোধে কঠোর নজরদারি ও স্পিড ব্রেকার স্থাপন জরুরি। প্রশাসন জানিয়েছে, প্রতিটি ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে এবং দায়ী চালকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।