ওড়িশার পুরী জেলার বালিহারচণ্ডী মন্দিরের কাছে এক দলিত ছাত্রীর উপর স্থানীয় যুবকদের গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। তিনজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যেখানে বিরোধী দলের নেতা নবীন পট্টনায়ক এবং অন্যান্য নেতারা সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
পুরী: ওড়িশার পুরী জেলার সমুদ্র সৈকতের কাছে এক দলিত ছাত্রীর উপর এক জঘন্য ঘটনায় সারা রাজ্য স্তম্ভিত। ঘটনাটি ব্রহ্মগিরি থানা এলাকার বালিহারচণ্ডী মন্দিরের কাছে দুপুরে ঘটে, যখন ওই তরুণী এবং তার পুরুষ সঙ্গী মন্দিরের কাছে সময় কাটাচ্ছিলেন। এই সময় স্থানীয় যুবকদের একটি দল তাদের ছবি ও ভিডিও তুলে টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকার করায়, দুই যুবক ছাত্রীটির উপর গণধর্ষণ করে, যখন তার সঙ্গীর হাত বেঁধে রাখা হয়েছিল। পুলিশ এই ঘটনায় তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে এবং চতুর্থজনের খোঁজ চলছে।
पीड़িতা এফআইআর দায়ের করেছেন
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি শনিবার ঘটেছিল, কিন্তু সোমবার সন্ধ্যায় पीड़िता এফআইআর দায়ের করেন। পুরীর এসপি প্রতীক সিং জানিয়েছেন যে, নির্যাতিতার মেডিকেল পরীক্ষা করিয়ে প্রয়োজনীয় প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রধান অভিযুক্তদের মধ্যে শিব সাহু এবং মনোজ সাহু ওরফে কালিয়া রয়েছেন। কালিয়াকে ওড়িশা-অন্ধ্র প্রদেশ সীমান্ত থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দুজনের বিরুদ্ধে বিএনএস এবং এসসি-এসটি अत्याचार প্রতিরোধ আইনের বিভিন্ন ধারার অধীনে মামলা রুজু করা হয়েছে। তৃতীয় ব্যক্তিকে पीड़िता ও তার সঙ্গীর উপর হামলার অভিযোগে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে যে এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধের জন্য এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং নজরদারি বাড়ানোর প্রয়োজন। বালিহারচণ্ডী মন্দির এবং পার্শ্ববর্তী পর্যটন স্থানগুলিতে নিয়মিত টহল এবং সিসিটিভি নজরদারির গুরুত্ব কর্মকর্তারা স্বীকার করছেন।
মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণ
ওড়িশার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং বিরোধী দলের নেতা নবীন পট্টনায়ক এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি টুইট করে বলেছেন যে, এই ঘটনাটি রাজ্যের রাজধানী থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে ঘটেছে এবং এটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। তিনি বিজেপি শাসিত রাজ্য সরকারকে নিশানা করে বলেন যে, মহিলাদের সুরক্ষার ব্যাপারে এই প্রশাসন সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। পট্টনায়ক জোর দিয়ে বলেন যে, যত তাড়াতাড়ি কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তত তাড়াতাড়ি মহিলাদের মধ্যে নিরাপত্তার অনুভূতি ফিরে আসবে।
বিজঘু জনতা দল (বিজেডি)-এর সিনিয়র নেতা সঞ্জয় দাস বর্মাও রাজ্য সরকারকে কঠোর সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন যে, বালিহারচণ্ডী মন্দির এবং পার্শ্ববর্তী পর্যটন স্থানগুলির যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। তিনি পূর্বের ঘটনার উল্লেখ করে বলেন যে, গঞ্জাম জেলার গোপালপুর সমুদ্র সৈকতে গত ১৫ জুন একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল।
অপরাধীদের গ্রেফতার
পুলিশ জানিয়েছে যে, প্রধান অভিযুক্ত কালিয়াকে রাজ্যের সীমান্ত লাগোয়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং অন্য অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে। তদন্তের সময় সোশ্যাল মিডিয়া এবং ডিজিটাল প্রমাণও সংগ্রহ করা হচ্ছে। পুলিশ স্থানীয়দের কাছে আবেদন করেছে যে, কোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপের তাৎক্ষণিক খবর দিন।
এসপি প্রতীক সিং বলেছেন যে, রাজ্যে মহিলাদের সুরক্ষা এবং অপরাধ প্রতিরোধের জন্য বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন যে, এই ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে বয়স বা সামাজিক অবস্থা কোনোটিই मायने রাখে না। সমস্ত অভিযুক্তকে শীঘ্রই আদালতে পেশ করা হবে।
স্থানীয় প্রতিবাদ এবং সুরক্ষার দাবি
ঘটনার ফলে স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যুবক-যুবতীরা রাস্তায় নেমে সরকারের কাছে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে। সমাজকর্মীরা সতর্ক করেছেন যে, পর্যটন স্থানগুলিতে নজরদারি বাড়ানো অপরিহার্য। তারা বলেন যে, এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধের জন্য শিক্ষা, সচেতনতা এবং পুলিশ-জনগণের সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি।
এই ঘটনা প্রমাণ করেছে যে, মহিলাদের এবং শিশুদের সুরক্ষার জন্য অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য, যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের লজ্জাজনক ঘটনা প্রতিরোধ করা যায়।