পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের মহাপ্রসাদ অনলাইন বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা: সরকারের স্পষ্ট বার্তা

পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের মহাপ্রসাদ অনলাইন বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা: সরকারের স্পষ্ট বার্তা

ওড়িশা সরকার পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের মহাপ্রসাদ অনলাইনে বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আইনমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দন জানিয়েছেন, প্রসাদের পবিত্রতা ও শুদ্ধতা বজায় রাখার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

Puri: ওড়িশা সরকার পুরীর বিখ্যাত জগন্নাথ মন্দিরের মহাপ্রসাদ অনলাইনে বিক্রির প্রস্তাব স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। মন্দির এবং প্রসাদের পবিত্রতা বজায় রাখার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আইনমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দন জানিয়েছেন, যদিও মহাপ্রসাদ অনলাইনে বিক্রির ওপর কোনো আইনি নিষেধাজ্ঞা নেই, তবুও সরকার এই ধরনের উদ্যোগকে সমর্থন করে না এবং ভক্তদের কাছে আবেদন করেছে যে তারা যেন মন্দিরে এসে প্রসাদ গ্রহণ করেন।

মহাপ্রসাদ অনলাইনে বিক্রি নিয়ে বিতর্ক

সম্প্রতি কিছু সংস্থা পুরী জগন্নাথ মন্দির প্রশাসন (এসজেটিএ)-কে মহাপ্রসাদ এবং শুকনো প্রসাদ অনলাইনে বিক্রির অনুমতি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল সারা বিশ্বের ভক্তদের কাছে প্রসাদ পৌঁছে দেওয়া, যাতে যারা মন্দিরে আসতে অক্ষম, তারাও মহাপ্রসাদের সুফল লাভ করতে পারে।

কিন্তু মন্দির প্রশাসন ও ওড়িশা সরকার এই প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। আইনমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দন বলেছেন, এই ধারণাটি ভক্তদের জন্য সুবিধাজনক হলেও, এর ফলে মহাপ্রসাদের পবিত্রতা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তাই এই পরিকল্পনা অনুমোদন করা হয়নি।

পবিত্রতা ও ঐতিহ্য রক্ষা করা জরুরি

আইনমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেছেন যে মহাপ্রসাদের ধর্মীয় তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর। ঐতিহ্যগতভাবে এটি শুধুমাত্র মন্দির চত্বরের ভেতরেই বিতরণ করা হয়। মহাপ্রসাদের পবিত্রতা ও শুদ্ধতা বজায় রাখা সবচেয়ে জরুরি, এবং এটি অনলাইনে বিক্রির মাধ্যমে সরবরাহ করলে এর সম্মান এবং আধ্যাত্মিক মূল্য কমে যেতে পারে।

তিনি বলেন, যদি মহাপ্রসাদ অনলাইনে বিক্রি করা হয়, তবে প্রসাদের শুদ্ধতা ও পবিত্রতা বজায় থাকবে কিনা, তা বিশ্বাস করা কঠিন হবে। তাই সরকার ও মন্দির প্রশাসন একসঙ্গে এই প্রস্তাব বাতিল করেছে।

আইনি নিষেধাজ্ঞা নেই, তবে সরকারের বিরোধিতা

পৃথ্বীরাজ হরিচন্দন স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে বর্তমানে মহাপ্রসাদ অনলাইনে বিক্রির উপর কোনো আইনি নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে সরকার এই ধরনের কোনো উদ্যোগকে সমর্থন করে না এবং প্রচারও করে না। তিনি বলেন, বর্তমানে এমন কোনো পরিকল্পনা নেই এবং সরকার কোনো ব্যক্তি বা সংস্থাকে মহাপ্রসাদ অনলাইনে বিক্রির জন্য উৎসাহিত করছে না।

আইনমন্ত্রী জানান, ভবিষ্যতে যদি অনলাইন বিক্রিকে আইনি স্বীকৃতি দিতে হয়, তবে জগন্নাথ মন্দির আইন, ১৯৫৫-তে সংশোধন করা প্রয়োজন হবে। আপাতত সরকার ও মন্দির প্রশাসন এটিকে উপযুক্ত মনে করে না।

ভক্তদের কাছে বিশেষ আবেদন

আইনমন্ত্রী ভক্তদের কাছে বিশেষভাবে অনুরোধ করেছেন, তাঁরা যেন মহাপ্রসাদ নেওয়ার জন্য স্বয়ং পুরী জগন্নাথ মন্দিরে আসেন এবং মন্দিরে গিয়ে দেবতাদের আশীর্বাদ গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, এমন করলে কেবল ধর্মীয় ভাবনাই পূর্ণ হয় না, বরং মন্দিরের ঐতিহ্য ও শুদ্ধতাও বজায় থাকে।

তিনি ভক্তদের অনুরোধ করেছেন যে, অনুমতি ছাড়া অনলাইনে মহাপ্রসাদ কেনা থেকে বিরত থাকুন, কারণ এতে কেবল পবিত্রতা প্রভাবিত হবে তাই নয়, এটি মন্দির প্রশাসনের নীতির বিরুদ্ধেও যায়।

অনলাইনে বিক্রির অভিযোগ ও স্পষ্টতা

সম্প্রতি কিছু ওয়েবসাইট ও প্ল্যাটফর্মে অনুমতি ছাড়াই জগন্নাথ মন্দিরের মহাপ্রসাদ অনলাইনে বিক্রির খবর পাওয়া গেছে, যা নিয়ে সরকার ও মন্দির প্রশাসন উদ্বিগ্ন। এই প্রেক্ষাপটে আইনমন্ত্রী স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে, এই ধরনের অবৈধ বিক্রির কোনো অনুমতি বা সমর্থন সরকার দ্বারা দেওয়া হয়নি।

তিনি আরও জানান যে, মন্দির প্রশাসন ও রাজ্য সরকার সম্পূর্ণরূপে এই ধরনের কার্যকলাপের ওপর নজর রাখছে এবং নিয়ম লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি সম্মান জরুরি

পুরী জগন্নাথ মন্দিরের মহাপ্রসাদ নিয়ে এই সিদ্ধান্ত মন্দির এবং ভক্তদের ধর্মীয় পবিত্রতা ও অনুভূতির প্রতি সম্মান জানানোর জন্য নেওয়া হয়েছে। মহাপ্রসাদ শুধু একটি খাবার নয়, এটি ভগবান জগন্নাথের আশীর্বাদ হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই এর বিতরণও ঐতিহ্যপূর্ণ এবং সম্মানের সঙ্গে হওয়া উচিত।

মন্দির প্রশাসন সবসময় এই বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছে যে, প্রসাদের পবিত্রতা বজায় রাখার জন্য এর বিতরণ সাবধানে এবং নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে হওয়া উচিত। অনলাইন মাধ্যমে এটি বিতরণ করলে এই পবিত্রতা নষ্ট হতে পারে।

Leave a comment