আগামী ৭-৮ সেপ্টেম্বর রাতে আকাশ সাজবে বিরল মহাজাগতিক ঘটনায়। কলকাতা-সহ গোটা দেশ জুড়ে দেখা যাবে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। এই সময় আকাশে ঝলমল করবে রক্তাভ চাঁদ, যাকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ‘ব্লাড মুন’ বলে থাকেন। প্রায় ৮২ মিনিট ধরে চলবে এই অনন্য দৃশ্য।
কখন ঘটবে গ্রহণ
বিজ্ঞানীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চন্দ্রগ্রহণ শুরু হবে ৭ সেপ্টেম্বর রাত ৮টা ৫৮ মিনিটে এবং শেষ হবে ৮ সেপ্টেম্বর রাত ২টা ২৫ মিনিটে। তবে সবচেয়ে নাটকীয় দৃশ্য—রক্তিম চাঁদ—দেখা যাবে রাত ১১টা থেকে শুরু করে টানা ১২টা ২২ মিনিট পর্যন্ত। এই দেড় ঘণ্টার মধ্যেই চাঁদ লাল আভায় জ্বলে উঠবে।
ভারতের পাশাপাশি সারা বিশ্বে দৃশ্যমান
শুধু কলকাতা বা ভারত নয়, এই গ্রহণ দেখা যাবে এশিয়ার বেশিরভাগ অঞ্চল, অস্ট্রেলিয়া এবং আফ্রিকার দেশগুলো থেকেও। তাই মহাজাগতিক এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক উৎসাহ তুঙ্গে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ লক্ষ মানুষ রাতের আকাশে এই বিরল দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।
কেন লাল হয়ে ওঠে চাঁদ
চাঁদের নিজস্ব আলো নেই, সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয় বলেই আমরা চাঁদকে দেখতে পাই। কিন্তু পৃথিবী যখন সূর্য ও চাঁদের মাঝখানে এসে দাঁড়ায়, তখন সূর্যের আলো সরাসরি আর পৌঁছতে পারে না। সেই আলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল দিয়ে ফিল্টার হয়ে লাল ও কমলা রঙে প্রতিফলিত হয় চাঁদের উপর। এর ফলেই গ্রহণের সময় চাঁদকে রক্তাভ দেখা যায়।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার আড়ালে রোমাঞ্চ
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা একে বিজ্ঞানের চোখে ব্যাখ্যা করলেও, সাধারণ মানুষের কাছে এ যেন অন্য এক রহস্যময় দৃশ্য। আকাশ জুড়ে টকটকে লাল চাঁদ দেখে মানুষ মুগ্ধ হয়। বহু প্রাচীনকাল থেকেই চন্দ্রগ্রহণকে ঘিরে নানা কল্পকাহিনি প্রচলিত আছে, যা এই ঘটনার রোমাঞ্চ আরও বাড়িয়ে দেয়।
গবেষণার বড় সুযোগ
ভারতের জ্যোতির্বিজ্ঞানী সন্দীপকুমার চক্রবর্তী জানিয়েছেন, পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ শুধু চোখের আনন্দ নয়, বিজ্ঞানীদের জন্যও তা গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ সময়ে চাঁদের আলো এতটাই উজ্জ্বল থাকে যে, উল্কাপাত চোখে পড়ে না। কিন্তু গ্রহণের সময় চাঁদ অন্ধকার হয়ে গেলে উল্কার আঘাত দেখা সম্ভব। এতে চাঁদের গঠন ও মহাশূন্যের কার্যকলাপ নিয়ে নতুন গবেষণার দুয়ার খুলে যায়।
গ্রহণের সময় সতর্কতা
বিজ্ঞানীরা বলছেন, চন্দ্রগ্রহণের সময় দূরবীন বা টেলিস্কোপে চোখ রেখে দেখা যেতে পারে আরও স্পষ্ট দৃশ্য। তবে খালি চোখেও এই অভূতপূর্ব সৌন্দর্য উপভোগ করা সম্ভব। গ্রহণ দেখার জন্য বিশেষ কোনও সুরক্ষা চশমার প্রয়োজন নেই, সূর্যগ্রহণের মতো চোখে ক্ষতির আশঙ্কা এখানে নেই। তাই শিশু থেকে প্রবীণ—সকলের জন্যই এই রাত হবে মহাজাগতিক উৎসব।
কলকাতার আকাশে মহোৎসব
রাজধানী শহর কলকাতার আকাশে আবহাওয়া যদি সহায় হয়, তবে হুগলি নদীর তীর থেকে কলেজ স্ট্রিটের ছাদ, কিংবা সল্টলেকের ফ্ল্যাট টপ—সব জায়গা থেকেই দেখা যাবে এই লালাভ চাঁদ। ইতিমধ্যেই জ্যোতির্বিজ্ঞানপ্রেমীদের বিভিন্ন সংগঠন গ্রহণ উপলক্ষে টেলিস্কোপ ক্যাম্পের আয়োজন করছে।
উৎসবের মরশুমে বাড়তি আকর্ষণ
দুর্গাপুজোর আগে এই পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ বাঙালির উৎসবমুখর সময়ে বাড়তি রোমাঞ্চ যোগ করবে। রাতের আকাশে রক্তাভ চাঁদ দেখে যেমন আনন্দ মিলবে, তেমনি পরিবার-পরিজন একসঙ্গে মিলে আড্ডা দিতে দিতে বিরল দৃশ্য উপভোগ করার সুযোগও আসবে।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব
প্রাচীনকালে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণকে অশুভ বলে মনে করা হতো। বিভিন্ন সংস্কৃতিতে এটিকে দেবদেবীর ক্রোধ বা মহাজাগতিক বিপর্যয়ের সংকেত হিসেবে ধরা হতো। কিন্তু আজ বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে, এটি কেবলই একটি প্রাকৃতিক ঘটনা। তবুও প্রাচীন বিশ্বাসের ছায়া আজও জনমানসে রয়ে গেছে।
শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি
আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, ৭-৮ সেপ্টেম্বরের রাত পরিষ্কার থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই মানুষজনের মধ্যে এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। কেউ ছাদের জায়গা ঠিক করে রাখছেন, কেউ আবার ছবি তোলার জন্য ক্যামেরা প্রস্তুত রাখছেন। সোশ্যাল মিডিয়াতেও চন্দ্রগ্রহণ নিয়ে উচ্ছ্বাস বাড়ছে।
রক্তাভ চাঁদের সাক্ষী হবে বাংলা
অবশেষে, আকাশে যখন টানা ১ ঘণ্টা ২২ মিনিট ধরে চাঁদ রক্তিম হয়ে জ্বলবে, তখন তা হয়ে উঠবে এক অবিস্মরণীয় মুহূর্ত। কলকাতা-সহ গোটা বাংলা, ভারত তথা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ সাক্ষী হবেন এই মহাজাগতিক কাব্যের। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থাকলেও, এই দৃশ্যের সৌন্দর্য যে কোনও কল্পকাহিনিকেও হার মানাবে।