রাজস্থানে মহিলা সদনের ১১ জন মেয়ের বিবাহের জন্য ১৯০০ জন যুবকের মধ্যে ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে ১১ জনকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপ মহিলাদের সম্মানজনক জীবন দেওয়া এবং সামাজিক পুনর্বাসনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
জয়পুর: বিয়ের বিষয়ে আপনি অনেক অদ্ভুত গল্প শুনেছেন — কোথাও প্রেম বিবাহ, কোথাও পরিবারের সম্মতিতে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু রাজস্থানে এক ভিন্ন দৃষ্টান্ত দেখা গেছে, যেখানে বর হতে যুবকদের রীতিমতো ইন্টারভিউ দিতে হয়েছিল। মহিলা সদনের ১১ জন মেয়ের জন্য রাজ্য সরকারের এই বিশেষ উদ্যোগে ১৯০০ জনেরও বেশি যুবক আবেদন করেছিলেন, কিন্তু কেবল ১১ জন যুবকই সেই অমূল্য সুযোগটি পেয়েছিলেন — জীবনসঙ্গী হওয়ার।
এটি কোনো রিয়্যালিটি শো ছিল না, বরং রাজস্থান সরকারের সামাজিক ন্যায় ও অধিকারিতা বিভাগের তরফে মহিলা পুনর্বাসনের জন্য করা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা ছিল। জয়পুরে আয়োজিত বিবাহ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মাও উপস্থিত ছিলেন এবং নববিবাহিত দম্পতিদের আশীর্বাদ করেন।
মহিলা সদন: ভেঙে যাওয়া স্বপ্নগুলোকে আবার জোড়ার চেষ্টা
রাজ্য সরকার দ্বারা পরিচালিত মহিলা সদন, সেই সকল মহিলা ও কিশোরীদের আশ্রয়স্থল, যাদের সমাজ, পরিবার অথবা পরিস্থিতি প্রত্যাখ্যান করেছে। এখানে তারা কেবল আশ্রয়ই পায় না, বরং শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং ভবিষ্যৎ গড়ারও সুযোগ পায়।
যখন মহিলা সদনে বসবাসকারী কোনো যুবতী সাবালিকা হয় এবং বিবাহের যোগ্য হয়, তখন সরকার তাদের বিবাহের জন্য উপযুক্ত পাত্রের সন্ধান করে। এই প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও সম্মানজনক হয়, যেখানে যুবতীর পছন্দকে সবার উপরে রাখা হয়।
বর হতে দিতে হয়েছিল ইন্টারভিউ
সামাজিক ন্যায় বিভাগ যখন এই ১১ জন যুবতীর জন্য বর খোঁজা শুরু করে, তখন সারা রাজস্থান থেকে প্রায় ১৯০০ জন যুবক আবেদন করেন। এই প্রক্রিয়ার সবচেয়ে বিশেষত্ব ছিল, আবেদনকারী প্রত্যেক যুবকের ব্যক্তিগত ইন্টারভিউ নেওয়ার পাশাপাশি, তার পরিবার, জীবনশৈলী, ব্যবসা এবং সামাজিক ভাবমূর্তির গভীরতাও যাচাই করা হয়েছিল।
ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া: চাকরি নয়, দায়িত্বের নির্বাচন
নির্বাচন কমিটি সকল আবেদনকারীর বাড়ি গিয়ে তাদের পরিবেশ ও ব্যবহার পর্যালোচনা করে। কেবল ডিগ্রি বা চাকরি নয়, বরং যুবকের স্বভাব, মানসিকতা, মহিলাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি এবং জীবনে স্থিতিশীলতাকে ভিত্তি করে তাদের মূল্যায়ন করা হয়।
এরপরে শর্টলিস্ট করা যুবকদের মহিলা সদনের যুবতীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করানো হয়, যেখানে যুবতীদের নিজেদের সম্মতি ও অসম্মতি স্পষ্টভাবে জানানোর অধিকার ছিল। কোনো যুবতীর উপর বিবাহের জন্য কোনো চাপ দেওয়া হয়নি।
১১ জনের মধ্যে ৬ জন যুবক জয়পুর থেকে, বাকিরা অন্যান্য জেলা থেকে
এই প্রক্রিয়ার পরে যে ১১ জন যুবক নির্বাচিত হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ৬ জন জয়পুরের বাসিন্দা। বাকি পাঁচজন ডিডওয়ানা-কুচামান, ঝুনঝুনু, কোটা এবং বারান জেলার বাসিন্দা। এই যুবকদের বিবাহ মহিলা সদনের ১১ জন মেয়ের সঙ্গে সম্পূর্ণ রীতি-নীতি মেনে সম্পন্ন হয়। এই বিবাহ অনুষ্ঠান কেবল একটি আয়োজন ছিল না, বরং একটি নতুন সূচনা ছিল সেই যুবতীদের জন্য, যারা জীবনে কখনো আশা হারিয়ে ফেলেছিল।
বিবাহ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল
জয়পুরে আয়োজিত এই গণবিবাহ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মা স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন। তিনি নববিবাহিতদের আশীর্বাদ করে বলেন, 'এই উদ্যোগ কেবল বিবাহ নয়, বরং সামাজিক সংহতি এবং মহিলাদের সম্মানজনক জীবন দেওয়ার দিকে একটি বড় পদক্ষেপ। আমরা চাই প্রত্যেক মহিলা সেই অধিকার পাক, যার তিনি যোগ্য।'
এখনও পর্যন্ত ১০০ জনের বেশি বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে
রাজস্থান সরকারের এই উদ্যোগের অধীনে, এখন পর্যন্ত রাজ্যজুড়ে ১০০ জনের বেশি যুবতীর বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে। মহিলা সদনের মাধ্যমে কেবল মহিলাদের আশ্রয়ই মেলে না, বরং তাদের একটি নতুন জীবন শুরু করারও সুযোগ দেওয়া হয়। এই প্রকল্প সামাজিক পুনর্বাসনের একটি উদাহরণ হয়ে উঠেছে, যার প্রশংসা সব স্তরেই হচ্ছে।
সমাজের জন্য একটি শক্তিশালী বার্তা
এই বিবাহ অনুষ্ঠান শুধু কয়েকটি জুটির মিলন ছিল না, বরং একটি বার্তা ছিল — যদি ইচ্ছাশক্তি ও নীতি সঠিক থাকে, তাহলে সরকারও সমাজে দৃঢ় পরিবর্তন আনতে পারে। ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উপযুক্ত বর নির্বাচন করা এটিই দর্শায় যে, বিবাহে কেবল বাইরের জাঁকজমক নয়, বরং গভীরতা, চিন্তা এবং দায়িত্বেরও স্থান থাকা উচিত।