আজকের পরিবর্তিত জীবনযাত্রা মহিলাদের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। দ্রুতগতির দৈনন্দিন জীবন, মানসিক চাপ, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, এবং অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস মহিলাদের শরীর ও মানসিকতার ওপর চাপ ফেলে। এই পরিবর্তনের ফলস্বরূপ কিছু মহিলার গর্ভধারণে সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে বারবার গর্ভপাত বা পুনরাবৃত্ত গর্ভপাতের মতো সমস্যা তাদের স্বাভাবিক জীবনকে ব্যাহত করে। এটি শুধু শারীরিক নয়, মানসিকভাবে মহিলাদের দুর্বল করে দেয়। অনেক মা গর্ভধারণের স্বপ্ন দেখে, কিন্তু এই সমস্যা তাদের সেই স্বপ্ন পূরণের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
পুনরাবৃত্ত গর্ভপাত কী?
চিকিৎসার ভাষায়, পুনরাবৃত্ত গর্ভপাত বলতে বোঝায় পরপর তিন বা তার বেশি গর্ভপাত হওয়া। বারবার গর্ভপাত মহিলার গর্ভধারণের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে এবং প্রাথমিকভাবে এটি শনাক্ত করা কঠিন। তাই এই সমস্যার কারণগুলো খুঁজে বের করা এবং ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা অত্যন্ত জরুরি। সময়মতো চিকিৎসা শুরু করলে পরবর্তী গর্ভাবস্থার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
কারণ নির্ণয় ও বিশেষজ্ঞের দিকনির্দেশ
ডাঃ মীরা পাঠক, একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, ব্যাখ্যা করেন যে, পুনরাবৃত্ত গর্ভপাত সাধারণত গর্ভাবস্থার ২০ সপ্তাহের পূর্বে ঘটে। এটি মহিলার জন্য বড় মানসিক ও শারীরিক চ্যালেঞ্জ। পুনরাবৃত্ত গর্ভপাতের ক্ষেত্রে প্রাথমিক লক্ষণগুলো সাধারণত স্বাভাবিক গর্ভাবস্থার মতোই থাকে। তাই মহিলাদের সচেতন থাকা এবং চিকিৎসকের সঙ্গে নিয়মিত পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে ঝুঁকি
গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে ভ্রূণ ও মাতার শরীরের মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হয়। এই সময়ে গর্ভপাতের ব্যথা সহ্য করা খুবই কষ্টদায়ক। প্রাথমিক পর্যায়ে যে কোনো ক্ষুদ্র অস্বাভাবিকতা মহিলার জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। পুনরাবৃত্ত গর্ভপাতের লক্ষণ শনাক্ত করা কঠিন হলেও, সচেতনতা এবং প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
শারীরিক কারণ
প্রতিটি মহিলার জরায়ু আলাদা, যা সফল গর্ভধারণে বড় ভূমিকা রাখে। জরায়ুর অস্বাভাবিক আকৃতি, দুর্বলতা, ফাইব্রয়েড, পূর্ববর্তী আঘাত বা জন্মগত সমস্যাও গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়। শারীরিক ত্রুটির কারণে ভ্রূণ ঠিকমতো বৃদ্ধি পায় না এবং পুনরাবৃত্ত গর্ভপাত হতে পারে। তাই শারীরিক স্বাস্থ্য নিয়মিত পরীক্ষা করানো অপরিহার্য।
হরমোনজনিত কারণ
হরমোনজনিত সমস্যা বারবার গর্ভপাতের অন্যতম কারণ। শরীরে প্রোজেস্টেরনের অভাব গর্ভপাত বাড়াতে পারে। প্রোল্যাকটিনের মাত্রা বৃদ্ধি, ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা, থাইরয়েডের সমস্যা, এবং অন্যান্য হরমোনজনিত অস্বাভাবিকতা পুনরাবৃত্ত গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই হরমোন পরীক্ষা ও প্রয়োজনে চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রক্ত জমাট বাঁধা ও ইমিউন সমস্যা
জরায়ুতে রক্ত জমাট বাঁধার ফলেও গর্ভপাত ঘটতে পারে। চিকিৎসা পরিভাষায় একে অ্যান্টিফসফোলিপিড সিনড্রোম বলা হয়। এছাড়া দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গর্ভধারণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। রক্তের স্বাভাবিক প্রবাহ ও ইমিউন সিস্টেমের সঠিক কার্যকারিতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
জেনেটিক কারণ
কখনও কখনও বারবার গর্ভপাতের কারণ জেনেটিক্সও হতে পারে। পরিবারে পূর্ববর্তী গর্ভপাতের ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি বাড়ে। যদিও জেনেটিক কারণের সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কম, তবুও পারিবারিক ইতিহাস জানা এবং প্রয়োজনীয় জেনেটিক পরীক্ষা করানো নিরাপদ।