রুদ্রপ্রয়াগ জেলার মহিলারা দিনের বেলা পরিবারের দেখাশোনা করেন এবং রাতে বন্যপ্রাণী থেকে ফসল রক্ষা করেন। চিতাবাঘ, ভালুক এবং শুয়োর থেকে ফসল বাঁচানোর জন্য তাদের সাহস এবং কঠোর পরিশ্রম প্রশংসার যোগ্য।
রুদ্রপ্রয়াগ: উত্তরাখণ্ডের রুদ্রপ্রয়াগ জেলার রামপুর ওয়ার্ডে রাতের দৃশ্য এক অসাধারণ। এখানকার মহিলারা রাতভর তাদের ক্ষেতে শিবির করে থাকেন যাতে তারা বন্যপ্রাণী থেকে তাদের ফসল রক্ষা করতে পারে। চিতাবাঘ, ভালুক, শুয়োর এবং বানরের মতো প্রাণীগুলি ক্রমাগত ফসল নষ্ট করছে। গ্রাম্য মহিলারা বলছেন যে এটি কেবল ফসলের প্রশ্ন নয়, তাদের পরিশ্রম এবং জীবিকা রক্ষার বিষয়ও।
রামপুরের মহিলারা বন্যপ্রাণী থেকে ফসল বাঁচাতে ব্যস্ত
রামপুর ওয়ার্ডের মহিলারা সারাদিন বাড়ি এবং মাঠের কাজে ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু যখন সূর্য অস্ত যায়, তখন তারা রাতভর তাদের ক্ষেতে শিবির করে থাকেন। এর উদ্দেশ্য হলো বন্যপ্রাণীর আকস্মিক আক্রমণ থেকে ফসল বাঁচানো। মহিলারা আগুন জ্বালিয়ে, শব্দ করে এবং সতর্ক থেকে প্রাণীদের মাঠ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেন।
কৃষক মহিলা গীতা কুমারী বলেন, “আমাদের পরিশ্রম করে ফলানো ফসল যদি বন্যপ্রাণীরা নষ্ট করে দেয়, তবে আমাদের সারা বছরের উপার্জন নষ্ট হয়ে যাবে। ভয় লাগে, কিন্তু বাধ্য হয়েই আমাদের রাতভর মাঠে থাকতে হয়।”
প্রাণীদের তাণ্ডব এবং বিপদ
পাহাড়ি অঞ্চলে বন্যপ্রাণীদের তাণ্ডব বেড়েই চলেছে। জঙ্গলে পর্যাপ্ত খাবার না পাওয়ার কারণে এই প্রাণীগুলি লোকালয় এবং মাঠের দিকে চলে আসে। চিতাবাঘ এবং ভালুক মাঠে ঢুকে ফসল নষ্ট করে দেয়, পাশাপাশি গ্রামবাসীদের জীবনের জন্যও বিপদ ডেকে আনে।
স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানান যে গত বছরও অনেকবার ভালুক এবং চিতাবাঘ মাঠে এসেছিল। কিছু ক্ষেত্রে মানুষ আহতও হয়েছিল। জঙ্গল এবং মানব বসতির মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাত গ্রামবাসীদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
ফসল বাঁচাতে সাহস দেখাচ্ছে
রামপুর ওয়ার্ডের মহিলারা শুধু ভয়কেই মোকাবেলা করছেন না, বরং তাদের কৌশলে প্রাণীদের মাঠ থেকে দূরে রাখার চেষ্টাও করছেন। মহিলারা রাতভর চা এবং আগুনের সাহায্যে সতর্ক থাকেন। তারা বন্যপ্রাণীর শব্দ এবং নড়াচড়ার দিকে মনোযোগ দেন এবং সহকর্মীদের সাথে ব্যারিকেড তৈরি করে ফসল রক্ষা করেন।
গ্রাম্য মহিলা কবিতা দেবী বলেন, “রাতে ভয় লাগে, কিন্তু আমরা না থাকলে প্রাণীরা আমাদের পুরো ফসল নষ্ট করে দেবে। আমাদের পরিশ্রম এবং পরিবারের জীবিকার জন্য এটা জরুরি।”
স্থায়ী সমাধানের জন্য বন বিভাগ এবং প্রশাসনের প্রয়োজন
এই সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। বন বিভাগ এবং স্থানীয় প্রশাসনকে একসাথে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বন্যপ্রাণীদের জন্য নিরাপদ বনাঞ্চল উন্নয়ন, মাঠে সুরক্ষার জন্য ব্যবস্থা এবং কৃষকদের সচেতন করা এই দিকে প্রয়োজনীয়।
শুধুমাত্র গ্রামবাসীদের উপর নির্ভর করলে সমস্যা স্থায়ীভাবে সমাধান হবে না। যদি বন বিভাগ এবং প্রশাসন একসাথে কাঠামোগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে, তবে ফসল এবং জীবন উভয়ের সুরক্ষাই নিশ্চিত করা যেতে পারে।