রুপোর দামে পতন: বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খবর

রুপোর দামে পতন: বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খবর

রুপোর অনুরাগী এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক খবর এসেছে। গত দুদিনে রুপোর দামে ব্যাপক পতন দেখা গেছে। ইন্ডিয়ান বুলিয়ন অ্যান্ড জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (আইবিজেএ)-এর সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৬ই জুলাই সকালে রুপোর দাম ২,৮৭১ টাকা প্রতি কিলোগ্রাম কমে ১,১০,৯৯৬ টাকা প্রতি কিলোগ্রামে দাঁড়িয়েছে। দুদিন আগে, অর্থাৎ ১৪ই জুলাই, এর দাম ১,১৩,৮৬৭ টাকা প্রতি কিলোগ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ স্তর ছিল।

২৪ ঘণ্টায় ₹১,০০০ এর বেশি কমল দাম

গত ২৪ ঘণ্টার কথা বললে, রুপোর দামে ১,০০১ টাকার পতন হয়েছে। ১৫ই জুলাই রুপোর দাম ছিল ১,১১,৯৯৭ টাকা প্রতি কিলোগ্রাম, যা ১৬ই জুলাই কমে ১,১০,৯৯৬ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এই পতন এমন এক সময়ে এসেছে যখন গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রুপো লাগাতার ঊর্ধ্বমুখী ছিল এবং বিনিয়োগকারীদের আগ্রহও দ্রুত বাড়ছিল।

আন্তর্জাতিক বাজারে দুর্বলতার কারণে পতন

বিশেষজ্ঞদের মতে, রুপোর দামে এই পতন আন্তর্জাতিক বাজারে দুর্বলতার কারণে হয়েছে। বিশ্ব বাজারে রুপোর দাম ৩৯.৫ ডলার প্রতি আউন্সের রেকর্ড উচ্চতা থেকে কমে ৩৮.১৫ ডলার প্রতি আউন্সে নেমে এসেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে আন্তর্জাতিক স্তরে রুপোর দামে বেশ অস্থিরতা দেখা গেছে। এর প্রভাব অভ্যন্তরীণ দামেও পড়েছে।

তিন দিনে ৬,৯০০ টাকা বেড়েছিল দাম

১০ই জুলাই ভারতে রুপোর দাম ছিল ১,০৬,৯০০ টাকা প্রতি কিলোগ্রাম। এর পরে মাত্র তিন দিনের মধ্যে, অর্থাৎ ১৩ই জুলাই পর্যন্ত রুপোর দাম ১,১৩,৮৬৭ টাকা প্রতি কিলোগ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। এই সময়ে প্রায় ৬,৯৬৭ টাকা প্রতি কিলোগ্রাম বৃদ্ধি দেখা গেছে। কিন্তু এর পরে ১৪ই জুলাই থেকে পতন শুরু হয়, যা এখনও অব্যাহত আছে। এর আগের এই বৃদ্ধি বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসায়ী উভয়কেই অবাক করেছিল।

এ বছর এখনও পর্যন্ত প্রায় ২৫ হাজার টাকা দাম বেড়েছে রুপোর

পুরো বছরের হিসাব দেখা গেলে, রুপোর দামে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি হয়েছে। ১লা জানুয়ারি, ২০২৫ তারিখে রুপোর দাম ছিল ৮৬,০১৭ টাকা প্রতি কিলোগ্রাম। এখন এটি বেড়ে ১,১০,৯৯৬ টাকা হয়েছে। অর্থাৎ, বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত রুপোর দামে ২৪,৯৭৯ টাকা বা ২৯ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি হয়েছে। এই দাম বাড়ার প্রধান কারণগুলির মধ্যে রয়েছে বিশ্ব বাজারে মূল্যবান ধাতুর চাহিদা এবং ডলারের দুর্বলতা।

সিলভার ইটিএফে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে চাহিদা

এইচডিএফসি সিকিউরিটিজের সিনিয়র কমোডিটি অ্যানালিস্ট সৌমিল গান্ধী-র মতে, রুপোর দাম বাড়ার একটি প্রধান কারণ হল, বিনিয়োগকারীরা এখন এটিকে সোনার বিকল্প হিসেবে দেখছেন। গত কয়েক মাসে সিলভার ইটিএফে ভালো বিনিয়োগ হয়েছে, যার ফলে রুপোর চাহিদা বেড়েছে। রুপো এখন কেবল গয়না বা শিল্প-সংক্রান্ত প্রয়োজনের জন্য নয়, বরং একটি শক্তিশালী বিনিয়োগের বিকল্প হিসেবেও উঠে আসছে।

শিল্পের চাহিদাও দামকে প্রভাবিত করে

রুপোর দাম কেবল বিনিয়োগ এবং বিশ্ব বাজার দ্বারাই নির্ধারিত হয় না, বরং এর শিল্পগত চাহিদাও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। সৌর প্যানেল, ইলেকট্রনিক্স এবং ফটোগ্রাফির মতো বিভিন্ন শিল্পে রুপো ব্যবহৃত হয়। গত কয়েক মাসে এই ক্ষেত্রগুলিতে চাহিদা বেড়েছিল, যার প্রভাব দামের উপরও পড়েছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা আসতেই দাম কমে যেতে শুরু করে।

দেশীয় বাজারে বিশ্ব বাজারের প্রভাব

ভারত বিশ্বে সবচেয়ে বেশি রুপো ব্যবহারকারী দেশগুলির মধ্যে একটি। এখানে রুপোর ব্যবহার বিবাহ, পূজা, উপহার দেওয়া এবং বিনিয়োগের মতো বিভিন্ন কাজে হয়। যেহেতু ভারত রুপোর একটি বড় অংশ আমদানি করে, তাই বিশ্ব বাজারে সামান্য পরিবর্তনও সরাসরি দেশের দামে প্রভাব ফেলে। ডলারের উত্থান-পতন, মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার, এবং অর্থনৈতিক সংকট-এর মতো বিষয়গুলি রুপোর দামের গতিবিধি নির্ধারণ করে।

Leave a comment