ইন্ডিগোর ফ্লাইট 6E 6271-এর ইঞ্জিন ত্রুটির কারণে মুম্বাইয়ে জরুরি অবতরণ করতে হয়। পাইলট 'প্যান প্যান প্যান' বলে বিপদের সংকেত দেন।
IndiGo: দিল্লি থেকে গোয়াগামী ইন্ডিগোর ফ্লাইট 6E 6271-এর আকাশে ওড়ার সময় একটি ইঞ্জিনে প্রযুক্তিগত ত্রুটি দেখা দেয়। পাইলট দ্রুততার সঙ্গে বিমানটিকে মুম্বাই বিমানবন্দরের দিকে ঘুরিয়ে দেন এবং 'প্যান প্যান প্যান' ঘোষণা করেন। এরপর রাত ৯:৫৩ মিনিটে বিমানটি নিরাপদে ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
বিমানে ছিলেন ১৯১ জন যাত্রী
ফ্লাইটটিতে মোট ১৯১ জন যাত্রী ছিলেন, যাঁরা দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে গোয়ার মনোহর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দিকে যাচ্ছিলেন। বিমানটি এয়ারবাস A320neo মডেলের ছিল, যা ইন্ডিগোর বহরের আধুনিক এবং বহুল ব্যবহৃত একটি বিমান। ঘটনার সময় যাত্রীদের মধ্যে কিছুটা চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়, তবে পাইলট এবং কেবিন ক্রুদের সতর্কতার কারণে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
'প্যান প্যান প্যান' কী এবং এর অর্থ কী?
প্রযুক্তিগত সমস্যার সময় পাইলট 'প্যান প্যান প্যান' শব্দটি তিনবার উচ্চারণ করেন, যা আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলে ব্যবহৃত একটি সংকেত। এই সংকেতটি দেওয়া হয় যখন বিমানের জরুরি সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তবে পরিস্থিতি জীবনের জন্য তাৎক্ষণিক হুমকি হিসেবে বিবেচিত হয় না।
এটি 'মে ডে'-এর থেকে এক ধাপ নিচের জরুরি বার্তা।
- মে ডে-র ব্যবহার হয় জীবন-হুমকি সৃষ্টিকারী জরুরি পরিস্থিতিতে।
- প্যান প্যান-এর ব্যবহার হয় যখন পরিস্থিতি গুরুতর হতে পারে, কিন্তু তাৎক্ষণিক জীবনহানির সম্ভবনা থাকে না।
ইঞ্জিন নম্বর-১ এ প্রযুক্তিগত ত্রুটি
মুম্বাই বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে সমস্যাটি তখন দেখা দেয় যখন ফ্লাইটটি মুম্বাই থেকে প্রায় ১০০ নটিক্যাল মাইল উত্তরে উড়ছিল। পাইলট ইঞ্জিন নম্বর-১ এ সম্ভাব্য প্রযুক্তিগত ত্রুটি সনাক্ত করার সঙ্গে সঙ্গেই এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে (ATC) 'প্যান প্যান প্যান'-এর সংকেত দেন এবং স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (SOP) অনুযায়ী বিমানটিকে মুম্বাইয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।
সময় মতো নেওয়া সিদ্ধান্ত
ইন্ডিগোর পক্ষ থেকে জারি করা একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'দিল্লি থেকে গোয়াগামী আমাদের ফ্লাইট সংখ্যা 6E 6271-এর ১৬ই জুলাই উড়ানের সময় একটি প্রযুক্তিগত সমস্যা দেখা দেয়। সমস্ত নিয়মাবলী অনুসরণ করে পাইলট বিমানটিকে মুম্বাইয়ের দিকে ঘুরিয়ে দেন এবং বিমানটিকে নিরাপদে অবতরণ করানো হয়। যাত্রী ও ক্রুদের নিরাপত্তা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।'
বিমানবন্দরে আগে থেকেই ছিল অগ্নিনির্বাপক এবং অ্যাম্বুলেন্স
বিমানটি যখন মুম্বাই বিমানবন্দরে অবতরণের অনুমতি চায়, তখন রাত ৯:৩২টা থেকে ফায়ার টেন্ডার এবং অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত ছিল। এসওপি অনুসারে, বিমানটি অবতরণের সঙ্গে সঙ্গেই রানওয়ে থেকে ট্যাক্সিওয়ের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। স্বস্তির বিষয় হল, কোনো যাত্রী আহত হননি এবং কোনো চিকিৎসা জরুরি অবস্থার প্রয়োজন হয়নি।
যাত্রীদের সামান্য অসুবিধা, তবে সবাই নিরাপদে
জরুরি অবতরণের কারণে যাত্রীদের কিছু সময়ের জন্য অসুবিধা হলেও, সবচেয়ে স্বস্তির বিষয় ছিল যে সকল যাত্রী সম্পূর্ণ নিরাপদে ছিলেন। ইন্ডিগো এয়ারলাইনস পরিস্থিতি সামাল দিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং যাত্রীদের সাহায্য করে। কিছু যাত্রীকে অন্য ফ্লাইটে করে গোয়ায় পাঠানো হয়, আবার কেউ কেউ মুম্বাইয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। এয়ারলাইনের কর্মীরা যাত্রীদের সবরকম সহায়তা করেন, যাতে তাঁদের যাত্রা আরও নিরাপদ এবং সহজ হয়।
ডিজিসিএ-র প্রাথমিক তদন্ত শুরু
ঘটনার পরপরই বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থা (DGCA) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। ডিজিসিএ বোঝার চেষ্টা করছে যে বিমানের ইঞ্জিনে ত্রুটি কীভাবে দেখা দিল—এটি কি কোনো প্রযুক্তিগত সমস্যা ছিল, উৎপাদনগত ত্রুটি ছিল, নাকি রক্ষণাবেক্ষণের সময় কোনো গাফিলতি ছিল। এর জন্য ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সের কাছ থেকে সম্পূর্ণ রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনাগুলো এড়ানো যায় এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।