এবছর, ২০২৫ সালের ১১ই জুলাই থেকে পবিত্র শ্রাবণ মাস শুরু হচ্ছে। এই মাসটি ভগবান শিবের আরাধনার জন্য বিশেষ সময় হিসেবে বিবেচিত হয়। ভক্তরা সারা মাস ধরে শিবলিঙ্গের উপর জল, দুধ, বেলপাতা এবং ফুল অর্পণ করেন, যাতে মহাদেবের কৃপায় তাঁদের জীবনে সুখ ও শান্তি বজায় থাকে। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, শ্রাবণ মাসে কিছু বিশেষ ফুল ভক্তি সহকারে শিবকে অর্পণ করলে জীবনের বাধা দূর হয়।
শাস্ত্রে ফুলের বিশেষ ভূমিকা
পুরাণ ও ধর্মগ্রন্থ অনুসারে, শিবকে নিবেদিত কিছু বিশেষ ফুল রয়েছে যা দ্বারা ভোলেবাবা দ্রুত প্রসন্ন হন। এই ফুলগুলি কেবল পূজার শোভা বৃদ্ধি করে না, বরং তাদের মধ্যে আধ্যাত্মিক শক্তিও বিদ্যমান। শ্রাবণের এই বিশেষ সময়ে শিবলিঙ্গের উপর এই ফুলগুলি অর্পণ করা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়।
ধুতুরার ফুল - শিবের বিষহর রূপের প্রতীক
ধুতুরা একটি বিষাক্ত উদ্ভিদ হিসাবে পরিচিত, তবে এই ফুলটি ভগবান শিবের অত্যন্ত প্রিয়। এটি তাঁর ‘বিষহর’ রূপের সাথে যুক্ত। শাস্ত্রে উল্লেখ আছে যে সমুদ্র মন্থনের সময় যখন হলাহল বিষ নির্গত হয়েছিল, তখন শিবজি তা নিজের কণ্ঠে ধারণ করেছিলেন। সেই থেকেই ধুতুরা তাঁর পূজায় বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। সাদা ধুতুরার ফুল শ্রাবণে শিবলিঙ্গে অর্পণ করলে নেতিবাচক শক্তি দূর হয়।
বেলপাতা - তিন গুণের প্রতীক
বেলপাতা ছাড়া ভগবান শিবের পূজা অসম্পূর্ণ বলে মনে করা হয়। শ্রাবণে শিবলিঙ্গের উপর ত্রিদল বেলপাতা অর্পণ করা বিশেষ ফলদায়ক। এর তিনটি পাতা সত্ত্ব, রজ ও তম গুণের প্রতীক। এটি অর্পণ করলে পাপের নাশ হয় এবং পুণ্য লাভ হয়। খেয়াল রাখতে হবে যে বেলপাতা যেন ছেঁড়া বা পোকাযুক্ত না হয়।
আকন্দ, অকেন্ড ও মাদার ফুল - রোগ থেকে মুক্তিদাতা
শিবের পূজায় আকন্দ, অকেন্ড বা মাদার ফুলের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই ফুলগুলি শিবলিঙ্গে অর্পণ করলে রোগ, ক্লেশ এবং মানসিক অশান্তি দূর হয়। এই গাছগুলি হিমালয়ের শান্তি ও তপস্বী শক্তির প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হয়। শ্রাবণে এই ফুলগুলির পূজার মাধ্যমে ঘরে ভারসাম্য ও সমৃদ্ধি বজায় থাকে।
জবা ফুলের লাল ফুল - শক্তি ও ইতিবাচকতার ইঙ্গিত
জবা ফুল সাধারণত মা দুর্গার উদ্দেশ্যে নিবেদন করা হয়, তবে লাল রঙের জবা শিবের কাছেও অত্যন্ত প্রিয়। এই ফুল অর্পণ করলে ব্যক্তির জীবনে উৎসাহ ও ইতিবাচক শক্তি আসে। এছাড়াও এটি সমৃদ্ধি এবং আত্মবিশ্বাসও বৃদ্ধি করে। শ্রাবণে এটি শিবলিঙ্গে অর্পণ করলে বিশেষ আধ্যাত্মিক ফল পাওয়া যায়।
মোগরা ও জুঁই - সৌন্দর্য ও শান্তির প্রতীক
মোগরা ও জুঁই ফুল তাদের সুগন্ধের জন্য পরিচিত এবং ভগবান শিব এই দুটি ফুল খুব পছন্দ করেন। মোগরার মৃদু সুবাস মানসিক শান্তি দেয় এবং জুঁই আধ্যাত্মিক উন্নতির প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হয়। শ্রাবণে এই ফুল দিয়ে শিবলিঙ্গের পূজা করলে মনের একাগ্রতা বাড়ে এবং মানসিক ভারসাম্য বজায় থাকে।
নীল পদ্ম - দুর্লভ কিন্তু প্রভাবশালী ফুল
নীল পদ্ম ফুল শিবের পাশাপাশি ভগবান বিষ্ণুরও প্রিয়। এই ফুল শান্তির শক্তি এবং গভীর ধ্যানের প্রতীক। শ্রাবণ মাসে এটি অর্পণ করলে শান্তি, সৌভাগ্য এবং সুখ-সমৃদ্ধি লাভ হয়। যদিও নীল পদ্ম ফুল পাওয়া সহজ নয়, তবে শ্রাবণে এর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
শেওন্তীর ফুল - ভক্তি ও শ্রদ্ধার প্রতীক
শেওন্তীকে সাধারণত চন্দ্রমল্লিকাও বলা হয়। এই ফুল সৌন্দর্য, শ্রদ্ধা ও পবিত্রতার প্রতীক। এটি শিবলিঙ্গে অর্পণ করলে জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে এবং ঘরে সুখ-শান্তি বজায় থাকে। এই ফুল বিশেষ করে মহিলাদের দ্বারা শিব পূজায় ব্যবহৃত হয়।
এই ফুলগুলি অর্পণের নিয়ম
শ্রাবণে শিবলিঙ্গে ফুল অর্পণ করার সময় কিছু নিয়ম পালন করা জরুরি। ফুল তাজা হওয়া উচিত এবং পূজার আগে জল দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। বেলপাতার পাতা উল্টে রাখা উচিত নয় এবং ফুল কখনোই সাপের মাথার উপর দেওয়া উচিত নয়।