ভৌম প্রদোষ ব্রত: জেনে নিন পূজা পদ্ধতি, উপকারিতা ও গুরুত্ব

ভৌম প্রদোষ ব্রত: জেনে নিন পূজা পদ্ধতি, উপকারিতা ও গুরুত্ব

হিন্দু ধর্মে ব্রত ও উৎসবের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, কারণ এগুলি আত্মাকে শুদ্ধির দিকে নিয়ে যায় এবং ঈশ্বরের সঙ্গে মিলিত হওয়ার মাধ্যম হয়। এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্রত হল প্রদোষ ব্রত, যা প্রতি মাসের ত্রয়োদশী তিথিতে আসে। বিশেষ করে যখন এটি মঙ্গলবার আসে, তখন একেভৌম প্রদোষ ব্রত বলা হয়। এই দিনটি ভগবান শিবকে উৎসর্গীকৃত এবং শ্রদ্ধার সঙ্গে করা পূজা ব্যক্তির জীবনে ইতিবাচকতা, স্বাস্থ্য এবং সমৃদ্ধি নিয়ে আসে।

ভৌম প্রদোষ ব্রত: একটি আধ্যাত্মিক সুযোগ

প্রদোষ ব্রত শিবের ভক্তির জন্য অত্যন্ত প্রিয় একটি দিন। ত্রয়োদশী তিথি এবং প্রদোষ কাল শিবের খুব প্রিয়। যখন এই দুটি যোগ মঙ্গলবার আসে, তখন এর প্রভাব আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এই দিনে শিব ভক্তরা তাদের জীবনে সমৃদ্ধি, স্বাস্থ্য এবং শান্তি পাওয়ার একটি দুর্লভ সুযোগ পান।

৮ জুলাই ২০২৫ তারিখে আগত এই ভৌম প্রদোষ ব্রত, আষাঢ় মাসের শেষ প্রদোষ এবং ১১ জুলাই শুরু হতে যাওয়া শ্রাবণ মাসের প্রাক্কালে অনুষ্ঠিত হবে। এই ব্রত থেকে ব্যক্তি শিব ভক্তির যাত্রা শুরু করতে পারেন।

প্রদোষ ব্রতের পৌরাণিক मान्यता

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, সমুদ্র মন্থনের সময় কালকূট বিষ বের হলে সমস্ত দেবতারা ভয় পেয়ে যান। তখন ভগবান শিব সৃষ্টিরক্ষার জন্য সেই বিষ নিজের কণ্ঠে ধারণ করেন, যার কারণে তাঁর নাম হয় নীলকণ্ঠ। এই ঘটনাটি প্রদোষকালে ঘটেছিল, তাই এই সময়টি ভগবান শিবের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। এই ব্রত পালন করলে ভগবান শিব প্রসন্ন হয়ে তাঁর ভক্তদের অসীম কৃপা করেন এবং তাঁদের জীবন থেকে রোগ, শোক, দুর্ভাগ্য ও দারিদ্র্য দূর করেন।

ভৌম প্রদোষ ব্রতের পূজা বিধি

১. প্রাতঃকালের প্রস্তুতি

  • সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে উঠুন।
  • স্নান করার পর পরিষ্কার কাপড় পরুন।
  • পূজা স্থানকে গঙ্গাজল দিয়ে শুদ্ধ করুন।

২. ব্রতের সংকল্প নিন

'ওঁ নমঃ শিবায়' মন্ত্র উচ্চারণ করে মনে মনে সংকল্প করুন যে আপনি সারাদিন উপবাস করবেন এবং শিবের আরাধনা করবেন।

৩. প্রদোষ কালে পূজা

  • এই সময় সূর্যাস্তের প্রায় ৪৫ মিনিট আগে শুরু হয় এবং ১.৫ ঘণ্টা পর্যন্ত চলে।
  • শিবলিঙ্গকে গঙ্গাজল, দুধ, দই, ঘি, মধু এবং চিনি দিয়ে স্নান করান (পঞ্চামৃত)।
  • বেল পাতা, সাদা ফুল, ধুতরা, ভাঙ এবং চন্দন অর্পণ করুন।
  • শিবকে ত্রিপুণ্ড তিলক লাগান এবং প্রদীপ জ্বালান।
  • শিব চালিসা, মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র এবং প্রদোষ ব্রত কথা পাঠ করুন।

৪. হনুমানজির পূজা

  • মঙ্গলবার হনুমানজির পূজা করাও অত্যন্ত ফলদায়ী।
  • সিঁদুর, জুঁই তেল এবং গুড়-ছোলা অর্পণ করুন।
  • 'ওঁ হং হনুমতে নমঃ' মন্ত্রটি ১০৮ বার জপ করুন।

ভৌম প্রদোষ ব্রতের উপকারিতা

  • এই ব্রত রক্ত ​​বিকার, ত্বকের রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং অন্যান্য মঙ্গল দোষ থেকে মুক্তি দেয়।
  • মানসিক শান্তি, পারিবারিক সুখ এবং আর্থিক সমৃদ্ধি প্রদান করে।
  • বিবাহে আসা বাধা দূর করে।
  • কুণ্ডলীতে মঙ্গলের অশুভ অবস্থানকে শান্ত করে।
  • এই ব্রত আত্মাকে পবিত্র করে মোক্ষের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

ব্রতকারীদের জন্য বিশেষ মন্ত্র

  • 'ওঁ নমঃ শিবায়' – এই পঞ্চাক্ষরী মন্ত্রটি ১০৮ বার জপ করুন।
  • 'ওঁ হং হনুমতে নমঃ' – হনুমানজির কৃপা লাভের জন্য এই মন্ত্র জপ করুন।
  • 'ওঁ ত্র্যম্বকং যজামহে' – মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রটি ১১, ২১ বা ১০৮ বার জপ করা বিশেষ ফলদায়ী বলে মনে করা হয়।

সাবধানতা এবং নিয়ম

  • ব্রতের দিনে কাউকে খারাপ কথা বলবেন না।
  • কথা ও আচরণে সংযম রাখুন।
  • রাতে ব্রহ্মচর্য পালন করুন।
  • প্রদোষকালে একাগ্রভাবে শিবের ধ্যান করুন।

আষাঢ় মাসের শেষ ভৌম প্রদোষ ব্রত শিব ভক্তির একটি বিশেষ সুযোগ। এই দিনে শ্রদ্ধা ও নিয়ম সহকারে পূজা করলে সমস্ত গ্রহ দোষ শান্ত হয়, জীবনে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। শিবের কৃপায় সকল কষ্ট থেকে মুক্তি সম্ভব।

Leave a comment